মো: দ্বীন ইসলাম হাওলাদার ।।
আমাদের ঘুনেধরা শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে অনেক লেখাই লিখেছি। আরো কতো গুনীজন কতো গুরুত্বপূর্ন আর্টিকেল লেখেছেন আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে। সম্মানিত পাঠকের কাছে সমাদৃত হলেও আমাদের কারিকুলাম বিশেষজ্ঞরা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্তা ব্যক্তিদের তাতে কিছু যায় আসে না। আমাদের কারিকুলাম বিশেষজ্ঞরা শিক্ষার্থীদের বয়স ও শ্রেনী ভেদে বইয়ের সংখ্যা ও ভলিয়ম নির্ধারনে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। তেমনি শ্রেনি কার্যক্রমের সময় নির্ধারনেও চরম অজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছেন। তাছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে শিক্ষা কার্যক্রমের চেয়ে অনুষ্ঠান পালনে অনেক বেশি বাধ্য করা হচ্ছে। জাতীয়, আন্তর্জাতিক বা স্থানীয় বিভিন্ন দিবস, চেয়ারম্যান/ মেম্বরদের সংবর্ধনা, কোন পদস্থ কর্মকর্তা বা এম.পি/ মন্ত্রীর আগমনে শিক্ষক শিক্ষার্থীদেরকে রোধ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে বাধ্য করা হয়, রাস্তার দু’ধারে দাড়াতে বা র্যালি ও সমাবেশে হাজির হতে। কখনোবা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে কখনো বা প্রভাবশালী স্থানীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে শ্রেণী কার্যক্রম বন্ধ করে ব্যালি-সমাবেশ চলতে থাকে।
সরকারের সামগ্রিক উন্নয়নের ফলে গ্রাম্য মানুষের সচ্ছলতা আসলে এনজিও গুলোও এখন আখড়া পেতেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে। এনজিও গুলোর কারণে ও এতো বেশি অনুষ্ঠানের কারণে চরম ভাবে শিক্ষা ব্যবস্থার অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। পাশা-পাশি আমাদের অর্থনীতির উপরও বিরুপ প্রভাব পড়ছে অতিরিক্ত অনুষ্ঠানের ফলে। এমনকি সরকারি (গেজেটেড) ছুটির দিন গুলোতেও শিক্ষক শিক্ষার্থীদেরকে নানা অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে র্যালি ও সমাবেশে হাজির থাকতে হয়। ফলে, শিক্ষার্থীদের ছুটির দিনগুলোতেও মা-বাবার কাছে থাকার সুযোগ পায় না বা মায়ের মুখে একটু গল্প শুনতে পায় না।
আর যে সকল শিক্ষার্থীদের পিতা-মাতা উভয়ই শিক্ষক তাদের অবস্থা আরো শোচনীয়। স্থানীয় নেতাদের দৌরাত্বে ও সরকারের নির্দেশে সরকারি ছুটির দিনেও বিভিন্ন র্যালি ও সমাবেশে হাজির হতে বাধ্য শিক্ষক শিক্ষার্র্থীরা। ছেলে-মেয়েরা তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে আর পিতা-মাতা তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে র্যালি ও সমাবেশে হাজির হয়। ফলে অধিকাংশ সরকারি ছুটির দিনেও শিক্ষার্থীরা পিতা-মাতার সান্বিধ্য বঞ্চিত হয়। শিক্ষার্থীরা না পারে তাদের আবেগের কথা মা-বাবার কাছে তুলে ধরতে; না পারে তাদের পছন্দের খাবারের বায়না ধরতে। মা প্রতিদিন প্রতিষ্ঠান থেকে এসে শারীরিক দূর্বলতার কারণে ছেলে মেয়েদের বায়না পূরন করতে পারেন না বরং অজুহাত তোলেন ছুটির দিনে বায়না পূরনের। অথচ সেই সরকারি ছুটির দিনেও স্থানীয় নেতা আর সরকার শিক্ষার্থীদের পিতা-মাতার সান্বিধ্য থেকে দূরে রাখছে। তারা পিতা-মাতার ¯েœহ বঞ্চিত হচ্ছে। অথচ এগুলো পালন করার কথা বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনেগুলোর। সেখানে বাধ্য করা হয় শিক্ষক শিক্ষার্থীদেরকে,যা শিক্ষায় যেমন অপূরনীয় ক্ষতি করে তেমনি অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে বিশাল বাধার সৃষ্টি করে।
প্রভাষক
দুমকি ইসলামিয়া ফাযিল মাদরাসা
দুমকি, পটুয়াখালী।
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.