এইমাত্র পাওয়া

নবম থেকে এইচএসসি পর্যন্ত ঝরে পড়ার হার উদ্বেগজনক

ঢাকাঃ অষ্টম শ্রেণির গণ্ডি শেষ করে চার বছর আগে ২০২১ সালে নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করেছিল ২২ লাখ ৪০ হাজার ৩৯৫ জন শিক্ষার্থী। তাদের গত ২৬ জুন অনুষ্ঠিত এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশগ্রহণের কথা ছিল। কিন্তু পরীক্ষায় অংশ নেন ১২ লাখ ৩১ হাজার ৩৫২ জন।

অর্থাত্ ১০ লাখ ৯ হাজার ৪৩ শিক্ষার্থী বা প্রতি আড়াই থেকে তিন জনের মধ্যে একজন ঝরে পড়েছে। বিনা মূল্যে বই দেওয়া, উপবৃত্তি ও স্কুল ফিডিং কার্যক্রমের মতো হাজার কোটি টাকার সরকারি কর্মসূচির পরও ঝরে পড়ার এমন চিত্র উদ্বেগজনক হিসেবে আখ্যায়িত করে সরকারকে দ্রুত এ ব্যাপারে নজর দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন শিক্ষাবিদরা।

চলতি বছরের চিত্র: এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী গতবারের চেয়ে ৮১ হাজার ৮৮২ জন কমেছে। তিন বছরের মধ্যে এবারই পরীক্ষার্থী সবচেয়ে কম। ২০২৪ সালে ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ পরীক্ষার্থী, ২০২৩ সালে ১৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩৪২ শিক্ষার্থী এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেয়। এদিকে দুই বছর আগে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাশ করে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তির পর রেজিস্ট্রেশন (নিবন্ধন) করেও সোয়া ৪ লাখের বেশি শিক্ষার্থী এবার পরীক্ষা দেননি। সম্প্রতি আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির হালনাগাদ তথ্যে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে এসএসসি পাশ করেন ১৬ লাখ ৪১ হাজার ১৪০ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ১৪ লাখ ৮৩ হাজার ৮৮৯ জন শিক্ষার্থী একাদশ শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করে। বাকি ১ লাখ ৫৭ হাজার ২৫১ জন শিক্ষার্থী একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি না হয়ে শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে পড়ে, যা ভর্তি পর্যায়ে ঝরে পড়ার হার প্রায় ৯.৫৮ শতাংশ।

এর পরের ধাপে আরো উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে। একাদশ শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করেও চূড়ান্ত এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করেনি ৪ লাখ ৩৩ হাজার ৩০৪ জন শিক্ষার্থী, যা প্রায় ২১.২ শতাংশ। সব মিলিয়ে দুই বছরে ঝরে পড়েছে ৫ লাখ ৯০ হাজার ৭৫৫ জন শিক্ষার্থী, যা মোট এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর ৩৫.৯৯ শতাংশ। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলেন, একসঙ্গে এত বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর পরীক্ষা না দেওয়াটা উদ্বেগজনক। এ বিষয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান খন্দকার এহসানুল কবির সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেন, এমনিতেই দেখা যায় পর্যায়ক্রমে ওপরের শ্রেণিতে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার বাড়ে। এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ে এই ঝরে পড়ার অন্যতম কারণ হলো দারিদ্র্য এবং শিক্ষার্থীদের বিয়ে হয়ে যাওয়া।

এসএসসি পাশের পর অনেক শিক্ষার্থী কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে। এটাও ঝরে পড়ার আরেকটি বড় কারণ। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের ওপর একটি জরিপ করতে গিয়ে তারা এ রকম তথ্য পেয়েছেন। এখন উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়েও প্রকৃত কারণ জানার জন্য এ রকম একটি জরিপ করার পরিকল্পনা রয়েছে। শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার প্রবণতা দেশের মানবসম্পদ উন্নয়ন, দক্ষ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যে এবং উচ্চশিক্ষার প্রবাহে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

চলমান এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে নিয়মিত-অনিয়মিত মিলিয়ে মোট ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ পরীক্ষার্থীর অংশগ্রহণের কথা ছিল। পরীক্ষার প্রথম দিন বৃহস্পতিবার মোট ১৯ হাজার ৭৫৯ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলেন। গত বছর এ পরীক্ষায় প্রথম দিন অনুপস্থিত ছিলেন ১৫ হাজার ২০৩ পরীক্ষার্থী। গত এপ্রিলে অনুষ্ঠিত এ বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায়ও তুলনামূলক অনুপস্থিতি বেশি ছিল। ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এই পরীক্ষার প্রথম দিনে অনুপস্থিত ছিল ২৬ হাজার ৯২৮ পরীক্ষার্থী।

অথচ গত বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রথম দিন অনুপস্থিত ছিল ১৯ হাজার ৩৫৯ পরীক্ষার্থী। এসএসসি পরীক্ষায় নিজেদের বোর্ডের অধীন পরীক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির কারণ অনুসন্ধান করেছে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীন এ বছরের এসএসসি পরীক্ষায় ৬ হাজার ৩৮৯ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। তাদের মধ্যে ১ হাজার ৩৫০ জন অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীর তথ্য পাওয়া যায়। তথ্য পাওয়া এসব পরীক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ৪১ শতাংশের (৫৪৯) বিয়ে হয়ে গেছে। এর মধ্যে ৯৭ শতাংশই ছাত্রী। ৩ শতাংশ ছেলে পরীক্ষার্থী বিয়ে করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অনুপস্থিতির প্রধান কারণ বাল্যবিবাহ। এছাড়া পারিবারিক অসচ্ছলতার জন্য কর্মক্ষেত্রে যোগ দেওয়া, অসুস্থতা, প্রস্তুতি ভালো না থাকাসহ নানা কারণে বাকিরা পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের একজন অধ্যাপক গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, এইচএসসি পর্যায়ে পড়াশোনা নানা কারণে ব্যয়বহুল হয়ে পড়ছে, যেটা অনেক অভিভাবকের পক্ষে বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে অনেক শিক্ষার্থী কর্মে প্রবেশ করতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার অনেকেই কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে যাচ্ছেন। বিয়েও আরেকটি বড় কারণ। ঝরে পড়ার কারণগুলো চিহ্নিত করে সরকারকে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দেন তিনি।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/২৮/০৬/২০২৫


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading