এই পাঠ্যপুস্তক-সরকার মানেন না বাংলাদেশ ব্যাংক আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক

শিক্ষা ব্যবস্থা এবং সরকারকে সমালোচনা করে ফেসবুকে একাধিক স্ট্যাটাস দেন

আল আমিন হোসেন মৃধা, শিক্ষাবার্তা, ঢাকাঃ রাজধানীর ফরিদাবাদের বাংলাদেশ ব্যাংক আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামাল বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থাকে মানেন না, মানেন না বঙ্গবন্ধুকেও। স্কুলে কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে গালমন্দ করতে ব্যস্ত সদা সর্বদাই। নতুন কারিকুলামে পাঠ্য পুস্তক থেকে ইসলামকে ধুয়ে মুছে ফেলা হচ্ছে, নতুন কারিকুলামে শিক্ষার ১২ টা বেজে যাচ্ছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েছেন গুজব।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক হয়ে সরকারের এমপিও অংশ ভোগ করে মাধ্যমিক ও শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) দেওয়া বেসরকারি শিক্ষকদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের জরুরী নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সরকার এবং শিক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে একের পর এক প্রোপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,  ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামাল তার বক্তব্য জুড়ে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন মনীষীর নাম উচ্চারণ করলেও মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম একটি বারও উচ্চারণ করেননি । এ বিষয়ে কয়েকজন শিক্ষক তাৎক্ষনিক প্রতিবাদ করলে তিনি সভা আহ্বান করেন। সভায় তিনি ভুল স্বীকার করে বলেন, তাঁর নামটা বলা উচিত ছিল। প্রতিবাদে স্বীকার করা কালেও তিনি “তাঁর” শব্দটি ব্যবহার করেন বঙ্গবন্ধুর নাম তবুও উচ্চারণ করেননি।  এ নিয়ে এক শিক্ষক ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের তদন্তে সত্যতা প্রমাণ পান। এ নিয়ে চলতি মাসের ১ তারিখে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড বিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি বরাবর কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন। নোটিশে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রমাণিত হওয়ায় তার বেতন-ভাতা (এমপিও)  কেন  বন্ধ করা হবে না মর্মে এক সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়।

এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ বিদ্যালয় পরিদর্শক মোঃ আরিফুল হক শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, আমরা তদন্ত প্রতিবেদনে সত্যতা পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতিকে বলেছি তিনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না। কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না এটা নিয়ে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নিব।

শুধু মাত্র বিজয় দিবসের আলোচনা সভাতেই নয় চলতি মাসের ১৭ মার্চ জাতীয় শিশু দিবস এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত স্কুলের আলোচনা সভাতেও কার্যত বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করেননি তিনি। পূর্বে শিক্ষকরা প্রতিবাদ করার কথা মাথায় নিয়ে এক দুই বার বঙ্গবন্ধু নামটি উচ্চারণ জাতির জনক বলেননি।

শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিংবা বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রোপ্যাগান্ডা চালিয়ে ক্ষ্যান্ত হননি তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালিত স্কুলের প্রধান শিক্ষক হয়েও ব্যাংকিং সিস্টেম নিয়েও চালিয়েছেন গুজব। ৯ আগস্ট, ২০২২ তারিখে ফেসবুকে তিনি স্ট্যাটাস দেন, ”ব্যাংকে আপনার যত বেশী টাকাই জমা থাকুক না কেন, ব্যাংকটি দেউলিয়া হলে আপনি এক লাখ টাকার বেশি পাবেন না। এই আইন জনগণের অধিকারকে হরণ করেছে।নীরবে জনগণের টাকা মেরে দেয়ার এই আইনকে মেনে নেয়া যায় না।”

বাস্তবে কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে বা অবসায়িত হলে সবার আগে টাকা ফেরত পাবেন ব্যক্তিশ্রেণির আমানতকারীরা। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবশিষ্ট সম্পদ হতে সকল আমানতকারীর পাওনা পরিশোধ করা হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ‘আমানত সুরক্ষা আইন ২০২০’ এর ফলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানতকারীগণ সুরক্ষিত হবেন। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল। যা সঠিক নয়।’

পাঠ্যপুস্তক নিয়ে গুজব ছড়িয়ে এবং উস্কানি দিয়ে তিনি গত , জুলাই ২০২২ তারিখে ফেসবুকে লেখেন, “পাঠ্য পুস্তক থেকে ইসলামকে ধুয়ে মুছে ফেলা হচ্ছে। আপনি আওয়ামী লীগ, বিএনপি — যে দলেরই সদস্য বা সমর্থক হোন না কেন,সবার আগে আপনি মুসলমান, ইসলামি চেতনায় বিশ্বাসী। ইসলাম কে মুছে ফেলার পরিকল্পনাকে চ্যালেঞ্জ করুন,প্রতিবাদ করুন।’  এটা আপনার ঈমানী দায়িত্ব। আপনার দ্বীন মুছে যাচ্ছে,আর আপনি বসে বসে তসবিহ্ পাঠ করছেন?”

পাঠ্যপুস্তক থেকে ইসলামকে ধুয়ে মুছে ফেলার গুজব ছড়িয়েই ক্ষ্যান্ত হননি প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামাল, পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়েই তিনি প্রোপ্যাগান্ডা চালিয়েছেন। গত ১৬ জুন, ২০২২ তারিখে তিনি আরেক স্ট্যাটাসে লেখেন, “শিক্ষা ব্যবস্থাকে “মালমত” করা হচ্ছে। #মালমত কী? বৈশাখ জৈষ্ঠ্য মাসে বিক্রমপুরের লোকেরা আসন্ন বর্ষার জন্য নৌকা মেরামত করে তাতে গাব-কালি দিয়ে ওয়াটারপ্রুফ করত।দেশীয় ভাষায় এটাই মালমত। তবে অবাধ্য কাউকে শাস্তির ভয় দেখানোর জন্যও “মালামত” শব্দটি ব্যবহার করা হত।”

নতুন কারিকুলাম নিয়ে তিনি আরেক স্ট্যাটাসে লেখেন, “নতুন কারিকুলামে শিক্ষার ১১টা ৫৫ মিনিট বাজবে, নাকি বারোটা? আল্লাহ মালুম। বুদ্ধিজীবিরা এখন বুদ্ধু হয়ে বসে থাকবেন। এরপর বলবেন, শিক্ষার মান গেলো রে,গেলো! কে কই আছো,বাঁচাও রে,বাঁচাও!”

এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি একাধিক অনুষ্ঠানে এবং গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে আলাপকালে বলেছেন, কিছু অসাধু ধর্ম ব্যবসায়ী গুজব ছড়াচ্ছে যে পাঠ্যপুস্তক থেকে ইসলামকে বাদ দেওয়া হচ্ছে।  একটি মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারবিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছে। এরাই নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এদের গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন যারা গুজব ছড়াচ্ছে তাদের খুঁজে বের করা হবে।

ব্যাংকিং সেক্টর কিংবা শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে গুজব ছড়িয়েই তিনি ক্ষ্যান্ত হননি ছাড়েননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়েও এমনকি কটূক্তি করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদকে নিয়েও।

তিনি তার স্টাটাসে লেখেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জনগণের কথা শোনেন না। তিনি শুধু তাঁর দলীয় নেতাদের কথা শোনেন। নেতারা দলীয় কর্মীদের কথা শোনেন না। কারন বর্তমানে রাজনীতি করার জন্য কর্মী নয়,টাকা প্রয়োজন। সুতরাং যতদিন নেতারা কর্মীদের কথা শুনবেন না,ততদিন জনগণের ভাগ্যের উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা নাই।”

এক অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছিলেন, কোরবানির ঈদের মাংস নিতে আমার এলাকায় এখন আর কাউকে পাওয়া যায় না। তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের কোর্ট করে করা সেই সংবাদ ফেসবুকে শেয়ার করে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদকে কটূক্তি করে তিনি লেখেন, “স্যার, গভর্নর মোনায়েম খান বলেছিলেন,পূর্ব পাকিস্তানে কোন ভিক্ষুক নেই। আপনার গ্রামেও কোন গরীব লোক নেই। কী অপূর্ব মিল, স্যার!”

প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকার বিরোধী আরও যত স্ট্যাটাস দেন সম্প্রতি সময়ে তা নিচে তুলে ধরা হলো।

“মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন,লোডশেডিং দেয়া হবে ১ ঘণ্টা। রাজার কাছে এক ফকির চেয়েছিলেন ১ টাকা। রাজা দিয়েছিলেন হাজার টাকা।”

“গণতন্ত্র ধর্ষিত। ইতিহাস জানে, সে কারোর কাছেই সম্মান পায়নি।এটাই সাধারণ জনগণের দুর্ভাগ্য। আমরা ক্রমবর্ধিত হারে অন্যায় করে চলেছি।কখনও আমার অন্যায়ের উদাহরণ দিয়ে আপনি অন্যায় করছেন,কখনও আপনার অন্যায়ের উদাহরণ দিয়ে আমি অন্যায় করছি।আর তার দায় শোধ করছে এদেশের অসহায় জনগণ।”

“একজন শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ১৪৫/-টাকা হলে কোন হিসাবে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত হল? শুভঙ্কর কে ছিলেন। তিনি কি আমাদের গুরু? অপরকে বোকা ভাবা বুদ্ধিমান লোকদের স্বভাবে পরিনত হয়েছে।”

“একের পর এক ক্রসফায়ারের একই রকম গল্প জনগণ গ্রহণ করেনি। সন্ত্রাসী দমনে আইনের ফাঁকগুলো বন্ধ না করে আইনকেই মাটি চাপা দেয়া হয়েছে।”

“আরেকটি ‘৭৪ কি অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য? হে আল্লাহ্,আমাদেরকে রক্ষা করো।”

“রাজনৈতিক নেতাগণ ইতিবাচক হলে, দেশ এগিয়ে যেত সাবলীল গতিতে। না, মানে এখনও দেশ আগাচ্ছে, তবে সেটা উল্কা গতিতে।”

“সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ রাজনীতি করেন।এটা নৈতিকতা বিরোধী। কিন্ত তাঁদেরকে রাজনীতি করার সুযোগ দিচ্ছেন কারা? কেনইবা তাঁরা নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে রাজনৈতিক স্লোগান দিচ্ছেন? দোষটা কিন্ত পালের গোদার উপরই বর্তায়।”

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে মাধ্যমিকের শিক্ষকদের জন্য বিশেষ নির্দেশনা দিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)  অফিস আদেশ জারি করে ৯ দফা নির্দেশনা দেন।

ওই অফিস আদেশে বলা হয়, মাউশির অধীন মাধ্যমিক পর্যায়ের কিছু শিক্ষক-কর্মচারী ফেসবুকে তাদের ব্যক্তিগত ওয়ালে ও বিভিন্ন গ্রুপে অশোভন, অনৈতিক, শিষ্টাচারবহির্ভূত ও উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। এতে মাউশি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, সরকারি কর্মচারী আইন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুলশিক্ষকদের চাকরির শর্ত বিধিমালা এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রকাশিত সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার সংক্রান্ত নির্দেশিকার পরিপন্থী।

তবে মাউশির অফিস আদেশ জারি করলেও শিক্ষা ব্যবস্থাকে না মানা প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামাল মাউশি আদেশকেও কর্ণপাত করেননি। ফেসবুকে যেভাবে পারছেন  সেভাবে সরকার এবং শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে গুজব রটিয়েই চলেছেন।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়টির একাধিক শিক্ষক ও অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামাল কোন না কোন ধর্মীয় সংগঠনের সাথে জড়িত। তা না হলে তিনি যেভাবে ফেসবুকে উস্কানিমূলক সব লেখা লেখেন তাতে সেটাই প্রমাণ মেলে। শুধু ফেসবুকে নয় স্কুলেও শিক্ষার্থীদের সাথে বিভিন্ন সময়ে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন এবং কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মধ্যেও উস্কানি দেন।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামাল শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনে তদন্ত করা হয়েছে তা একপেশী। এমনকি তদন্ত কর্মকর্তা আমার সাথে ভালোভাবে কথাও বলেনি। উল্টাপাল্টা জেরা করেছে। তন্দন্তে এসে অপ্রাসঙ্গিক বিভিন্ন প্রশ্ন করেছে। কি বিষয়ে আমার বিরুদ্ধে তদন্ত তার কপিও আমাকে সরবরাহ করা হয়নি। এটা পুরোটাই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক। শিক্ষা বোর্ডেরেই তদন্তে সঠিক তথ্য প্রতিফলিত হয়নি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থা ও সরকারের বিরুদ্ধে উস্কানি দেওয়া ফেসবুক বার্তার বিষয়ে তিনি বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে যে মন্তব্য করেছি সেটা সমালোচনা করে যাতে সঠিক বিষয়টা পাঠ্যপুস্তকে উঠে আসে। আমরা শিক্ষক কোন বিষয়টা ভালো হবে কোনটা মন্দ সেটা নিয়ে আমরা যদি কথা না বলি তাহলে বলবে কে প্রশ্ন রাখেন তিনি। পাঠ্যপুস্তক থেকে ইসলামকে ধুয়ে মুছে ফেলার বিষয়ে তিনি বলেন, ইসলাম শিক্ষা পরীক্ষা না নেওয়া প্রসঙ্গে এটা আমি লিখেছিলাম। তাছাড়া শুধু একজন নাগরিক হিসেবে সমালোচনা করার অধিকার আমার রয়েছে। আমি যদি কথা বলতে নাই পারি তাহলে কিসের গণতান্তিক দেশ। গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে সমালোচনা করার অধিকার আমার রয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে চাকরি করে আপনি শিক্ষা ব্যবস্থা এবং সরকারকে নিয়ে সমালোচনা করতে পারেন কি’না প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমি সরকারি কর্মচারী না। বেসরকারি চাকরি করি সমালোচনা করার অধিকার আমার রয়েছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে যে বা যারা আপনাদের কাছে অভিযোগ দিয়েছে তারা মূলত তাদের ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য দিয়েছে। আপনি আমার প্রতিষ্ঠানে আসেন তাহলে দেখবেন আসলে সত্যটা কি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের (এইচআরডি-১) পরিচালক মোঃ সিরাজুল ইসলাম শিক্ষাবার্তা’কে বলেন,  তার বিরুদ্ধে যে তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা বোর্ড পাঠিয়েছে সেই বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। যেহেতু প্রতিবেদনটি অনেক বড় তাই এ বিষয়ে একটু সময় লাগবে। আমরা বিষয়টি নিয়ে একটি কমিটি গঠন করব। এরপর সিদ্ধান্ত নিব।

শিক্ষা ব্যবস্থা ও সরকার কে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রোপ্যাগান্ডা চালাচ্ছেন সে বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। আমার সাথে ফেসবুকে সে নেই। তবে শিক্ষা ব্যবস্থা এবং সরকারকে নিয়ে কেউ প্রোপ্যাগান্ডা চালালে সেই বিষয়টি প্রশাসনের দেখা উচিত। এই বিষয়টি আমি দেখলে এ বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিব।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ) এর কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যক্ষ বজলুর রহমান শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, আসলে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিতর্কের সুযোগ নেই। সারা বিশ্বব্যাপী বঙ্গবন্ধু সমাদৃত। আর নতুন শিক্ষাক্রম চলছে পাইলটিং এখানে শিক্ষাবিদদের সমন্বয়েই কাজ করা হচ্ছে। ইসলাম শিক্ষা বিষয়ে বড় বড় আলেম এবং ধর্মীয় শিক্ষকদের সমন্বয়েই করা হয়েছে। ইসলাম গেল গেল যে আলোচনা সেটা মূলত গুজব। একজন শিক্ষক হিসেবে এরকম সমালোচনা কেউ করতে পারেনা। নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে কোন মতামত থাকলে তিনি দিতে পারেন কিন্তু ঢালাওভাবে সমালোচনা করতে পারেন না।

এ বিষয়ে শ্যামপুর থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাপলা খানম শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, বিষয়টি ডিইও স্যার আমাকে টেলিফোনে জানিয়েছেন। খোঁজ নিচ্ছি এরকম কিছু পেলে আমরা তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেব। জবাব পেলে তারপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একজন দায়িত্বশীল জায়গা থেকে এভাবে বলতে পারেন না।

বিষয়টি অভহিত করা হলে ঢাকা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো: আব্দুল মজিদ শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, ভন্ডামির একটা সীমা আছে। আপনি একটু স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট কয়েকটা আমাকে দেন। বিষয়টি নিয়ে আমি এখনই খোঁজ নেব। শিক্ষা ব্যবস্থা মানেন না প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি এত বড় কথা এটা মানা যায় না।

জানতে চাইলে এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার শিক্ষাবার্তা’কে বলেন,  আমাদের তদন্ত কর্মকর্তা এটা নিয়ে তদন্ত করেছে। সেই আলোকে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে বলা আছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকার বিরোধী ও শিক্ষাক্রম নিয়ে গুজব ছড়ানো বিষয় নিয়ে তিনি বলেন, এটা নিয়ে আমার নলেজে নেই। তদন্ত কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানাবো উনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন।

উল্লেখ্য, প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামালের দেওয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বার্তাগুলোর স্ক্রিনশট শিক্ষাবার্তা’র হাতে রয়েছে।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২২/০৩/২০২৩

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়