সবকিছুর দাম বাড়ে কিন্তু দাম বাড়েনা বেসরকারি শিক্ষকদের
।। মো. জাকির হোসেন।।
বাজারে গেলে বুঝা যায় নিত্যপণ্যের দাম হু হু করে বাড়ছে। চাল, ডাল, তেল, গ্যাস, আটা, চিনি, মাছ, ডিম থেকে শুরু করে শাক-সবজি এমন কোনো নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নেই, যার দাম বাড়েনি বা বাড়ছে না।
সাধারণ মানুষের আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসেব মিলছে না। নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষ হতাশ হয়ে পড়ছে। সঙ্গে বাড়ছে ক্ষোভ। হতাশায় নিমজ্জিত খেটে খাওয়া মানুষের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও।
সরকারি চাকরিজীবীরা তাদের সুযোগ সুবিধা পেয়েছে বারবার কিন্তু অভিভাবকহীন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে বারবার।
সরকারি চাকরিজীবীরা পে স্কেলের বদলে আগামী অর্থবছরে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট পেতে পারেন। চলমান মূল্যস্ফীতির কারণে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়াকে বিবেচনায় নিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বিশেষ ভাতার জন্য প্রস্তাব তৈরি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে এর আওতায় বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা পড়বেন না বলেই জানা যাচ্ছে।
সাধারণ সরকারি কর্মচারীদের জন্য কিছু ঘোষণা এলে তা এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য সরাসরি কার্যকর হবে না। কারণ তারা সরকারি কর্মচারী নন।
সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্ত ছাড়া এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি হয় না। আর সরকারি কর্মচারীদের জন্য ইনক্রিমেন্টের ঘোষণা এলে সে অনুসারে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধির জন্য আলাদা নির্দেশনার প্রয়োজন হবে। আর তা আসতে হবে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে।
এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা সরকারি কর্মচারী নন। বিশেষ পদ্ধতিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন হয়। তাদের বেতন বাড়াতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনার প্রয়োজন হবে। তবে, সরকারি কলেজ ও স্কুলে কর্মরত যেসব সরকারি কর্মচারী শিক্ষক রয়েছেন তারা এ সুবিধা পাবেন।
এদিকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা সব এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণে দাবি জানাচ্ছেন। শিক্ষক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা দেয়ারও দাবি জানানো হয়েছিলো। শিক্ষক-কর্মচারীদের বিভিন্ন সংগঠন শিক্ষাখাতে জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখার দাবি জানিয়েছে। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষকদের ওপর মরার ওপর খাড়ার ঘা চলছে।এখন শিক্ষকদের শনিবারেও ক্লাস করতে হবে।
শনিবারে বিদ্যালয়ে শুরু হলো পাঠদান। এতে মিশ্র প্রতিত্রিয়া দেখিয়েছেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, সরকার শিক্ষা ব্যবস্থাকে গিনিপিগ বানিয়েছে। ক্ষণে ক্ষণে সিদ্ধান্ত বদল দেখলে মনে হয়, শিক্ষার্থী যেন সরকারের ট্রায়ালের মাঠ। তাদের দিয়ে সরকার এক্সপেরিমেন্ট চালায়। এটাতে শিক্ষার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে বলে মনে করেন তারা।
জাতীয় দিবসগুলোতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবস্থান নিতে হচ্ছে, অথচ সে দিন অন্যদের ছুটি। শুধু তাই নয়, শিখন ঘাটতি পূরণ করতে গত বছরের গ্রীষ্মকালীন ছুটি ও শীতকালীন ছুটি বাতিল করা হয়েছে। চলতি বছরে রমজানের ছুটি কমানো হয়েছে যা মোটেই সুবিবেচনাপ্রসূত হয়নি। এসব সিদ্ধান্ত নির্লিপ্ততারই বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করি। এইসব কর্মকান্ড দেখে বলতে হয় দেশে সবকিছুর দাম বাড়ে কিন্তু শুধু বাড়েনা বেসরকারি শিক্ষকদের দাম।
লেখা:- মহাসচিব
বাংলাদেশ শিক্ষক-কর্মচারি ঐক্যজোট।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/জামান/০৫/০৫/২৪