শাল্লার প্রতাপপুর স্কুলে নিয়োগ বাণিজ্য, খতিয়ে দেখবেন উপ-পরিচালক
নিজস্ব প্রতিবেদক, সুনামগঞ্জঃ জেলার শাল্লার প্রতাপপুর পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির যৌথ যোগসাজশে চার পদে নিয়োগ বাণিজ্য ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ নিয়ে গত ৪ এপ্রিল ২০২৩ তারিখে "শাল্লায় প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি মিলে নিয়োগ বাণিজ্য" শিরোনামে শিক্ষাবার্তায় সংবাদ প্রকাশ এবং গত ১০ এপ্রিল ২০২৩ তারিখে নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িতদের শাস্তির দাবি ও নিয়োগ বাতিলের দাবিতে এলাকাবাসী মানবন্ধন করলেও এ বিষয়ে কোন ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি প্রশাসন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতাপপুর পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ে ২১ মার্চ, ২০২৩ তারিখে একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী, একজন নৈশ প্রহরী, একজন আয়া ও একজন অফিস সহকারি পদে বিদ্যালয়ের নিয়োগ কমিটি নিয়োগ প্রদান করে। এর মধ্যে অফিস সহকারি পদে বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অনিল চন্দ্র দাসের ছেলে অপু চন্দ্র দাসকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাকি তিন পদে মোটা অংকের আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে পূর্ব নির্ধারিত প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ জানুয়ারি, ২০২৩ তারিখে স্থানীয় এবং জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় চার পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অফিস সহায়ক পদে-২৬ জন প্রার্থীসহ মোট ৬৫ জন প্রার্থী ২১ মার্চ, ২০২৩ তারিখে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। লিখিত পরীক্ষায় প্রতি পদের বিপরীতে অংশগ্রহণকারী সকল প্রার্থীকে ব্লাক বোর্ডে লিখে দেওয়া একই প্রশ্নপত্রে লিখিত পরীক্ষা গ্রহণ করে পরীক্ষায় সকল প্রার্থীকে উত্তীর্ণ দেখিয়ে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে প্রতি পদের বিপরীতে উত্তীর্ণ সকল প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করে পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে সজল কুমার দাস, নৈশ প্রহরী পদে রাসেন্দ্র চন্দ্র দাস, আয়া পদে ঝর্ণা রানী দাস এবং অফিস সহায়ক পদে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অনিল চন্দ্র দাসের ছেলে অপু চন্দ্র দাস কে মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দেখিয়ে ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
নিয়োগ জালিয়াতির অভিযোগ তুলে নিয়োগ প্রার্থীদের পক্ষে গোপেশ চন্দ্র দাস গত ০৩ এপ্রিল ২০২৩ তারিখে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা সিলেট অঞ্চলের উপ পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে স্বাক্ষর করেন ১৫ জন নিয়োগ প্রার্থী।
লিখিত অভিযোগে তাঁরা চার পদে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলে তা বাতিলের দাবি জানান।
তবে সভাপতির দাবি, তার ছেলেকে কোন সুযোগ দেওয়া হয়নি। সে যোগ্য বিধায় তাকে নিয়োগ বোর্ড নিয়োগ দিয়েছেন। অফিস সহায়ক পদে ২৬ জন প্রার্থীর মধ্যে একমাত্র আমার ছেলেই যোগ্য বলে বিবেচিত হওয়ায় এই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তালেব শিক্ষাবার্তা'কে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আজও আমি প্রধান শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে ফোন করেছিলাম। তারা বলেছেন কোন অনিয়ম হয়নি। তারপরও যখন অভিযোগ করা হয়েছে বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে যেহেতু আমার কাছে অনুলিপি দিয়েছে। সরাসরি অভিযোগ করলে আমি তদন্ত করে দেখতাম। কর্তৃপক্ষ যদি আমাকে তদন্তের দায়িত্ব দেয় তাহলে আমি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করব।
এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেছেন, নিয়োগ বোর্ডে কোন অনিয়ম হয়নি। যোগ্যপ্রার্থীদেরকেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর সিলেট অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর মো: আব্দুল মান্নান খান শিক্ষাবার্তা'কে বলেন, এটা আসলে দেখে মাধ্যমিকের উপ পরিচালক। আমি দেখি কলেজ পর্যায়ের বিষয়গুলো। তারপরও বিষয়টি দেখব। আপনি মাধ্যমিকের সাথে যোগাযোগ করুন।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা সিলেট অঞ্চলের আঞ্চলিক উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর কবীর আহাম্মদ শিক্ষাবার্তা'কে বলেন, বিষয়টি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগে অনিয়ম হয়ে থাকলে অবশ্যই তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৩/০৪/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়