দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়
ডিমলায় জাল সনদে শিক্ষক বিশ্ব নাথের বিশ্ব জালিয়াতি
নিজস্ব প্রতিবেদক, নীলফামারীঃ জেলার ডিমলায় বছরের পর বছর জাল সনদ দিয়ে চাকরি করে যাচ্ছেন এক শিক্ষক। কম্পিউটার সনদ জাল ও নিয়োগ জালিয়াতি করে গত ২০ বছর ধরে শিক্ষকতা করে যাচ্ছেন ডালিয়া দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিষয়ের সহকারী শিক্ষক বিশ্ব নাথ রায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুর ভিত্তিক স্থানীয় পত্রিকা 'দৈনিক দাবানল' পত্রিকায় ২০০২ সালের ৭, আগষ্ট শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ডালিয়ে দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয় সরকারি বিধি মোতাবেক পরীক্ষায় সকল স্তরে কমপক্ষে দ্বিতীয় বিভাগ থাকতে হবে এবং কম্পিউটার বিষয়ের সহকারী শিক্ষক পদে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। শিক্ষক বিশ্বনাথসহ বেশ কয়েকজন আবেদন করে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে কম্পিউটার শিক্ষক পদে সব গুলোতেই ২য় বিভাগ থাকতে হবে উল্লেখ করা হলেও স্নাতক (পাস) শ্রেণিতে ৩য় বিভাগ প্রাপ্ত বিশ্ব নাথ রায় আবেদন করেন। একই সাথে একই পদে সবগুলোতে ২য় বিভাগ থাকা সন্তোষ চন্দ্র রায়কে নিয়োগ না দিয়ে বিশ্ব নাথ রায় কে নিয়োগ দেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। শুধু নিয়োগ জালিয়াতিই নয়, আবেদনের সঙ্গে তিনি জাতীয় বহুভাষী সাঁটলিপি প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমী (নট্রামস) বগুড়ার একটি ডিপ্লোমা সনদপত্র দাখিল করেন৷ কম্পিউটার বিষয়ে ডিপ্লোমার যে সনদ তিনি দেখিয়েছেন সেই সনদে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও পরিচালকের কোন স্বাক্ষর নেই।
বিশ্ব নাথ রায়ের স্নাতক (পাস) শ্রেণির সনদে দেখা গেছে , ২০০১ সালে নীলফামারী সরকারি কলেজ থেকে মানবিকে স্নাতক (পাস) সম্পন্ন করেন। তার রোল নম্বর ৭২৩৪২৫ এবং রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৮৬২৬২৫, সেশন ২০০০ এবং ৩য় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ডিপ্লোমা সনদে দেখা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও গবেষণামূলক সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান জাতীয় বহুভাষী সাঁটলিপি প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমী (নট্রামস-বর্তমানে নেকটার) বগুড়া থেকে 'হাইয়ার ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার সাইন্স এন্ড প্রোগ্রামিং" বিষয়ে "এ" গ্রেড পেয়ে উত্তীর্ণ হয়ে সনদ অর্জন করেন শিক্ষক বিশ্ব নাথ রায়। তবে এই সনদে কোন পাসের সাল এবং সনদের নিচে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং পরিচালকের কোন স্বাক্ষর নেই। শুধু মাত্র সনদ লেখকের তারিখবিহীন স্বাক্ষর রয়েছে।
কম্পিউটার ডিপ্লোমা সনদের বিষয়ে জাতীয় বহুভাষী সাঁটলিপি প্রশিক্ষণ ও গবেষণা একাডেমী (নট্রামস-বর্তমানে নেকটার) বগুড়ার উপ-পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মুহাম্মদ মাহমুদুর রহমান জানান, আমাদের থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত যে কোন প্রশিক্ষণার্থীর সনদে পরিচালক ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের স্বাক্ষর অবশ্যই থাকবে। স্বাক্ষর-তারিখ বিহীন সনদ দেখলেই বোঝা যায় এটা জাল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক বলেন, নিয়োগ জালিয়াতি এবং জাল সনদের বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রায় সকলেই জানে। তবে তিনি (বিশ্ব নাথ রায়) তার নিয়োগে কোন ঝামেলা নাই, কোর্টের (আদালত) রায় আছে বলে বেড়ান। তবে কখনও তার পক্ষে কি রায় আছে তার কপি দেখাতে পারেননি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক বিশ্ব নাথ রায় মুঠোফোনে বলেন, আমার নিয়োগ বিধি অনুযায়ী হয়েছে। নিয়োগে কোন ঝামেলা নেই। এত কথা মোবাইলে বলতে পারব না। আমার পক্ষে আদালতের রায় আছে। আপনার প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলেন। প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলেছি উল্লেখ করলে তিনি বলেন, স্কুলে আসেন, দেখা করেন তারপর কথা বলব।
ডালিয়া দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সহিদা ইয়াসমিন শিক্ষাবার্তা'কে বলেন, ২০০২ সালের নিয়োগ পত্রে কি ছিল সেটা তো আমি বলতে পারব না । কারণ তখন তো আর আমি দায়িত্বে ছিলাম না। আমি এই প্রতিষ্ঠানে যোগদান করার পর থেকেই তাকে দেখছি। তার পক্ষে আদালতের কি রায় আছে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এই বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
অভিযোগ বিষয়ে জানতে কথা হয় ডিমলা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল হালিমের সংগে। তিনি মুঠোফোনে বলেন অফিসিয়ালি কোন অভিযোগ আসেনি। এত দিন পর কেনো অভিযোগ করা হচ্ছে? তবে অভিযোগ না পেলে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব না।
বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটি না থাকায় কমিটির দায়িত্বে থাকা ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন শিক্ষাবার্তা'কে জানান, তিনি এমপিও ভুক্ত শিক্ষক না হওয়ায় সরকারের আর্থিক কোন ক্ষতি হয়নি। অবশ্য কাগজপত্র চেয়েছি। কাগজ হাতে আসলে যাচাই করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নীলফামারী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব ) ফেরদৌসি আশরাফি শিক্ষাবার্তা'কে বলেন, আমি সবে দায়িত্ব পেয়েছি। সেজন্য কিছুই জানি না।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ের বিদ্যালয় পরিদর্শক মোসা: সাঈদা বেগম শিক্ষা বার্তা'কে বলেন, আমার কাছে অভিযোগের ফাইল আছে। কিন্তু যিনি অভিযোগকারী তিনি অফিসে না আসলে কার্যক্রম গ্রহন করা একটু সমস্যা হচ্ছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা দপ্তরের রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ পরিচালক শফিকুল ইসলাম শিক্ষাবার্তা'কে বলেন, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়ছি। দ্রুত তদন্ত শুরু করা হবে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৩/০২/২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে পেজে লাইক দিয়ে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়।
সর্বশেষ
জনপ্রিয়
এই বিভাগের আরও খবর