এইমাত্র পাওয়া

বে-সরকারি প্রতিষ্ঠানে জনবল কাঠামো সংশোধন করা প্রয়োজন

আইউব আলী।।
বে-সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার নিমিত্তে রয়েছে জনবল কাঠামো। ২০১০ সালে জনবল কাঠামো সংশোধনের পর পূণরায় ২০১৮ সালে সংশোধন করা হয়। প্রতিষ্ঠানগুলোতে নতুন নতুন পদের সৃষ্টি করা হয় যেগুলি পর্যায়ক্রমে পূরণ করা হবে। ইতোমধ্যে নিয়োগদান প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। বিশেষ করে স্কুল পর্যায়ে এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তথাপি জনবল কাঠামো নিয়ে নতুনভাবে চিন্তা-ভাবনা করার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি।

২০১৮ সালের জনবল কাঠামোতে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর ক্ষেত্রে একটি বড় ধরণের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। জনবল কাঠামোতে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর পদ সৃষ্টি করেছেন ৪টি করে এবং ইন্টারমিডিয়েট কলেজের ক্ষেত্রে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর পদ হচ্ছে ৫টি। কর্তৃপক্ষ কিভাবে এটা করলেন তা আমার বোধগম্য নয়। নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মাত্র ৩টি শ্রেণি রয়েছে। শিক্ষার্থীর সংখ্যাও নেহাত কম। সেখানে ৪ জন কর্মচারীর প্রয়োজন তেমন একটা নেই তবে থাকলে ভাল কেননা নৈশ প্রহরী, পরিছন্নতা কর্মী, দপ্তরী এবং আয়া প্রয়োজন। কিন্তু একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণি সংখ্যা ৫টি এমনকি একাধিক শ্রেণি শাখাও রয়েছে। শিক্ষার্থী সংখ্যা একটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তূলনায় অনেক বেশি। সঙ্গত কারণে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর সংখ্যা বেশি হওয়া উচিৎ ছিল।

জনবল কাঠামোতে সবচেয়ে গড়মিল হয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে। ২০১০ সালের জনবল কাঠামোতে নিম্ন মাধ্যমিক এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর সংখ্যা ছিল মাত্র ২ জন, বালিকা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ৩ জন। উভয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কিছুটা বৈষম্য সৃষ্টি হলেও সংখ্যাটা বৃদ্ধি পেয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ২০১০ সালের জনবল কাঠামোতে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর সংখ্যা ছিল ৫ জন যা কমিয়ে ৪ জন করা হয়েছে! তবে ইন্টারমিডিয়েট কলেজে ৫ জনই রয়েছে। একটি ইন্টারমিডিয়েট কলেজে ২টি মাত্র শ্রেণি রয়েছে সেখানে যদি চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর প্রয়োজন হয় ৫ জন অথচ একটি কলেজিয়েট স্কুলে শ্রেণি সংখ্যা ৭টি অর্থাৎ ১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ১টি ইন্টারমিডিয়েট কলেজ মিলে যে প্রতিষ্ঠান সেখানে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর সংখ্যা সঙ্গত কারণেই বেশি হওয়ার কথা। একটি ইন্টারমিডিয়েট কলেজ চালাতে যদি ৫ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী প্রয়োজন হয় তাহলে একটি কলেজিয়েট প্রতিষ্ঠান চালাতে কমপক্ষে ৭ জন কর্মচারীর প্রয়োজন অথচ সেখানে কমিয়ে ৪ জন করা হলো!

উভয় জনবল কাঠামোতে মাধ্যমিক এবং নিম্ন মাধ্যমিক স্তরে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর সংখ্যা ০১ জন রাখা হয়েছে। নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে সমস্যা না হলেও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এ সংখ্যা ২ জন করা উচিৎ। কেননা মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিতে ৩০০ থেকে ৩০০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। এত শিক্ষার্থীর জন্য ১ জন অফিস সহকারী কোনভাবেই পর্যাপ্ত নয়। বিষয়টি ভেবে দেখার জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ করছি।

২০১০ এবং ২০১৮ সালের জনবল কাঠামোতে আরেকটি বিষয় উপেক্ষিত হয়েছে যেটি হক হচ্ছে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলি যখন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উন্নীত হয় তখন যিনি প্রধান শিক্ষক হিসেবে থাকেন তিনি কাম্য যোগ্যতা থাকা সত্বেও অধ্যক্ষ পদে উন্নীত হতে পারবেন না। উল্লেখ্য যে, এখন পর্যন্ত যতগুলো প্রতিষ্ঠান উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে রুপান্তরিত হয়েছে প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ বেতন স্কেল বৃদ্ধির প্রত্যাশায় বাড়তি শ্রম প্রদান করছেন। নীতিমালা অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক যতদিন আছেন ততদিন অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়া যাবে না। কথা হছছে, দায়িত্বরত প্রধান শিক্ষক যদি স্কুল-কলেজ উভয়টিকে পরিচালনা করার যোগ্যতা রাখেন তাহলে যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে কেন তিনি অধ্যক্ষ হতে পারবেন না? নীতিমালায় অধ্যক্ষ পদের জন্য ১০ বছরের প্রভাষকের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ আছে।

এ যোগ্যতা প্রধান শিক্ষকের নেই কিন্তু স্কুল পর্যায়ে শিক্ষাদান এবং স্কুল পরিচালনার অভিজ্ঞতা তো তার রয়েছে যা অধ্যক্ষ পদে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। এক্ষেত্রে নবসৃষ্ট উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগণের কাম্য শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে অভিজ্ঞতার বিষয়টি পরিবর্তন কিংবা শিথিল করে অধ্যক্ষ পদে উন্নীত করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে সদাশয় কর্তৃপক্ষের আশু দৃষ্টি কামনা করছি। অন্যথায় উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষকগণের প্রতি অন্যায় করা হবে যা শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে। মানবিক দিক থেকেও বিষয়টি বিবেচনার দাবী রাখে কেননা একজন মানুষই স্কুল এবং কলেজ উভয়টিই পরিচালনা করছেন বিধায় শ্রমও দ্বিগুণ দিতে হচ্ছে।
লেখক- 
অধ্যক্ষ
চিলাহাটি গার্লস্ স্কুল এন্ড কলেজ
ডোমার, নীলফামারী।


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.