অধ্যাপক ফরিদ আহমেদঃ সম্প্রতি ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমেছে।এভাবে প্রায় তারা রাস্তায় নামছে কেন প্রশ্ন উঠেছে। এবং সমস্যা সমাধানে ৭ কলেজকে আবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যাবার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাকে অনেকেই মন থেকে গ্রহণ করতে পারেনি। আর সেজন্য আজও অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বাকি কলেজ গুলোর দায় নেয়ার কথা থাকলেও নিচ্ছে না। এভাবে সরকারের একটি সিদ্ধান্তকে ব্যর্থ করে দেয়ার ষড়যন্ত্রে অনেকেই আছে হয়তো। আমি মনে করি সেই ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে শিক্ষার বিশেষ করে উচ্চ শিক্ষার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে প্রাচীন সরকারি কলেজ গুলো।
আমাদের শিক্ষার বাজেট এখানে সংকট হয়ে দেখা দিয়েছে। আসলে আমাদের ব্যবসায়ীরা এখানে দায়ী। তারা সকলে এ পর্যন্ত প্রায় ১১০টি বিশ্ববিদ্যালয় খুলে বসেছেন বাণিজ্য ও মুনাফার লোভে। আগে আমাদের সমাজে যারা ধনী ছিলেন তারা জ্ঞান ও শিক্ষার বিকাশে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতেন। আজ সেই মনের মানুষ নেই। সুতরাং , লোভী ব্যবসায়ীরা খুলেছেন স্কুল , কলেজ , বিশ্ববিদ্যালয়। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা থেকে নানা রকম বিলাসিতার আয়োজন করেন ও সেগুলো ভোগ করেন।
আমাদের ব্যবসায়ীদের যদি সামান্য দেশ প্রেম থাকতো তবে তারা টাকা কামাই করে বিদেশ পাচার করতো না। তাদের পাচার করবার প্রবণতা সমাজের অন্য শ্রেণীর মানুষদেরকে প্রভাবিত করছে। এর সঙ্গে আছে অনিচ্য়তা। প্রতিদিন কেউ না কেউ বিদেশ পাড়ি দিচ্ছে। তাতে করে অর্থ ও মেধা পাচার হচ্ছে। এভাবে যদি দেশটা ফাঁকা হয়ে যায় তবে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত আমাদের স্বাধীন দেশটি কি থাকবে?
৭ কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে সরকার ভালো কাজটি করলেও সেখানে প্রয়োজনীয় বাজেট দিচ্ছে না। ফলে ওই রুগ্ন শিশু রুগ্ন থেকে যাচ্ছে। আর সেই সুযোগে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিপুল বাণিজ্য করছে। তাদের সীমাহীন লোভ আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরকে এমন ভাবে আকৃষ্ট করেছে যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মুখ থুবড়ে পড়েছে।
আমাদের উপাচার্যরা তাদের নিয়ন্ত্রণে একেবারেই অসহায়। আর যারা দায়িত্বশীল তারা ওই সব উপাচার্যদের রোষানলের শিকার হচ্ছেন। ফলে উচ্চশিক্ষা মারাত্মক হুমকিতে আছে।
আমার অভিমত হলো আমাদের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। আমার একটু থামি। আমরা যেন একটু বেশি মনযোগ দেই শিক্ষায়। তাতে করে আমাদের উন্নয়ন হবে টেকসই। শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড কেবল শুন্যসার একটি বাক্য নয় – এটি মহা সত্য। আমরা যারা শিক্ষা গ্রহণ করেছি তারা কেউ কি জীবনে উন্নতি করি নি ? যদি শিক্ষার কোনো মূল্য না থাকতো তবে অনেক আগেই মানুষ শিক্ষাকে বর্জন করতো। আমাদের শিক্ষকদের উচিত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে না গিয়ে সরকারি কলেজ গুলোতে সেবা দিতে মনস্থির করা। আর সরকার যেন কলেজ গুলোকে বাজেট দেয়। তাহলে উচ্চশিক্ষার মান অনেক উপরে আসবে।
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের আগ্রাসী বাণিজ্যকরণকে যদি আমরা লাগাম টেনে না ধরি তবে আমাদের সর্বনাশ হয়ে যাবে। সাময়িকভাবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফল দেখে আনন্দিত হলে চলবে না। আমাদের মানসিকতা যদি লাভের জীবন হয় তবে লোভের নেশায় একদিন আমার কিন্তু পশুর মতো আচরণ করতে পারি। আমি অমূলক ভয় দেখাচ্ছি না।
৭ কলেজের মতো সকল সরকারি কলেজ যাতে মানসম্মত শিক্ষা দিতে পারে সেজন্য পরিকল্পনা ও বাজেট প্রয়োজন।আমরা যেন মাথা ব্যথার জন্য মাথা কেটে না ফেলি। ৭ কলেজ নিয়ে যে ষড়যন্ত্র চলছে তা যেন আর না হয় সেদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শুভদৃষ্টি কামনা করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কলেজ গুলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন তা সঠিক। যারা আবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে যেতে চাইছেন আমি মনে করি সেটা হবে ভুল সিদ্ধান্ত।বঙ্গবন্ধুর সোনারবাংলা এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে শিক্ষার বর্ধিত বাজেট ও পরিকল্পনা সময়ের দাবি।
লেখক: অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/৩০/০৮/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.