শাল্লায় প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি মিলে নিয়োগ বাণিজ্য
নিজস্ব প্রতিবেদক, সুনামগঞ্জঃ জেলার শাল্লার প্রতাপপুর পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির যৌথ যোগসাজশে চার পদে নিয়োগ বাণিজ্য ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতাপপুর পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ে ২১ মার্চ, ২০২৩ তারিখে একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী, একজন নৈশ প্রহরী, একজন আয়া ও একজন অফিস সহকারি পদে বিদ্যালয়ের নিয়োগ কমিটি নিয়োগ প্রদান করে। এর মধ্যে অফিস সহকারি পদে বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অনিল চন্দ্র দাসের ছেলে অপু চন্দ্র দাসকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাকি তিন পদে মোটা অংকের আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে পূর্ব নির্ধারিত প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ জানুয়ারি, ২০২৩ তারিখে স্থানীয় দৈনিক সিলেটের ডাক এবং জাতীয় দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক মোট চার পদে দরখাস্ত আহ্বান করা হয়। এতে অফিস সহায়ক পদে-২৬ জন প্রার্থীসহ মোট ৬৫ জন প্রার্থী ২১ মার্চ, ২০২৩ তারিখে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। লিখিত পরীক্ষায় প্রতি পদের বিপরীতে অংশগ্রহণকারী সকল প্রার্থীকে ব্লাক বোর্ডে লিখে দেওয়া একই প্রশ্নপত্রে লিখিত পরীক্ষা গ্রহণ করে পরীক্ষায় সকল প্রার্থীকে উত্তীর্ণ দেখিয়ে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে প্রতি পদের বিপরীতে উত্তীর্ণ সকল প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করে পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে সজল কুমার দাস, নৈশ প্রহরী পদে রাসেন্দ্র চন্দ্র দাস, আয়া পদে ঝর্ণা রানী দাস এবং অফিস সহায়ক পদে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অনিল চন্দ্র দাসের ছেলে অপু চন্দ্র দাস কে মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দেখিয়ে ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
নিয়োগ বঞ্চিত ও স্থানীয়দের অভিযোগ, নিয়োগ পরিক্ষায় জালিয়াতির করার জন্য একই প্রশ্নে সকলের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ৬৫ জন প্রার্থীর ৬৫ জনই কিভাবে পাস করে। পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য সকলকে পাস করানো হয়েছে। মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে সেখান থেকে সভাপতি, প্রধান শিক্ষক এবং শিক্ষা কর্মকর্তা তাদের পছন্দমত প্রার্থী নির্বাচন করেছেন। এতে স্বাভাবিক ভাবেই বোঝা যায় এই নিয়োগ সম্পূর্ণ অবৈধ পন্থায় করা হয়েছে। যোগ্য প্রার্থীদের এখানে মূল্যায়ন করা হয়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, প্রধান শিক্ষক এবং সভাপতি মিলে নিয়োগ কমিটি ঠিক করেছেন। এখানে ম্যানেজিং কমিটির একজন সদস্য বাদে অন্যান্য সদস্যদের কোন মতামতই গ্রহণ করা হয়নি। সভাপতি তার ছেলেকে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি আগে থেকেই চুড়ান্ত করে রেখেছিলেন। সে মোতাবেক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য প্রার্থীদের নিকট থেকে আগেই মোটা অংকের আর্থিক লেনদেন করা হয়েছিল। এক কথায় কাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হবে তা আগে থেকেই ঠিক করা হয়েছিল। সভাপতির ছেলের বাদে তিন পদে প্রায় ২০ লাখ টাকার লেনদেনের বিষয়টি আলোচনা করতে শুনেছি।
এ বিষয়ে নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং মৌখিক পরীক্ষার সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে পারা নিয়োগ বঞ্চিত (পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদপ্রার্থী) গোপেশ চন্দ দাস বলেন, আমি লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। মৌখিত পরীক্ষায় সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। তাহলে আমাকে কেন নিয়োগ দেওয়া হলো না। আর তাছাড়া ভিন্ন ভিন্ন পদের পরীক্ষা একই প্রশ্নে কিভাবে হয় ? অফিস সহকারির কাজ আর নৈশ্য প্রহরীর কাজ কি এক। তিনি এই নিয়োগ বাতিলের দাবি জানিয়ে বলেন, আর্থিক লাভবান হয়ে এবং সভাপতি তার নিজের সন্তানকে নিয়োগ দিয়ে অন্য প্রার্থীদের বঞ্চিত করেছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানাই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গিরিন্দ্র চন্দ দাস এর মুঠোফোনে গত দুই দিন ধরে চেষ্টা করা হলেও তিনি ব্যস্ত আছেন, কথা বুঝছেন বলে ফোন কেটে দেন।
অভিযোগের বিষয়ে বিদ্যালয়টি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অনিল চন্দ্র দাস শিক্ষাবার্তা'কে বলেন, অভিযোগটি অহেতুক। এখানে মাউশি ডিজির প্রতিনিধি, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সকলেই উপস্থিত ছিল। আমরা শুধু সহযোগিতা করেছি। আমার ছেলে যোগ্য বিধায় তারা নিয়োগ দিয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ম্যানেজিং কমিটির একজন সদস্য বাদে অন্য কারও মতামত নেওয়া হয়নি প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, রেজুলেশন করেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। তারা শুধু মিথ্যা অভিযোগ করছেন। এমন কিছু হয়নি।
নিয়োগ কমিটিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের প্রতিনিধি সতীশ চন্দ্র সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাফিজ মোহাম্মদ মাসহুদ চৌধুরী শিক্ষাবার্তা'কে বলেন, আমি ডিজি স্যারের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলাম। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোন অনিয়ম হয়েছে বলে আমার জানা নেই। ৬৫ জন পরীক্ষার্থী সবাইকে একই প্রশ্নে পরীক্ষা নিয়ে সকলকে পাস করানো হয়েছে যেন সেলেক্টেড চারজন অকৃতকার্য না হয় এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তাহলে তো যে চারজনকে নেওয়া হবে শুধু তাদেরকেই পাস করানো হতো সবাই পাস করবে না এমন তো বিধান নেই। সকলেই পরীক্ষা ভাল দিয়েছে তাই পাস করেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (শাল্লা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্বেও তিনি) মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন শিক্ষাবার্তা'কে বলেন, নিয়োগের অনিয়মের বিষয়ে আমার কাছেও অভিযোগ এসেছে। নিয়োগ কমিটিতে আমি সদস্য হিসেবে ছিলাম। তাছাড়া মাউশি ডিজির প্রতিনিধিসহ নিয়োগ কমিটি মিলেই এই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যেহেতু নিয়োগে আবেদন যোগ্যতা ৮ম শ্রেণি সেহেতু সাধারণভাবেই লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন পদে একই প্রশ্নে সকলে পরীক্ষা দিয়ে কিভাবে সবাই পাস করে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এটা অনার্স মাস্টার্স পাসের যোগ্যতা নয় তাই স্বাভাবিক প্রশ্নে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির ছেলে নিয়োগ কিভাবে পেলেন জিজ্ঞেস করলে স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই পেয়েছেন। তবুও যেহেতু অভিযোগ আসছে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৪/০৪/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়