এইমাত্র পাওয়া

সুখী কে?

প্রাচীন গ্রিসের দার্শনিক ডায়াজেনেস বসিয়া রৌদ্র পোহাইতেছিলেন। মহামতি আলেকজান্ডার তাহাকে খুঁজিতে খুঁজিতে অবশেষে তাহার সম্মুখে আসিয়া উপস্থিত হইলেন।

মহামতি আলেকজান্ডার সহায়সম্পদহীন ডায়াজেনেসের কাছে জানিতে চাহিলেন, আমি আপনার জন্য কী করিতে পারি? কী করিলে আপনি সুখী হইবেন? ডায়াজেনেস উত্তরে বলিলেন, দয়া করিয়া একটু সরিয়া দাঁড়ান। আপনার ছায়াটা আমার শরীরের উপর পড়িয়াছে। উহা সরাইয়া লইলেই চলিবে। আলেকজান্ডার অভিভূত হইয়া বলিলেন, আবার যদি জন্মগ্রহণ করিতাম, তাহা হইলে ডায়াজেনেস হইয়া জন্মগ্রহণ করিতে চাহিতাম। ডায়াজেনেস উত্তরে বলিলেন, আবার যদি জন্মগ্রহণ করিতাম তাহা হইলে আমিও ডায়াজেনেস হইয়া জন্ম লইতে চাহিতাম।

সুখের সংজ্ঞা কী? ইহা লইয়া বিশ্বব্যাপী শিক্ষামূলক গল্প রহিয়াছে, আছে বহু মনীষীর উক্তি। কিন্তু ইহাই চিরন্তন সত্য হইয়া আছে যে সম্পদ বা ক্ষমতা ব্যক্তিমানুষকে সুখী করিতে পারে না। ইহার জন্য প্রয়োজন হয় আত্মতৃপ্তি, আত্মসন্তুষ্টি ও আত্মবিশ্বাস। ব্যক্তিমানুষের জন্য ইহা যেমন সঠিক, রাষ্ট্রীয় জীবনের জন্যও ইহা স্মর্তব্য। তাই যথার্থই বলিয়াছেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটায় টিসারিঙে। তিনি বলিয়াছেন, আমরা ভুটানের মানুষ অন্যদের হইতে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র, আমাদের গণতন্ত্রও স্বতন্ত্র। মোট দেশজ সুখ বা গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস বলিতে শুধু কখনোই হাহা-হিহি করা বোঝায় না। জাতীয় সুখ বলিতে এইখানের মানুষের সন্তুষ্টি, মনের উপর নিয়ন্ত্রণ এবং চাহিদার উপর নিয়ন্ত্রণকে বুঝানো হয়।

এইখানে একজন অন্যের সুখে ঈর্ষান্বিত হয় না, এইখানে একজন অন্যের সুখে সুখী হয়। সুখ ভাগাভাগির মধ্যেই বেশি আনন্দ পায় এইখানকার মানুষ। তিনি যেন মহামতি গৌতম বুদ্ধের কথারই প্রতিধ্বনি করিয়াছেন। বুদ্ধ বলিয়াছিলেন, সুস্বাস্থ্য ও সত্যিকারের সুখ ও শান্তি আনিতে প্রয়োজন শৃঙ্খলা ও আত্মনিয়ন্ত্রণ। যদি কেহ নিজের মনের উপর নিয়ন্ত্রণ আনিতে পারেন, তাহা হইলে তিনি আলোর সন্ধান পাইবেন। উল্লেখ্য, ভুটানই প্রথম রাষ্ট্র, যাহারা জাতীয় সুখের সূচক চালু করিয়াছে।

আমরা যে যাহার জায়গা হইতে সুখ খুঁজিয়া হাপিত্যেশ করিতেছি, কিন্তু সুখ কি ধরা দিয়াছে? আমরা জানি, সামষ্টিক জীবন যেমন ব্যক্তিকে প্রভাবিত করিয়া থাকে তেমনি ব্যক্তিজীবনও সমষ্টিকে প্রভাবিত করিয়া থাকে। তাই যাহার যাহার অবস্থান হইতে আমরা সুখ খুঁজিতে পারি অনায়াসে। কেবল পরশ্রীকাতরতা পরিত্যাগকরত আত্মনিয়ন্ত্রণ, শৃঙ্খলা ও আত্মতৃপ্তি অর্জন করিতে হইবে। যাহা আছে তাহা লইয়া আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে পথ চলিলে সুখের সন্ধান মিলিতে পারে। যাপিত জীবনে অর্থের প্রয়োজন অনস্বীকার্য।

কিন্তু অর্থকে জীবনের মুখ্য ধরিয়া লইলেই তাহা ধরা দেয় না। সুতরাং অনাগত অর্থ নহে, জীবনকে তৃপ্ত তথা সুখী করিতে মানবিক গুণাবলির প্রয়োজন হয়।


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.