এইমাত্র পাওয়া

শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রয়োজন শিক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়

তাসলিমা বেগমঃ
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাপনা, শিক্ষার মান, শিক্ষায় অর্জন এসব নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। গত এক দশকে এ বিষয়ে অনেক কার্যক্রম হয়েছে। শিক্ষানীতি-২০১০ থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী ভর্তি বৃদ্ধি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বৃদ্ধি, সারা দেশে সব শিক্ষার্থীর জন্য বিনামূল্যে বই বিতরণ এসবই অর্জন। তবে শিক্ষার মান নিয়ে এখনও বিতর্ক রয়েছে।

এ বিতর্ক থাকবে, কারণ মান অর্জন ক্রমান্বয়ে হবে। হঠাৎ করে দৃশ্যমান হওয়া কঠিন। তবে দৃশ্যমান হওয়ার জন্য যে বিষয়গুলোয় কাজ করতে হবে, সেগুলো দৃশ্যমান হতে হবে। শিক্ষার মান নির্ণয়ের সূচক কী হবে, সেটিও নির্ধারণ করতে হবে অত্যন্ত সচেতনতার সঙ্গে। কারণ এর মধ্যে এটা আমরা সবাই বুঝেছি চেঅ-৫ শিক্ষামানের সূচক নয়।

আমরা জানি, মানসম্পন্ন শিক্ষা বাস্তবায়ন করতে হলে মানসম্পন্ন শিক্ষক দরকার। বাংলাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শতকরা ৯৮ ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেসরকারি এবং মাত্র শতকরা ২ ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক নিয়োগের বিধিবদ্ধ নিয়ম-কানুন রয়েছে।

পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে পরিপত্র জারি করে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করে শিক্ষক নিয়োগপ্রাপ্ত হন। এতে যারা শিক্ষক হতে আগ্রহী এবং যোগ্য তারাই নিয়োগপ্রাপ্ত হন। যোগ্য-দক্ষ শিক্ষকের মাধ্যমে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান অবশ্যই আকর্ষণীয় ও যথাযথ হবে বলে মনে করি।

কিন্তু শতকরা ৯৮ ভাগ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো বিধিবদ্ধ নিয়ম-কানুন নেই। ফলে পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক ইচ্ছামতো নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরাই এখানে দেশের বিশাল অংশের শিক্ষার্থীর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষাদানের দায়িত্ব পান। তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রশ্নবিদ্ধ।

কয়েক বছর আগ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিপত্র জারির মধ্য দিয়ে এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে যারা শিক্ষক হতে চান তাদের পরীক্ষা দিয়ে যোগ্যতা অর্জন করে, তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিয়োগপ্রাপ্ত হতে হয়। এ উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়। তবে এ প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ সময় লাগে বলে অনেক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো সহসাই শিক্ষক পান না। এতে শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

আমাদের দাবি, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিয়োগের বিশাল দায়িত্বটি পালনে এনটিআরসি-এ যথেষ্ট নয়। এক্ষেত্রে PSC-এর আদলে Non government teacher recruitment commission গঠন করা অত্যন্ত জরুরি। এই কমিশন শুধু বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল ও কলেজ)-এর বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করবে লিখিত পরীক্ষা ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে। আর একটি বিষয় অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। সেটি হল শিক্ষকের শিক্ষাবিজ্ঞান বা pedagogical knowledge থাকতে হবে। অর্থাৎ যিনি শিক্ষক হবেন তিনি শুধু জ্ঞানী হলে হবে না, এই জ্ঞান বিতরণের কৌশল তাকে জানতে হবে।

শিক্ষককে জানতে হবে কোন শ্রেণিতে কতটুকু ‘শিখন’ পদ্ধতিগতভাবে দিতে হবে। যেন শিক্ষার্থী সেই জ্ঞান বা শিখন ধারণ করতে পারে। অর্থাৎ How to teach? Why to teach? Whom to teach? How easily, effectively and fastly can transmit his/her knowledge to our teenager student? A teacher should know that methodology. সে কারণে মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষক হতে হবে তার Pre-requisition, qualification থাকতে হবে B. Ed (Bachelor of Education) ডিগ্রি। এই ডিগ্রি অর্জনের মাধ্যমে একজন শিক্ষক যোগ্য শ্রেণিশিক্ষক হিসেবে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করতে পারবেন। শিক্ষক পাঠদানের বিভিন্ন প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি সম্পর্কে জানবেন।

শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে নিজ পরিকল্পনামাফিক (Lesson Plan) পাঠদান করবেন। শ্রেণিকক্ষে শুধু শিক্ষক বলবেন শিক্ষার্থী শুনবে- এই নিয়মে পাঠদান করলে পাঠ শিখন পুরোপুরি টেকসই হয় না এটা গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। শিক্ষক শিক্ষার্থীকে শিখনে সহায়তা করবেন বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে। শিক্ষার্থীকে অংশগ্রহণমূলক শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করবেন। তবেই শিক্ষার্থী করে শিখবে, দেখে শিখবে এবং শুনে শিখবে। এই শিখন হবে টেকসই এবং সফল। দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা শুনে শেখার চেয়ে অনেক বেশি টেকসই।

এই টেকসই শিক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী তার জীবনব্যাপী কাজে লাগাতে পারবে। এই শিক্ষা হবে শিক্ষার্থীর বাস্তব শিক্ষা। Learning by hearing, Learning by seeing and learning by doing. সেজন্য আজকাল শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ করে মাধ্যমিক শিক্ষাক্ষেত্রে multimedia classroom বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সরকার নিজস্ব উদ্যোগে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অন্তত একটি করে multimedia classroom তৈরি করেছে এবং প্রায় অনেক প্রতিষ্ঠানে Computer Lab তৈরি করা হয়েছে। তবে একথা অনস্বীকার্য যে, শিক্ষকরা একবার বা দু’বার প্রশিক্ষণ নিয়েই সারা জীবনের জন্য দক্ষ হয়ে যাবেন- তা কিছুতেই আশা করা যায় না। কারণ জ্ঞান এবং আধুনিক পদ্ধতি অর্থাৎ শিখন পদ্ধতি বা শিক্ষাদান পদ্ধতি প্রতিনিয়তই দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে পরিবর্তিত হচ্ছে, আধুনিকায়ন হচ্ছে, পরিশীলিত ও পরিমার্জিত হচ্ছে। তাই শিক্ষকদেরও বিশ্বায়নের যুগে মানসম্পন্ন শিক্ষাদান করতে হলে নিজেকে বিশ্বমানের উপযোগী করে তৈরি করতে হবে। প্রতিনিয়ত নিজেকে আপডেট করতে হবে।

শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত মেধাবী ও সচেতন। এই দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে তারাও নিজেদের update করতে প্রস্তুত। শিক্ষকদের সে ক্ষেত্রে সহযোগিতা করার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। সে জন্য প্রতিনিয়ত শিক্ষকদের professional development-এর জন্য প্রশিক্ষণের দরকার। একবার B. Ed ডিগ্রি অর্জন করে সেই জ্ঞান দিয়ে সারা জীবন শিক্ষকতা করা যায় না।

শিক্ষকদের প্রতিনিয়ত বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণের দরকার। তবেই শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে বাস্তবসম্মত শিক্ষা প্রদান করতে পারবেন। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক হবেন role model, শিক্ষক হবেন guide, শিক্ষক হবেন friend, শিক্ষক হবেন অনুস্মরণীয়, অনুকরণীয়। তবেই শিক্ষার্থী শিক্ষককে মনে রাখবে। আমরা চাই সেই শিক্ষক, যিনি হবেন জ্ঞানী, বিষয়ের জ্ঞানে সমৃদ্ধ এবং পাঠদানেও আকর্ষণীয়। যিনি হবেন শিক্ষার্থীদের বন্ধু ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। যিনি হবেন জ্ঞান বিতরণে দক্ষ, যোগ্য ও আদর্শ এবং পারদর্শী। এই সফল শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থী হবে আকৃষ্ট, শিক্ষার্থী যাবে না কোচিং সেন্টারে। অভিভাবক যাবেন না কোচিং সেন্টারে। শ্রেণিকক্ষেই শিখে যাবে শিক্ষার্থী।

বাড়িতে শুধু অভিভাবক গাইড করবেন। দেখবেন প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষে শিখে যাচ্ছে কিনা। তবেই অর্জন হবে মানসম্পন্ন শিক্ষা। সবার আগে প্রয়োজন মানসম্পন্ন শিক্ষক। যেসব শিক্ষক আমাদের দেশে শিক্ষাদান করছেন, তাদের বাদ দিয়ে আমরা শিক্ষক নিয়োগ করব না। যারা শিক্ষকতা করছেন, তাদের continuous professional development-এর ব্যবস্থা করতে হবে। অবশ্যই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বেশিরভাগ শিক্ষক যোগ্য ও দক্ষ হয়ে উঠবেন। সেই ব্যবস্থাই আমাদের করা প্রয়োজন বলে মনে করি।

সে জন্য প্রয়োজন University of Education। যে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সব স্তরের শিক্ষকদের প্রয়োজনমাফিক প্রশিক্ষণ দেয়া সম্ভব। প্রতিনিয়ত professional development-এর জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া সম্ভব। নবতর গবেষণা, উদ্ভাবনী চিন্তা-চেতনার বিকাশ, আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন নতুন জ্ঞান সৃষ্টি, নতুন নতুন শিক্ষাদান পদ্ধতির আবিষ্কার ও উদ্ভাবন এ সবই সম্ভব University of Education-এর মাধ্যমে।

পৃথিবীর সব দেশেই এক বা একাধিক University of Education ধর্মী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ভারত, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ডসহ উন্নত সব দেশেই এই শিক্ষা বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই শিক্ষকরা শিক্ষাদান পদ্ধতি সম্পর্কে এবং আধুনিক ও মানসম্মত শিক্ষাদান সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হন। প্রতিনিয়ত নিজেদের এ বিষয়ে Update করতে সক্ষম হন এবং কোনো শিক্ষকই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাদান পদ্ধতি না জেনে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করতে পারে না। শ্রীলংকায় NIE (National Institute of Education)-এ প্রশিক্ষণ কোর্স না করে কোনো শিক্ষক প্রাথমিক বা মাধ্যমিক পর্যায়ে শ্রেণিকক্ষে ঢুকতে পারেন না। ভারতে Delhi University of Education, Indira †andhi University of Education এবং Neheru University of Education সারা দেশের শিক্ষকদের Professional Development-এর জন্য প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।

উন্নত ও নিয়মিত প্রশিক্ষণের পাশাপাশি শিক্ষকদের তথা মেধাবীদের শিক্ষাক্ষেত্রে কাজ করার জন্য আগ্রহী করতে হলে তাদের বেতন-ভাতা ও সম্মান বাড়াতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিটি প্রাইমারি বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি শিক্ষকদের বসবাসের জন্য বহুতলবিশিষ্ট বাসভবন তৈরি করে দিয়েছেন। আমরা জানি, বিশ্বের সব দেশে প্রাইমারি পর্যায়ের শিক্ষকদের গুরুত্ব, বেতন-ভাতাদি এবং মর্যাদা ও যোগ্যতা সবচেয়ে বেশি। আমাদের দেশেও ক্রমে ক্রমে সেই দিকে এগিয়ে যেতে হবে শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য, বিশ্বমানের শিক্ষার জন্য।

চৈনিক দার্শনিক কনফুসিয়াস বলেছেন, যদি এক বছরের জন্য বিনিয়োগ করতে চাও তবে ধান রোপণ কর, আর যদি বারো বছরের জন্য বিনিয়োগ করতে চাও তবে বৃক্ষরোপণ কর আর যদি একশ’ বছরের জন্য বিনিয়োগ করতে চাও তবে শিক্ষায় বিনিয়োগ কর। কাজেই আমরা হঠাৎ করেই মান অর্জন করে ফেলতে পারব না। তবে মান অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।

‘শিক্ষায় সম্মান’ ডিগ্রি অর্জনের একটি চার বছরের কোর্স রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের IER-এ এবং সরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয়, ঢাকাতে এই কোর্সটি চালু ছিল। এরপর সরকারি তেরোটি শিক্ষক-প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয়েই Honours in Education কোর্সটি খুলে দেয়া হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে। এই কোর্সটি সম্পর্কে সাধারণ মানুষের খুব বেশি জানা নেই।

‘শিক্ষায় সম্মান’ ডিগ্রি অর্জনের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী সব পর্যায়ে সরকারি/বেসরকারি চাকরি লাভের যোগ্য হয়। সেই সঙ্গে শিক্ষাক্ষেত্রে তার চাকরির সুযোগ থাকে অগ্রগণ্য। অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও এই বিষয়ে সম্মান ডিগ্রি দেয়া হয়। এর মূল্যমান সম্পর্কে আমাদের দেশের সব পর্যায়ের মানুষ খুব বেশি জানে না। ফলে এখানে পড়তে আসা শিক্ষার্থী সংখ্যা কম। কিন্তু দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে এবং বিদেশে এই ডিগ্রির মূল্যায়ন অনেক। তাই শিক্ষা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হবে যুগোপযোগী চিন্তা।

প্রশিক্ষণের পর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকরা কীভাবে পড়াচ্ছেন বা ‘শিখন’ দিচ্ছেন সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ও যোগ্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে মনিটর করতে হবে। প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর শ্রেণি পাঠদান মানসম্মত হচ্ছে কিনা, তা শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে মূল্যায়নের ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ এটা সর্বজনস্বীকৃত যে, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শুধু জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনই যথেষ্ট নয় এবং এটা লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নয়। এ অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতা শ্রেণিকক্ষে প্রতিফলনের মাধ্যমেই প্রকৃত সফলতা আসতে পারে।

সরকার দেশের সীমিত সম্পদের মধ্যেও মানবসম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে যেসব প্রকল্প গ্রহণ করেছে, সেগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন এবং এর মাধ্যমে অর্জিত দক্ষতা বিনিয়োগের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে অবদান নিশ্চিত করার বিষয়টি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নৈতিক দায়িত্ব। আমরা জানি, বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট অনেক প্রকল্পের আওতায় সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তাদের এবং শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে।

এসব প্রশিক্ষণ দেশের অভ্যন্তরে ও বিদেশে স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে সরকারি অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে। কিন্তু এসব প্রশিক্ষণে অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতা, প্রযুক্তি ও পদ্ধতি প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক খাতে কী ধরনের অবদান রাখতে সক্ষম হচ্ছে, এর বিশ্লেষণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ শিক্ষার মান নিয়ে বিতর্ক রয়েছে এবং মানোন্নয়নের জন্য সরকার সচেষ্ট ও আন্তরিক।

প্রশিক্ষণ খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির পরও সরকারকে বিশেষজ্ঞ পরামর্শক খাতে অনেক অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। তাই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে চূড়ান্ত লক্ষ্য নিয়ে যেতে হলে continuous professional development-এর জন্য University of Education-এর বিকল্প নেই। সেজন্য প্রয়োজন ভিন্ন ‘শিক্ষক শিক্ষা নীতিমালা’ এবং আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষক-শিক্ষা ব্যবস্থাপনা।

প্রয়োজন আলাদা শিক্ষক-শিক্ষা ক্যাডার তৈরি এবং দক্ষ Teacher Education-এর সংখ্যা বৃদ্ধিকরণ। মেধাবীদের এই কর্মক্ষেত্রে আকর্ষণীয় করার জন্য উন্নত ও ভালো বেতন-কাঠামো তৈরি করা প্রয়োজন, অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাদি বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

জাতীয় শিক্ষক-শিক্ষা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এসব বিষয়ে গবেষণা, নীতিনির্ধারণ, আধুনিক ও জাতীয় চাহিদামাফিক শিক্ষাক্রম তৈরি প্রভৃতি মানোন্নয়ন সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সমন্বয় সাধনের জন্য প্রয়োজন শিক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়।

তাসলিমা বেগম : সাবেক চেয়ারম্যান, বিআইএসই; চেয়ারপারসন, শিক্ষা বিভাগ, উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়

সূত্রঃ যুগান্তর


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.