বাসায় বসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করছেন প্রধান শিক্ষক
নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুরঃ গত ২১ ফেব্রুয়ারি “এসএসসি ফরম পূরণে পাঁচ হাজার টাকা করে নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক” শিরোনামে এবং 'শিক্ষাবার্তায় সংবাদ প্রকাশ: অভিভাবকদের প্রধান শিক্ষকের হুমকি' শিরোনামে শিক্ষাবার্তা'য় সংবাদ প্রকাশিত হবার পর থেকে গত বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) থেকে আজ বুধবার (০১ মার্চ) স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে জেলার বদরগঞ্জ উপজেলায় লোহানী পাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোয়াজ্জেম হোসেন। তবে স্কুলে না আসলেও ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি বাসায় বসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন। পরবর্তীতে ২৬ ফেব্রুয়ারী থেকে ১ মার্চ পর্যন্ত অফিস সহকারীকে দিয়ে হাজিরা খাতায় নৈমিত্তিক ছুটি দেখান। (প্রমাণ স্বরুপ হাজিরা খাতার ছবি শিক্ষাবার্তা'র হাতে রয়েছে)।
জানা গেছে, নানা অভিযোগে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মোয়াজ্জেম হোসেন এর অনিয়ময়ের সঙ্গী বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম। শিক্ষাবার্তায় সংবাদ প্রকাশের পর থেকে সহকারী প্রধান শিক্ষক বিভিন্ন খাতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া অতিরিক্ত টাকা ফেরত দিতে নানা তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের অব্যয়িত বোর্ড ফি দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড ফেরত দিলেও তা আত্মসাৎ করে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক। সংবাদ প্রকাশের পরে বিদ্যালয়ের এসেম্বেলিতে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে সহকারী প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, তোমাদের বাড়ির আসে পাসে যারা আমাদের স্কুল থেকে ২০২১ সালে এসএসসি পাস করেছে তাদেরকে বলবে তাদের কিছু টাকা স্কুলে আছে যা আমরা ফেরত দিব। (সেই ভিডিও শিক্ষাবার্তা'র হাতে রয়েছে। এমনকি চলতি এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণ বাবদ নেওয়া অতিরিক্ত টাকা ফেরত দিতে অভিভাবকদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
একাধিক অভিভাবকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ফরম পূরণে নেওয়া অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দিতে প্রথমে নানা মুখী চাপ দিলেও আপনাদের পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পরে এখন তারা নরম সুরে টাকা ফেরত নেওয়ার জন্য বলছেন। কিন্তু আমরা অভিভাবকেরা শুধু টাকা ফেরত নয় অতিরিক্ত টাকা আদায় করার বিচার চাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, আমাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আমরা ফেরত নেব যদি স্কুলে ইউএনও এবং মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা উপস্থিত থাকেন তাহলে। ইউএনও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার উপস্থিতিতে যেখানে আমাদের সই করতে বলবে আমরা সেখানেই সই করব।
জানা গেছে, ২০১২ সালে তৎকালীন প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম অবসর নেন। অবসরের আগে তিনি জ্যেষ্ঠতার বিধি লঙ্ঘন করে তার ছেলে তৎকালীন সহকারী শিক্ষক বর্তমানে সহকারী প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলামকে অবৈধ পন্থায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিয়ে যান। সেই দায়িত্ব থাকা অবস্থাতেই ২০১৪ সালে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বর্তমান প্রধান শিক্ষক মোয়াজ্জেম হোসেনকে নিয়োগ প্রদান করেন। এ নিয়োগেও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। পরবর্তীতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলামের নিয়োগ অবৈধ প্রমাণিত হয়। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অবৈধ হলেও তার নিয়োগ করা বর্তমান প্রধান শিক্ষক বহাল তবীয়তে থেকে যায়। পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষক মোয়াজ্জেম হোসেন শফিকুল ইসলামকে সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেন। এ যেন ইচ্ছেমত যে যাকে পারে নিয়োগ দিয়ে যাচ্ছে।
স্কুল সুত্র জানিয়েছে, প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক দুই জনে মিলে কয়েকজন শিক্ষককে নিয়ে একটি করাম তৈরি করে ছাত্র/ছাত্রীদের কাছ থেকে রশিদ ছাড়া অর্থ আদায় করে আত্মসাৎ করেন। এই কোরামের সদস্য হলেন শারীরিক শিক্ষক জাহিদুল ইসলাম, ইসলাম শিক্ষক আজিজুল ইসলাম, কৃষি শিক্ষক নজরুল ইসলাম এবং আইসিটি শিক্ষক হামিদুজ্জামান।
দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড এর বিদ্যালয় শাখা সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান প্রধান শিক্ষক স্কুলটিতে তার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রন রাখতে একাধিক বার একই ব্যক্তি হাবিব লোহানীকে এডহক কমিটির সভাপতি করে নিয়ে আসছেন। পূর্ণাঙ্গ ম্যানেজিংক কমিটি না করে বার বার এডহক কমিটি গঠিত হচ্ছে। কবে এই এডহক কমিট হয় কবে মেয়াদ শেষ হয় তা জানে না এলাকাবাসী । শিক্ষাবার্তার হাতে থাকা এডহক কমিটির সর্বশেষ চিঠি থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের ৩ নভেম্বর সর্বশেষ এডহক কমিটির জন্য দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করে প্রধান শিক্ষক। যা ০৯ নভেম্বর ২০২২ তারিখে অনুমোদন দেয় বোর্ড যার স্বারক নং ২/এস/৪০০/১০৫(০৬)। এই কমিটিতে মোঃ হাবীব মোশরেকী লোহানীকে সভাপতি,মোঃ মিঠু লোহানীকে অভিভাবক সদস্য এবং মোঃ আজিজুল হক কে শিক্ষক সদস্য করা হয়। এর আগে ২০২২ সালের ১৮ এপ্রিল প্রধান শিক্ষক এডহক কমিটির জন্য যে আবেদন করে সেখানেও এই একই ব্যক্তিদের রাখা হয় এবং বোর্ড অনুমোদন দেয়।
বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, আগামী মাসের ৯ তারিখে চলতি এডহক কমিটির মেয়াদ শেষ হবে। এরই মধ্যে বোর্ডে তদবির শুরু করেছেন প্রধান শিক্ষক। চলতি চার সদস্যের কমিটিকে পুনরায় এডহক কমিটি করার জন্য জোড় তদবির চালাচ্ছেন প্রধান শিক্ষক মোয়াজ্জেম।
প্রধান শিক্ষক বাসায় বসে হাজিরা খাতায় সই করায় স্কুলে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। এমনকি মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
জানতে চাইলে লোহানী পাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের একাধিক বারের এডহক কমিটির সভাপতি হাবীব মোশরেকী লোহানীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে রংপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ এনায়েত হোসেন এর আগে শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে দেখবো।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০১/০৩/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়