এবার শুরু হবে কালবৈশাখী ও বজ্রপাতের তাণ্ডব
ঢাকাঃ এবার শুরু হবে কালবৈশাখী ও বজ্রপাতের তাণ্ডব। আগামীকাল সোমবার (৬মে) থেকে শনিবার পর্যন্ত পুরো সপ্তাহ জুড়ে থাকবে কালবৈশাখী ঝড় ও বজ্রপাতের তাণ্ডব। গত মাসে টানা তাপপ্রবাহে স্বাভাবিক জীবন যাত্রার দুর্বিষহ অবস্থারও অবসান হতে যাচ্ছে এই বজ্রঝড়ের মাধ্যমে। তবে ১১ মে পর্যন্ত বজ্রঝড়ে পুরো দেশের তাপমাত্রা কমে এলেও পরবর্তীতে আবারও তাপমাত্রা বাড়তে পারে।
বজ্রঝড়ের তাণ্ডব শুরুর পূর্বাভাস দিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবুল কালাম মল্লিক শনিবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘টানা তাপপ্রবাহের অবসানের পর শুরু হতে যাচ্ছে কালবৈশাখী ঝড় ও বজ্রপাত। প্রাক্-বর্ষা মৌসুমে সবচেয়ে বেশি বজ্রঝড় হয়ে থাকে মে মাসে। এপ্রিলে যেখানে গড়ে ৮টি বজ্রঝড় হওয়ার কথা সেখানে মে মাসে গড়ে ১৩টি ঝড় হওয়ার কথা রয়েছে। তবে কখনো কম বা বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু আগামী এক সপ্তাহের পুরোটা সময়জুড়ে কালবৈশাখী ঝড় হতে পারে। আর এখানের ঝড়ে বজ্রপাতও ঘটবে।’
দিন বা রাতের কোন সময়ে এই বজ্রপাত সংঘঠিত হয়? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কথা হয় একাধিক আবহাওয়াবিশারদের সাথে। দেশের বজ্রপাত নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক সমরেন্দ্র কর্মকার। বজ্রপাতের কোন সময় ও কোন দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বজ্রমেঘ (যে মেঘে বিদ্যুৎ থাকে অর্থাৎ যে মেঘ থেকে বজ্রপাত হয়ে থাকে) বাতাসে ভর করে প্রবাহিত হয়। তাই বাতাসের গতিবেগ যতো থাকে ততোবেগেই বজ্রমেঘগুলো প্রবাহিত হয়ে থাকে। সাধারণত দেশের বাহির থেকে আমাদের দেশে বজ্রমেঘগুলো প্রবেশ করে। আর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত যেতে প্রায় ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা সময় নিয়ে থাকে।’ দেশ
তাহলে এই ঝড় কখন তৈরি হয়? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাধারণত পশ্চিম, উত্তর-পশ্চিম, উত্তর-পূর্ব, উত্তর এবং দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে দেশে বজ্রমেঘগুলো প্রবেশ করে। এই মেঘগুলো পড়ন্ত বিকেলে প্রবেশ করে পরদিন সকালের মধ্যে দেশের সীমানা অতিক্রম করে। তাই সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত সময়ে মূলত: বজ্রপাত হয়ে থাকে এবং মানুষ ও বিভিন্ন প্রাণী এ সময়েই মারা যায়।
যেহেতু এই বজ্রমেঘগুলো প্রবাহমান। তাই একস্থানে বেশিক্ষণ সময় স্থির থাকে না। তাহলে কতক্ষণ সময় জুড়ে এই বজ্রপাত হতে পারে? এই প্রশ্নের জবাবে দেশের জলবায়ু নিয়ে গবেষণা করা আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, সাধারণত বজ্রপাতসহ মেঘ ৩০ মিনিট থেকে সর্বোচ্চ দেড় ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। তাই এই সময়টি ঘরের বাইরে না থাকাই নিরাপদ।
তবে তাপপ্রবাহে যেমন পরিবর্তনের ছাপ দেখা গেল এপ্রিলে। তেমনিভাবে কালবৈশাখী ঝড় ও বজ্রপাতেও পরিবর্তনের প্রভাব দেখা গেছে। দেশে সাধারণত পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আসা মেঘগুলোতে বজ্রপাতের সৃষ্টি হয়ে থাকে। কিন্তু গত ৭ এপ্রিল দেশের দক্ষিণাঞ্চলের পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরিশাল প্রভৃতি এলাকায় বজ্রঝড় এবং গত ২ মে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও রাঙ্গামাটি এলাকায় বজ্রঝড় হয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে দেশের মধ্যাঞ্চলে বজ্রপাত বেশি হয়ে থাকে। এবার এর ব্যতিক্রম হচ্ছে উল্লেখ করে এশিয়ান মেটিওরোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. মোহন কুমার দাশ বলেন, ‘ একসময় দেশে বজ্রপাতের চারটি দিক ছিল এখন সেসব দিকের সাথে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক যুক্ত হয়েছে। অর্থাৎ সাগর থেকে বজ্রমেঘ দেশের উপকূলীয় এলাকা দিয়ে প্রবেশ করছে এবং তাণ্ডব চালাচ্ছে।’
ড. মোহন কুমার দাশের কথার প্রমাণ পাওয়া যায় বঙ্গোপসাগরের উপরিভাগের উত্তপ্ততা বেড়ে যাওয়া। আর এই বেড়ে যাওয়ার কারণে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের তাপমাত্রাও কিন্তু বেড়ে গেছে। যদিও বঙ্গোপসাগরে তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য গবেষকরা এলনিনোর প্রভাবকে দায়ী করেছেন। প্রশান্ত মহাসাগর থেকে উত্তপ্ত পানির প্রবাহ পশ্চিমে ভারত মহাসাগরের দিকে প্রবাহিত হওয়া এবং এর প্রভাবে বঙ্গোপসাগরের পানির উপরিভাগের উষ্ণতা বেড়ে যাওয়া।
তবে বজ্রপাত দেশের অভ্যন্তরেও সৃষ্টি হতে পারে আবার আন্তঃমহাদেশীয় জলবায়ুর প্রভাবেও সৃষ্টি হতে পারে উল্লেখ করে আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘আমাদের দেশের মধ্যাঞ্চলে বজ্রমেঘের সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া পার্শ্ববর্তী দেশের উষ্ণ আবহাওয়ার মেঘমালা আমাদের দেশে প্রবেশ করে পরিপক্কতা অর্জন করতে পারে। আর এর প্রভাবেও অমাদের এখানে বজ্রমেঘ তৈরি হয় এবং সেসব মেঘের কারণে বজ্রপাত হয়ে থাকে।’
উল্লেখ্য, দেশে প্রতিবছর বর্ষার আগ মৌসুমে কালবৈশাখী ঝড়ের সাথে বজ্রপাত দেখা দেয়। আর এতে দেশে প্রতিবছর অসংখ্য মানুষ মারা যায়। এজন্য ২০১৬ সাল থেকে বজ্রপাতকে দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০৪/০৫/২০২৪