এইমাত্র পাওয়া

পারলো না টাইগাররা

ক্রীড়া প্রতিবেদক :

বাংলাদেশের স্বপ্ন ছিলো বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলা। তবে ভারতের কাছে হেরে শেষ হয়ে যায় সে সম্ভাবনা। পরবর্তীতে আশা ছিলো পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শেষ করা। তবে টাইগাররা পারলো না বিশ্বকাপের শেষটা মনের মতো করতে।

ঐতিহাসিক লর্ডসে পাকিস্তানের কাছে ৯৪ রানে হেরে বিশ্বকাপ শেষ করলো মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ৯ উইকেট হারিয়ে ৩১৫ রান সংগ্রহ করে পাকিস্তান।

৩১৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই ধীরগতিতে ব্যাট চালিয়েছে তামিম। এতে চাপে থেকেছে ক্রিজে থাকা অন্য ব্যাটসম্যানের। দারুণ শুরু করার পরেও দলীয় ২৬ রানে আমিরের বলে উইকেট বিলিয়ে দিয়েছে সৌম্য সরকার। ২২ বলে তার রান ২২।

এবারের বিশ্বকাপে হাসেনি তামিমের ব্যাট। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ ছাড়া বলার মত স্কোর আসেনি তামিমের ব্যাট থেকে। বিশ্বকাপের ৯ ম্যাচে তামিমের রান ২৪৩। যা তামিমের মত আগ্রাসী ওপেনারের সাথে মানানসই না। তামিমের থেকে সৌম্যের রান অনেক কম। তারপরেও তামিমের ব্যাটিং নিয়ে চলছে সমালোচনার ঝড়। প্রতি ম্যাচেই তামিমের ধীরলয়ের ব্যাটিংয়ে ভুগেছে দল। আজও নিজেদের শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২১ বলে তুলেছেন মাত্র ৮ রান।

বোল্ড হয়ে গেলেন মুশফিকুর রহিমও। তামিম ইকবালের পর এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানও একইভাবে আউট হয়ে ফিরেছেন প্যাভিলিয়নে। দলীয় ৭৮ রানে ওয়াহাব রিয়াজের বলে ব্যক্তিগত ১৬ রানেই ফিরলেন মুশফিক।

চতুর্থ উইকেটে দারুণ ব্যাটিং করে যাচ্ছিলেন সাকিব আল হাসান আর লিটন দাস। তাদের ৫৮ রানের জুটিটি শেষ পর্যন্ত ভেঙে দেন শাহীন আফ্রিদি। ৪০ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ৩২ রান করা লিটনকে স্লোয়ার ডেলিভারিতে আউট করেন পাকিস্তানি এই পেসার। পরের সর্বনাশটাও করেন তিনি। সাকিব আল হাসান যখন আরও একটি ফিফটি তুলে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন বড় ইনিংসের পথে। তখন সাকিবকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানিয়ে থামিয়ে দেন শাহীন। ৭৭ বলে ৬ বাউন্ডারিতে ৬৪ রানের ইনিংস সাকিবের।

সাকিবের পর মাহমুদউল্লাহর সঙ্গী হোন মোসাদ্দেক হোসেন। সময়ের দাবি ছিল শট খেলার। সেই দাবি মেটাতে গিয়ে ফিরে যান মোসাদ্দেক হোসেন। ২১ বলে ১৬ রান করে ফেরেন তিনি। শাহদাব খানের বলে বাবর আজমে হাতে ক্যাচ তুলে দেন মোসাদ্দেক। বাংলাদেশ হারায় ষষ্ঠ উইকেট।

আগের ম্যাচে লড়াকু ব্যাটিংয়ে ফিফটি করা মোহাম্মদ সাইফ এবার শাহীনের বলে শুন্য রানে ফেরেন। দারুণ এক ইয়র্কারে মাহমুদউল্লাহকে বোল্ড করে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো পাঁচ উইকেট নিলেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। ৪১ বলে ২৯ রান করেন তিনি।

১৪ বলে ১৫ রান করে ফেরেন অধিনায়ক মাশরাফি। ৩ বলে এক রান করে ফেরেন মোস্তাফিজুর রহমান।

এর আগে টস জিতে ব্যাটিং করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তানের সংগ্রহ দাঁড়িয়েছে ৩১৫ রান। সেঞ্চুরি করেছেন ওপেনার ইমাম উল হক। মোস্তাফিজ টানা পাঁচটি উইকেট নেন। সাইফউদ্দিন তিনটি উইকেট তুলে নেন।

ইনিংসের শুরু থেকেই আঁটসাঁট বোলিং দিয়ে আক্রমণে বাংলাদেশ। এক পাশে মিরাজ আরেক পাশে সাইফউদ্দিনে হিমশিম খাচ্ছিল পাকিস্তানের ওপেনাররা। দলীয় ২৩ রানে সাইফউদ্দিনের বোলিংয়ে মিরাজের ক্যাচ হয়ে ফিরেছেন ফখর জামান। ৩১ বলে ১৩ রান তার।

বাবর আজমের ক্যাচ ফেলেছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন। পরের ওভারে বল হাতে দায়মোচনের একটা সুযোগ পেয়েছিলেন মোসাদ্দেক। তবে এবার ক্যাচ নিতে পারেননি মুশফিকুর রহিম। অফ স্পিনারের বলে বাবরের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে আসা বল লাগে উইকেটকিপারের হাঁটুতে। তখন ৬৫ রানে ছিলেন বাবর। এরপর ১৫৭ রানের জুটি গড়েন ইমাম উল হক এবং বাবর আজম।

অবশেষে সেই ডেঞ্জারম্যান বাবরকে ফেরালেন সাইফউদ্দিন। এটি সাইফউদ্দিনের দ্বিতীয় শিকার। দলীয় ১৮০ রানে সাইফের বলে এলবির ফাঁদে পড়েন তিনি। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি। সাজঘরে ফেরার আগে বাবর ৯৮ বলে ১১টি চারের সাহায্যে করেন ৯৬ রান। পাকিস্তানের হয়ে এক আসরে সর্বোচ্চ রান বাবর আজমের। জাভেদ মিয়াদাদ ১৯৯২ বিশ্বকাপে করেছিলেন ৪৩৭ রান, বাবর এই আসরে করলেন ৪৭৪ রান।

দারুণ ব্যাটিংয়ে বিশ্বকাপে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি করেছেন ইমাম উল হক। নাম লিখিয়েছেন লর্ডসের অনার্স বোর্ডে। ৯৯ বলে তিন অঙ্ক স্পর্শ করতে ৭টি চার হাঁকান বাঁহাতি ওপেনার। দলীয় ২৪৬ রানের মাথায় বিদায় নেন ইমাম। মোস্তাফিজের বলে ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে স্টাম্পে পা লাগিয়ে নিজের উইকেট ভেঙে দেন ইমাম। পরের ওভারে মিরাজ ফিরিয়ে দেন মোহাম্মদ হাফিজকে। ২৫ বলে তিনটি বাউন্ডারিতে ২৭ রান করে হাফিজ ধরা পড়েন সাকিবের হাতে। স্কোরবোর্ডে ৭ রান যোগ হতেই কাটার মাস্টারের বলে সৌম্যের তালুবন্দী হয়ে ফেরেন হ্যারিস সোহেল(৬)।

ইনিংসের ৪৬ তম ওভারের পঞ্চম বলে সাইফউদ্দিনের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন ওয়াহাব রিয়াজ (২)। ম্যাচে এটি সাইফউদ্দিনের তৃতীয় উইকেট। এরপর নিজের বলেই ক্যাচ নিয়ে মোস্তাফিজ বিদায় করেন ১ রান করা শাদাব খানকে। ২৬ বলে ৪৩ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে ইনিংসের শেষ ওভারে বিদায় নেন ইমাদ ওয়াসিম। মোস্তাফিজ তার চতুর্থ উইকেট তুলে নেন। চতুর্থ বলে ইমাদকে বিদায়ের পরের বলেই ফিজ ফিরিয়ে দেন ৮ রান করা মোহাম্মদ আমিরকে। হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগলেও শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আসা সরফরাজকে ফেরাতে পারেননি ফিজ।

মিরাজ ১০ ওভারে ৩০ রানে নেন একটি উইকেট। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ৯ ওভারে ৭৭ রান দিয়ে নেন তিনটি উইকেট। মাশরাফি ৭ ওভারে ৪৬, সাকিব ১০ ওভারে ৫৭ আর মোসাদ্দেক ৪ ওভারে ২৭ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি। মোস্তাফিজ ১০ ওভারে ৭৫ রান দিয়ে পান পাঁচটি উইকেট।

ভারতের বিপক্ষে হেরে সেমিফাইনালে যাওয়ার স্বপ্ন আগেই ভেঙে গেছে বাংলাদেশের। নিজেদের শেষ ম্যাচে জয় নিয়ে ফেরার আশায় চির প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলবে টাইগাররা। এই ম্যাচ জিতলে ৯ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার পঞ্চম স্থানে ওঠে আসবে মাশরাফির দল।

বাংলাদেশ একাদশ:

তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, সাকিব আল হাসান, লিটন দাশ, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, সাইফউদ্দিন আহমেদ, মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), মেহেদী হাসান মিরাজ, ও মোস্তাফিজুর রহমান।

পাকিস্তান একাদশ:

ইমাম-উল-হক, ফখর জামান, বাবর আজম, মোহাম্মদ হাফিজ, হারিস সোহেল, সরফরাজ আহমেদ (অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক), ইমাদ ওয়াসিম, ওহাব রিয়াজ, শাদাব খান, মোহাম্মদ আমির ও শাহিন আফ্রিদি।


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.