এইমাত্র পাওয়া

স্কুল স্থানান্তর নিয়ে দ্বন্দ্বে শ্রেণিকক্ষে তালা, অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে শিক্ষার্থীরা

মানিকগঞ্জঃ সাটুরিয়া উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নের ছনকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ায় চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে প্রায় আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থী। শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে না থাকায় গত তিন দিন ধরে তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে বিদ্যালয়টি।

এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর দুশ্চিন্তায় পড়েছেন অভিভাবকরা। স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, প্রশাসন দ্রুত হস্তক্ষেপ না করলে ধলেশ্বরী নদীর দুই পাড়ের মানুষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকায় যৌথ বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে ধলেশ্বরীর পূর্ব পাড়ের নদীভাঙন কবলিত এলাকার দরিদ্র শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে ছনকা জুনিয়র উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন স্থানীয় বাসিন্দা শাজাহান আলী দীর্ঘ সাত বছর পর ২০২২ সালে বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে চললেও, চরাঞ্চলের ছেলে-মেয়েরা যখন শিক্ষার আলোয় আলোকিত হওয়ার স্বপ্ন দেখছিল, ঠিক তখনই নদীর দুই পাড়ের ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা শাজাহান আলী দীর্ঘদিন ধরে নদী ভাঙনের কারণ দেখিয়ে বিদ্যালয়টি নদীর পশ্চিম পাড়ে স্থানান্তরের জন্য আবেদন করে আসছিলেন। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয় স্থানান্তরের অনুমোদন দেয়। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে নদীর উভয় পাড়ের মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

এক পক্ষ বিদ্যালয়ের স্থানান্তরের বিরোধিতা করে মানববন্ধন করে, যেখানে অন্য পক্ষ প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের সিদ্ধান্তে অনড় থাকে। গত রবিবার সকালে বিদ্যালয়ে এসে শিক্ষার্থীরা দেখে প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে তালা ঝুলছে এবং কোনো শিক্ষক উপস্থিত নেই। বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীরা দিনভর বারান্দায় অলস সময় কাটিয়ে বাড়ি ফিরে যায়। তবে, নদীর পশ্চিম পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে নতুন একটি অস্থায়ী ভবনে কিছু শিক্ষক প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী নিয়ে ক্লাস নিচ্ছেন।

পূর্ব পাড়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, তাদের না জানিয়ে রাতের আঁধারে বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদ বর্তমান প্রধান শিক্ষক আব্দুল সালাম ও প্রতিষ্ঠাতা শাজাহান আলীর বিরুদ্ধে নদী ভাঙনের মিথ্যা অজুহাতে বিদ্যালয়টি পশ্চিম পাড়ে স্থানান্তরের অভিযোগ তোলেন।

ছনকা গ্রামের আনোয়ার হোসেন জানান, নতুন স্থানে বিদ্যালয়ের আশপাশে বখাটেদের উৎপাতের আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া নদী পার হয়ে যেতে পূর্ব পাড়ের শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ৩০-৪০ মিনিট সময় লাগবে। তিনি বিদ্যালয়টি পূর্বের স্থানে রাখার জোর দাবি জানান। মঙ্গলবার সরেজমিন বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা বারান্দায় বসে আছে এবং শ্রেণিকক্ষগুলোতে তালা ঝুলছে।

অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ফাহিমা আক্তার জানায়, তারা বিদ্যালয় নিয়ে কোনো রাজনীতি চায় না এবং নদী সাঁতরে ওপারে যেতেও রাজি নয়। দশম শ্রেণির ছাত্রী মিম আক্তার ক্ষোভের সঙ্গে বলে, ‘আমরা তিন দিন ধরে রোদে পুড়ে ক্লাসের জন্য অপেক্ষা করছি। সব ক্লাসরুম বন্ধ। আমরা দ্রুত ক্লাস করতে চাই।’ সাটুরিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কুদ্দুছ খান মজলিশ মাখন বলেন, বিদ্যালয় স্থানান্তরের কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। নীতিমালা অনুযায়ী বিদ্যালয় ভবন অক্ষত রয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, একটি মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ৫টি ওয়ার্ডের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ব্যাহত করার চেষ্টা করছে।

সাবেক প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আব্দুল মজিদ জানান, বিদ্যালয় স্থানান্তর বন্ধের জন্য গত ২৩ ফেব্রুয়ারি মানিকগঞ্জের সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে (মামলা নং-২১/২০২৫)। মামলা চলমান থাকা সত্ত্বেও একটি চক্র বিদ্যালয় স্থানান্তরের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে, মঙ্গলবার দুপুরে নতুন স্থানে গিয়ে দেখা যায়, ২৫-৩০ শিক্ষার্থী নিয়ে শিক্ষকরা ক্লাস নিচ্ছেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল সালাম জানান, বিদ্যালয়ে মোট ২৬০ শিক্ষার্থী এবং নিয়ম মেনেই স্থানান্তরের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

সাটুরিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফকির জাকির হোসেন জানান, বিদ্যালয় স্থানান্তরের জন্য মন্ত্রণালয়ের চিঠি তাদের কাছে রয়েছে। তবে, স্থানান্তরের প্রক্রিয়াটি যথাযথ হয়নি। প্রধান শিক্ষকের উচিত ছিল উভয় পাড়ের অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সুষ্ঠু সমাধান বের করা।

সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন বলেন, তিনি বিদ্যালয়ে তালা দেওয়ার বিষয়টি শুনেছেন এবং গোপনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী বর্তমান স্থানেই বিদ্যালয় রাখার পক্ষে মত দিয়েছে। তিনি প্রধান শিক্ষককে আইন মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি তা অমান্য করেছেন। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/৩০/০৪/২০২৫


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading