গ্রিন এনার্জি খাতে বাংলাদেশের অসামান্য সাফল্য
অনলাইন ডেস্ক।।
গ্রিন এনার্জি খাতে বাংলাদেশ অসামান্য সাফল্য অর্জন করেছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বিশেষ করে অফ গ্রিড সোলার সলিউশনে এদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের আন্তরিক অঙ্গীকার এবং প্রচেষ্টার ফলেই এ সাফল্য সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে ৬৩০.৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে যার মধ্যে ৩৯৭.০৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসে সৌর শক্তি থেকে। সরকার জ্বালানির নিরাপত্তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জ্বালানির বৈচিত্র্যের উপর ভিত্তি করে বিদ্যুৎ উৎপাদন কৌশল নির্ধারণ করেছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত, “রিনিউয়েবল ২০২০ গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট (জিএসআর)”- এ রেন-২১ এর বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, অফ-গ্রিড সৌর পদ্ধতি থেকে অতিরিক্ত ১১ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন করে নেপালের অবস্থান প্রথম। আর বাংলাদেশ এবং মঙ্গোলিয়া এই পদ্ধতিতে আট শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন করে যৌথভাবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।
প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, অফ-গ্রিড সলিউশন বাস্তবায়নের জন্য একটি সফল ব্যবসায়ী মডেল হল পিয়ার-টু-পিয়ার ইলেকট্রিসিটি ট্রেডিং কনসেপ্ট বা সোয়ার্ম ইলেকট্রিফিকেশন, যেটি বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে পরীক্ষিত।
কভিড-১৯ মহামারির ফলে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের শুরুতে ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ) ভবিষ্যতবাণী করেছিল যে, জ্বালানি সম্পর্কিত কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন ২০২০ সালে আট শতাংশে নেমে আসবে।
টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা)’র মতে, নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির হিস্যা ১০ শতাংশ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে, যা ২০০০ মেগাওয়াটের সমপরিমাণ।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশের অফ গ্রিড অঞ্চলে ৫.৫ মিলিয়ন সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে যেটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ অফ-গ্রিড নবায়নযোগ্য জ্বালানি (আরই) কর্মসূচি। এই প্রকল্পের অধীনে ৬৫৩.২-মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এছাড়াও আরই খাত হতে আরো ১৪৮৭-মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার।
অন্যদিকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি হতে ২৪৮.২৯ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অনুযায়ী, গত পাঁচ বছর ধরে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ খাতে অভাবনীয় সাফল্য এসেছে। তবে তাপ শীতলীকরণ এবং পরিবহন খাতে এর ব্যবহার খুবই সামান্য। কিন্তু জ্বালানির জন্য সমগ্র বিশ্বে এর চাহিদা বাড়ছে এবং ক্রমাগত সাফল্য আসছে।
দেশে আরই ভিত্তিক জ্বালানি উৎপাদনকে উৎসাহ দিতে সরকার নেট-মিটারিং পদ্ধতি চালু করেছে। আর এই নেট-মিটারিং এর ফলে স্থানীয়ভাবে বিদ্যুৎ গ্রহণের জন্য আরই প্রযুক্তি যেমন, সৌর, বায়ু এবং বায়ুম্যাস পদ্ধতির ব্যবহার প্রান্তিক পর্যায়ে ব্যবহারকারীদের উৎসাহিত করবে।
রেন-২১ এর নির্বাহী পরিচালক রানা আদিব বলেন, বছরের পর বছর ধরে আমরা দেখছি যে, এই নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ খাতে সাফল্য এসেছে। মূলত নবায়নযোগ্য এই বিদ্যুৎ উৎপাদনে দারুণ অগ্রগতি হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
স্রেডা জানায়, যোগান ও চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সরকার জ্বালানির সক্ষমতা এবং সংরক্ষণে একটি কার্যকরী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বিভিন্ন জ্বালানি সক্ষমতা প্রকল্পের আওতায় সংস্থাটি সর্বমোট জ্বালানি হতে ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ শতাংশ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ২০ শতাংশ জ্বালানি সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
পাওয়ার সেল এর তথ্য মতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৩,৪৩৬-মেগাওয়াটে পৌঁছেছে এবং ৯৭ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে।
২০২০ গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট (জিএসআর) অনুযায়ী, রেন-২১ এর মতে বাংলাদেশ সম্প্রতি নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিতরণে সহায়তার জন্য এখানে রয়েছে একাধিক নীতি।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিতরণ পদ্ধতির বিকাশের জন্য দেশে প্রশাসনিক ও আইনি বিধান, দরপত্র পদ্ধতি এবং উন্নতমানের রুপরেখা তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও এই পদ্ধতিকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে সরকারের আর্থিক সহায়তারও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। - বাসস।