বিশ্বব্যাপী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানজুড়ে ইসরাইল বিরোধী বিক্ষোভ
ঢাকাঃ ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলমান ইসরাইলি গণহত্যা ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মার্কিন শিক্ষার্থীরা যে বিক্ষোভ শুরু করেছিল, মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে তা ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেশী দেশ কানাডা থেকে সুদূর ভারতেও সেই ঢেউ আছড়ে পড়েছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে ইসরাইলবিরোধী এই আন্দোলন সহসাই থামছে না। বরং ইউরোপের আরও কিছু দেশে এই আন্দোলন মাথাচাড়া দিতে পারে।
আন্দোলন দমাতে এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি অভিযান ও ব্যাপক ধরপাকড়ের ঘটনা ঘটেছে। বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে পুলিশ এ পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে এত কিছুর পরও পিছু হটেনি শিক্ষার্থীরা, উল্টো নতুন দাবি নিয়ে আবারও মাঠে নামছে তারা।
সবশেষ বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক ভাষণে বলেছেন, আমেরিকানদের বিক্ষোভ দেখানোর অধিকার আছে কিন্তু সহিংসতা প্রকাশ করার নয়। বিক্ষোভ করার অধিকার আছে, কিন্তু বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার অধিকার নেই।
মার্কিন বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, বাইডেনের এমন বক্তব্য আন্দোলনকে আরও চাঙ্গা করেছে। একই সমালোচনা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পেরও। তার মতে, বাইডেন সরকার এ আন্দোলন দমাতে ব্যর্থ হয়েছেন। আন্দোলনকারীদের কঠোর হস্তে দমন করার পরামর্শও দেন ট্রাম্প।
অস্ট্রেলিয়া
শুক্রবার দেশটির সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁবু স্থাপন করে অবস্থান নেন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। এসময় যুক্তরাষ্ট্রের চলমান আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন তারা।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মেলবোর্ন, ক্যানবেরাসহ অস্ট্রেলিয়ার অন্যান্য শহরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও একই ধরনের তাঁবু গড়ে উঠেছে। আমেরিকার ক্যাম্পাসগুলো থেকে পুলিশ ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভকারীদের জোর করে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলেও, অস্ট্রেলিয়াতে সে ধরনের কোনো ঘটনা এখনও ঘটেনি।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। তাদের দাবি, অস্ট্রেলিয়ান সরকার গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যথেষ্ট কাজ করেনি।
কানাডা
যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভের আঁচ পড়েছে প্রতিবেশী কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও।
মন্ট্রিলের উপকণ্ঠে ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে তাঁবু টাঙিয়ে বিক্ষোভ করছেন ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকেও বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া টরন্টো এবং ভ্যাঙ্কুভারের ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও কয়েকটি ক্যাম্পাসে তাঁবু খাটিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা।
যুক্তরাজ্য
ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে যুক্তরাজ্যের কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে আগেই বিক্ষোভ করেছিল শিক্ষার্থীরা। তবে দিনকে দিন বৃহৎ আকার নিচ্ছে এই আন্দোলন।
এরইমধ্যে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে তাঁবু টাঙিয়ে অবস্থান নিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকটি ভবনের চত্বরেও অবস্থান নিয়েছে তারা।
এছাড়া লিডস, ব্রিস্টল ও ওয়ারউইক শহরের শিক্ষার্থীরাও তাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভবনের বাইরে তাঁবু খাটিয়ে অবস্থান নিয়ে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ করছে।
ফ্রান্স
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের সায়েন্সেস পো বিশ্ববিদ্যালয়েও চলছে বিক্ষোভ। সেখানে শিক্ষার্থীরা গাজায় গণহত্যা বন্ধ এবং ইসরাইলি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বর্জনের আহবান জানিয়েছে।
এছাড়া প্যারিসের সরবনসহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এপ্রিলের শেষ দিকে গাজা যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। ক্যাম্পাসগুলোতে অবস্থান নেয়া ২৩টি স্থান থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ।
ভারত
ভারতের খ্যাতনামা নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভকারীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ করেছে।
ইসরাইলের সন্ত্রাস ও গণহত্যার সাথে যুক্ত প্রশাসন ও দেশের প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তিদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনা ব্যবহার করতে দেবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
এছাড়াও জাপান, ইতালি, মেক্সিকো, লেবাননসহ বিশ্বের বহু দেশে শিক্ষার্থীরা গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা ও আগ্রাসন বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০৪/০৫/২০২৪