নিয়োগ ও সনদ জালিয়াতি করেও স্বপদে বহাল শিক্ষক বিশ্বনাথ
সুভাষ বিশ্বাস, জেলা প্রতিবেদক, নীলফামারীঃ গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে 'ডিমলায় জাল সনদে শিক্ষক বিশ্ব নাথের বিশ্ব জালিয়াতি' এবং ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে 'নিয়োগ ও সনদ জালিয়াতি করে ২১ বছর ধরে শিক্ষকতা' শিরোনামে শিক্ষাবার্তা'য় সংবাদ প্রকাশের পরও ডালিয়া দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে জালিয়াতি করে ও সনদ জাল করে নিয়োগ পাওয়া সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) বিশ্বনাথ রায়ের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে কর্মকর্তা বলছেন অচিরেই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর বলছে অচিরেই তার বিরুদ্ধে করা তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৭ আগস্ট ২০০২ সালে ডালিয়া দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক ফয়জুল হক স্থানীয় দাবানল পত্রিকায় দুই জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়। এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো ১৯৯৫ অনুযায়ী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে একাডেমিক কোন পর্যায়ে ৩য় বিভাগ গ্রহণযোগ্য নয় উল্লেখ করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী সাতজন প্রার্থী আবেদন করলেও পরীক্ষায় উপস্থিত হয় পাঁচ জন প্রার্থী। শিক্ষক বিশ্বনাথ এর স্নাতক (পাস) শ্রেণিতে ৩য় বিভাগ থাকায় আবেদনের যোগ্যতা না থাকলেও তৎকালীন প্রধান শিক্ষক ফয়জুল হক আর্থিক সুবিধা নিয়ে তাকে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করায়।
জানা গেছে, ঐ নিয়োগ পরীক্ষায় কম্পিউটার শিক্ষক পদে তিন জন উপস্থিত থাকলেও দুই জন কৃতকার্য হয়। সবগুলোতে ২য় বিভাগ থাকা সন্তোষ চন্দ্র রায়কে নিয়োগ না দিয়ে তৎকালীন প্রধান শিক্ষক ফয়জুল হক অনৈতিক আর্থিক সুবিধা নিয়ে নিয়োগ পরীক্ষায় অযোগ্য ব্যক্তি বিশ্বনাথ রায়কে নিয়োগ প্রদান করে।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী নিয়োগ বৈধ না হওয়ায় ঐ সময়ে সরকারের বেতন পাননি এই শিক্ষক। বেশ কিছু অফিসে ঘোরাঘুরি শেষে আর্থিক সুবিধা দিয়ে ২০০৫ সালে তিনি এমপিওভুক্ত করে নেন।
১৯৯৫ সালের এমপিও নীতিমালায় কম্পিউটার শিক্ষক পদে নিয়োগ বিধিমালায় জাতীয় বহুভাষী সাঁটলিপি প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমী (নট্রামস) অথবা শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে কম্পিউটার সনদ থাকা বাধ্যতামুলক থাকলেও শিক্ষক বিশ্বনাথ রায়ের নিয়োগের সময় কোন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ সনদ ছিল না। পরবর্তীতে তিনি জাতীয় বহুভাষী সাঁটলিপি প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমী (নট্রামস) থেকে ভুয়া কম্পিউটার সনদ দাখিল করেন। যার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন জাতীয় বহুভাষী সাঁটলিপি প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমী (নট্রামস) কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ব নাথ রায়ের স্নাতক (পাস) শ্রেণির সনদে দেখা গেছে , ২০০১ সালে নীলফামারী সরকারি কলেজ থেকে মানবিকে স্নাতক (পাস) সম্পন্ন করেন। তার রোল নম্বর ৭২৩৪২৫ এবং রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৮৬২৬২৫, সেশন ২০০০ এবং ৩য় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ডিপ্লোমা সনদে দেখা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও গবেষণামূলক সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান জাতীয় বহুভাষী সাঁটলিপি প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমী (নট্রামস-বর্তমানে নেকটার) বগুড়া থেকে ‘হাইয়ার ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার সাইন্স এন্ড প্রোগ্রামিং” বিষয়ে “এ” গ্রেড পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে সনদ অর্জন করেন শিক্ষক বিশ্ব নাথ রায়। তবে এই সনদে কোন পাসের সাল উল্লেখ নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক বলেন, নিয়োগ জালিয়াতি এবং জাল সনদের বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রায় সকলেই জানে। তবে তিনি (বিশ্ব নাথ রায়) তার নিয়োগে কোন ঝামেলা নাই, কোর্টের (আদালত) রায় আছে বলে বেড়ান। তবে কখনও তার পক্ষে কি রায় আছে তার কপি দেখাতে পারেননি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক বিশ্ব নাথ রায় মুঠোফোনে বলেন, আমার নিয়োগ বিধি অনুযায়ী হয়েছে। নিয়োগে কোন ঝামেলা নেই। এত কথা মোবাইলে বলতে পারব না। আমার পক্ষে আদালতের রায় আছে। আপনার প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলেন। প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলেছি উল্লেখ করলে তিনি বলেন, স্কুলে আসেন, দেখা করেন তারপর কথা বলব।
জানতে চাইলে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিদর্শক মনিরুজ্জামান শিক্ষাবার্তাকে বলেন, আমি পরিচালকের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করেছি। নিশ্চিত থাকেন এই বিষয়ে প্রতিবেদন দেখতে পাবেন। এটা প্রতিষ্ঠানের ফাইলে নথিবদ্ধ করেছি। আমাদের সফটওয়্যারের উন্নতির কাজ চলছে না হলে এতদিনে অনলাইনে সাবমিট হতো। কতদিনের মধ্যে এটা পাওয়া যাবে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এটা বলা মুশকিল তবে সফটওয়্যারের কাজ দ্রুত শেষ হলে দেখতে পাবেন। আশা করি এক কিংবা দুই সপ্তাহের মধ্যেই পাবেন।
নীলফামারী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব ) ফেরদৌসি আশরাফি শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ের বিদ্যালয় পরিদর্শক মোসা: সাঈদা বেগম শিক্ষা বার্তা’কে বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা দপ্তরের রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ পরিচালক শফিকুল ইসলাম শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা অচিরেই এটা নিয়ে তদন্ত শুরু করব। আমি নীলফামারীর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা থাকা অবস্থাতেই এই বিষয়টি নিয়ে জানতে পেরেছি। আশা করি আমরা দ্রুত কাজ শুরু করতে পারব।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৭/০২/২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়