নিউজ ডেস্ক : বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ছাত্রলীগের ১০-১২ জন নেতাকর্মীর জড়িত। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি যে মারধর করেছে সে হলো অনিক সরকার। ছাত্রলীগ বুয়েট শাখার তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পদে ছিলেন। ইতিমধ্যে তাকেসহ মোট ১১ জন ছাত্রলীগ থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। এই অনিকের পুরো পরিবারই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনিক সরকারের গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার বরইকুড়ি গ্রামে। তার বাবার নাম আনোয়ার হোসেন সরকার। দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট অনিক সরকার। তার এক ভাই সোহেল এলাকায় থাকেন। সে আওয়ামী লীগ কিংবা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। এলাকায় তার পিতা বিএনপিপন্থি ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত । তার চাচা বাচ্চু, এনতাজ, রুবেল, হেনা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। শুধু সানোয়ার হোসেন নামের এক চাচা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন।
অনিকের জড়িত থাকা ও ছাত্রলীগ করার খবর এলাকায় পৌঁছলে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেন। বিভিন্ন সময় অনিক গ্রামের বাড়িতে গেলেও কোন সময় আওয়ামী লীগ কিংবা স্থানীয় ছাত্রলীগের কোন নেতার সাথে যোগাযোগ কিংবা তাদের সাথে মিশতোও না।
মোহনপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহবুব হাসান রাসেল জানান, ‘অনিক ছাত্রলীগ করে এটা আমরা কখনোই জানতাম না। এলাকায় সে কারও সাথে মিশতোও না। বুয়েটের ঘটনার পর তার ছবি ও ছাত্রলীগের পরিচয় দেখার পর আমি বিস্মিত হয়েছি।’ মেধাবী হত্যায় যারা জড়িত তদের কঠিন শাস্তি দাবি করেন তিনি।
মোহনপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘অনিক যে বুয়েটের ছাত্রলীগের নেতা আমরা তা কখনোই জানিনা। টেলিভিশনে খবর দেখার এটা আমরা জানি।’ তিনি বলেন, ‘তার বাপ চাচারা সবাই বিএনপি করে। সে কিভাবে ছাত্রলীগ করে। তাকে পদ দেয়ার আগে তার পরিবারটা দেখা উচিত ছিল।’
উপজেলা ছাত্রলীগের এই নেতা বলেন, ‘বর্তমানে জামাত বিএনপি পরিবারের অনেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ছাত্রলীগ করছে। তারা নানা ধরনের অপকর্মের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ছে । পরে এর দ্বায়ভার ছাত্রলীগের উপর এসে পড়ছে।’ ‘বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগে পদ দেয়ার আগে কেন্দ্রীয় নেতাদের নিকট ওই সকল শিক্ষার্থীদের পরিবার সম্পর্কে খোঁজ নেয়ার দাবি জানান তিনি ‘। ‘আবরার হত্যায় জড়িত অনিকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।’
প্রসঙ্গত, রোববার দিবাগত রাত ৩টার দিকে বুয়েটের শের-ই-বাংলা হলের নিচতলা থেকে আবরার ফাহাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। শিবির সন্দেহে ছাত্রলীগের কর্মীরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করে বলে অভিযোগ করেছে শিক্ষার্থীরা।
নিহত ফাহাদ বুয়েটের ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ায়। তিনি থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে হওয়া চুক্তি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়াকে কেন্দ্র করে রোববার রাতে হলের ২০১১ নম্বর কক্ষের ভেতর ‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
পরে এই ঘটনায় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, সহ-সভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ, সাংগঠিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিওন, সাহিত্য সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির, উপ-সমাজ সেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, উপ-দপ্তর সম্পাদক মুজতবা রাফিদ, সদস্য মুনতাসির আল জেমি, এহেতসামুল রাব্বি তানিম ও মুজাহিদুর রহমান কে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করা হয় ।
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.