শিক্ষাবার্তায় সংবাদ প্রকাশ: অভিভাবকদের প্রধান শিক্ষকের হুমকি
নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুরঃ গত ২১ ফেব্রুয়ারি "এসএসসি ফরম পূরণে পাঁচ হাজার টাকা করে নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক" শিরনামে শিক্ষাবার্তা'য় সংবাদ প্রকাশিত হলে জেলার বদরগঞ্জ উপজেলায় লোহানী পাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোয়াজ্জেম হোসেন আরও বেপড়োয়া হয়ে ওঠে। স্থানীয় নেতাকর্মীদের দিয়ে এসএসসির ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ দিতে বাধ্য করা অভিভাবকদেরর অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য চাপ প্রয়োগ ও হুমকি ধামকি দিতে থাকেন।
ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি দিতে বাধ্য হওয়া অভিভাবকদের মধ্যে বদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন বিদ্যালয়ের দশ জন অভিভাবক। অভিযোগ পত্রে স্বাক্ষর করা দশ জন অভিভাবকদের মধ্যে এক নম্বর স্বাক্ষরকারী সাজ্জাদুল মিয়া। শিক্ষাবার্তা'য় সংবাদ প্রকাশের পর থেকেই অভিভাবক সাজ্জাদুল মিয়া'কে স্থানীয় বিভিন্ন নেতাদের দিয়ে অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য হুমকি প্রদান করছেন প্রধান শিক্ষক মোয়াজ্জেম হোসেন।
অভিভাবক সাজ্জাদুল মিয়া শিক্ষাবার্তা'কে বলেন, আপনাদের সংবাদ প্রকাশের পর থেকেই আমাকে অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন প্রধান শিক্ষকের লোকজন। তারা বলছে দ্রুত বিষয়টি সমাধান করেন না হলে সমস্যা আছে। কি সমাধান করতে বলছেন জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ফরম পূরণে নেওয়া অতিরিক্ত টাকার দুই হাজার করে ফেরত নিয়ে স্বাক্ষর করতে বলেছেন। যদি তা না করি তাহলে সমস্যা আছে বলে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। কারা হুমকি দিচ্ছেন জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, হেলাল স্যার (মোঃ হেলাল হোসেন বদরগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক) ফোন দিয়ে বদরগঞ্জে ডাকিয়েছেন আমি যায়নি। এছাড়াও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সেকেন্দার হোসেনের ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন ও সাবেক ইউপি সদস্য বেলাল মন্ডল বিষয়টি সমাধান করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে হুমকি ধমকি দিচ্ছেন। এর বাইরেও চাপ দিচ্ছেন সহকারী প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলামের বাবা এই স্কুলেরই সাবেক প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম। এখন আমি এবং অন্য অভিভাবকরা কি করব বুঝতেছি না।
এই অভিভাবক আরও বলেন, আমি টাকা ফেরত নয় অতিরিক্ত ফি নেওয়ার বিচার চাই।
বেশ কয়েকজন অভিভাবকের সাথে কথা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, করোনার বন্ধের মধ্যেও স্কুলের সকল ফি আদায় বন্ধ ছিল না। এমনকি করোনাকালে এসএসসি পরীক্ষা না হলেও এসএসসির ফরম পূরণের অর্থ কাউকে ফেরত দেয়নি প্রধান শিক্ষক। অন্য স্কুলে বেতন যদি হয় ২০০ আমাদের স্কুলে বেতন নেওয়া হয় ৫০০ টাকা। সব কিছুতেই অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের এসএসসি ফরম পূরণে নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া ৫০ এর অধিক শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণের সময়ে ফরম পূরণ না করে কালক্ষেপণ করেন প্রধান শিক্ষক। ফরম পূরণের সময় পার হয়ে গেলে অতিরিক্ত টাকা দিতে বাধ্য করে বিদ্যালয়ের বন্ধের দিনে গত ২১ ও ২২ জানুয়ারি তাদের থেকে ৫০০০ টাকা কারও থেকে ৬০০০ টাকা নেন।
এ বিষয়ে গত ৬ ফেব্রুয়ারি বদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেন বিদ্যালয়ের দশ জন অভিভাবক। এরপর গত ১৯ দিন পার হলেও প্রশাসন এই বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। গত ২১ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি নিয়ে শিক্ষাবার্তায় সংবাদ প্রকাশিত হলে টনক নড়ে প্রধান শিক্ষকের। এরপরই স্বাক্ষর করে টাকা ফেরত নিয়ে অভিভাবকদের অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য চাপ প্রয়োগ শুরু করে প্রধান শিক্ষক।
শুধু অতিরিক্ত অর্থ আদায়ই নয় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের লিস্ট অনেক লম্বা। এর আগে একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (বাংলা) মোঃ আশরাফুল মন্ডলের কাছে টাকা দাবি করে তা না পেয়ে বিএড স্কেল প্রাপ্তির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আটকে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে ভুক্তোভুগী শিক্ষক আশরাফুল আলম উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে তৎকালীন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রোকসানা বেগমের হস্তক্ষেপে বিএড প্রাপ্তির প্রয়োজণীয় কাগজপত্র সরবারহ করে প্রধান শিক্ষক।
অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মোয়াজ্জেম হোসেন এর সঙ্গে কথা বলতে গতকাল বিদ্যালয়ের গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। একাধিকবার মুঠোফোনে কল করেও পাওয়া যায়নি।
লোহানী পাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির (এডহক) সভাপতি হাবিব লোহানী এর আগে শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি স্কুলে বসেছিলাম। অভিভাবকদের টাকা ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করলেও তারা ফেরত নেননি। অভিভাবকদের হুমকি প্রসঙ্গে শুক্রবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি আর কল রিসিভ করেননি।
বদরগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম শহীদুল ইসলাম শিক্ষাবার্তা'কে বলেন, আমি প্রধান শিক্ষককে বলেছি সবাইকে টাকা ফেরত দিতে। যদি সে ফেরত না দেয় তখন আমি দেখব। অভিভাবকদের ভয়ভীতি দেখানোর বিষয়ে অভিহিত করলে তিনি বলেন, আমার তো অন্য কাজ আছে এইটা নিয়ে পরে থাকার মত সময় আমার নাই। অভিযোগ দিয়েছে একটু সময় লাগবে। অতিরিক্ত টাকা নিয়েছে সেটা ফেরত দিতে বলেছি। অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার জন্য প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেবেন জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, প্রতিদিন আমাকে ফোন করে বিরক্ত করছেন কেন। অভিযোগ দিয়েছে বিষয়টি দেখতে সময় লাগবে। আমার তো অন্য কাজও আছে নাকি।
এ বিষয়ে রংপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ এনায়েত হোসেন শিক্ষাবার্তা'কে বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। অফিস খুললে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিব।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৪/০২/২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়