এইমাত্র পাওয়া

সন্তানের দ্বিনি শিক্ষা নিশ্চিত করা আবশ্যক

মো. আবদুল মজিদ মোল্লা।।মুসলিম মাতা-পিতার অন্যতম দ্বিনি দায়িত্ব হলো সন্তানকে দ্বিনি শিক্ষায় শিক্ষিত করা। কেননা মুসলিম হিসেবে জীবন যাপন করার জন্য ধর্মীয় জ্ঞান ও শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। দ্বিনি শিক্ষার অভাবে বর্তমান সমাজের বহু মুসলমানকে ঈমান ও ইসলাম থেকে বিমুখ হয়ে যেতে দেখা যায়। বর্তমান সমাজের সাধারণ চিত্র হলো, সমাজের বেশির ভাগ মুসলমান তাদের সন্তানদের শুধু জাগতিক শিক্ষা প্রদান করে।

জাগতিক শিক্ষায় সর্বোচ্চ অর্জন নিশ্চিত করতে প্রচুর অর্থ ও শ্রম ব্যয় করে। তারা তাদের সন্তানদের নামি-দামি স্কুলে পড়ায়। তাদের জন্য হাজার হাজার টাকা দিয়ে গৃহশিক্ষকের ব্যবস্থা করে। বিপরীতে সন্তানদের ধর্মীয় শিক্ষা ও তারবিয়তের ব্যাপারে তাদের উদাসীনতার কোনো শেষ নেই।

বর্তমান সমাজের বহু মুসলমানের সন্তান কালেমা বলতে পারে না, তাদের প্রিয় নবী (সা.)-এর নাম জানে না, অজু-গোসল ও নামাজের বিধান পর্যন্ত তাদের জানা নেই। বিশুদ্ধ কোরআন তিলাওয়াত পারে না (সম্ভবত) ৮০ শতাংশ মুসলিম শিশু ও কিশোর। এমনকি বহু লোক আছে যারা নিজেরা হয়তো নামাজ পড়ে, শুক্রবার হলেও মসজিদে যায়, কিন্তু তারা তাদের বাচ্চাদের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ায়, মিশনারি স্কুলে পড়ায়; তাদের সন্তানরা ইংরেজি খুব ভালো বলে, গণিতে-বিজ্ঞানে খুবই দক্ষ হয়ে ওঠে, কিন্তু তারা সঠিকভাবে কালেমা পড়তে পারে না।

এসব শিশু এমন সব বিষয়ও জানে না, যা না জানলে ব্যক্তি মুসলিম হতে পারে না, তাদের এমন বিশ্বাস সম্পর্কে জ্ঞান থাকে না, যার ওপর মুসলমানের ঈমান, ইসলাম ও পরকালীন মুক্তি নির্ভরশীল।

জাগতিক শিক্ষার সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জনের পরও তারা নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাতের মতো ফরজ ইবাদত সম্পর্কে মৌলিক ও প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জানে না।
সাধারণত যারা ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করে না, কেবল জাগতিক বিদ্যা অর্জন করে, তাদের ভেতর যথাযথভাবে মানবিক গুণাবলির বিকাশ ঘটে না, নিজের পরিবার ও সমাজের প্রতি তাদের কোনো দায় বোধ থাকে না। মাতা-পিতার সীমাহীন আদর-যত্নে বড় হলেও একসময় তারা মা-বাবাকে পার্থিব লাভ ও ক্ষতির পাল্লা দিয়ে পরিমাপ করে। ফলে তারা অনেক সময় মা-বাবাকে ঠুনকো অজুহাতে দূরে সরিয়ে দেয়, তাঁদের বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসে। মা-বাবার স্বপ্ন ও শ্রম তাদের কাছে মূল্যহীন।

এখন পর্যন্ত সমাজের বাস্তবতা হলো, দ্বিনি শিক্ষায় শিক্ষিতরাই তাদের মা-বাবার প্রতি অনেক বেশি দায়িত্বশীল। তাদের অন্যায়-অপরাধে জড়িয়ে পড়ার হারও অত্যন্ত কম।
মুসলমানের পার্থিব ও পরকালীন কল্যাণ এতেই নিহিত যে তারা তাদের সন্তানদের অবশ্যই ধর্মীয় শিক্ষা নিশ্চিত করবে। যদি কেউ তাদের জাগতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চায়, তবে তার দায়িত্ব হলো, প্রয়োজনীয় ধর্মীয় জ্ঞান নিশ্চিত করা; পাশাপাশি তার দ্বিনি তারবিয়্যাত তথা ধর্মীয় শিষ্টাচার ও জীবন যাপনে অভ্যস্ত করা। যেন তার পার্থিব শিক্ষার উদ্দেশ্যও হয় সৎ ও কল্যাণকর। সে যেন তার জীবনের প্রতিটি স্তরে আল্লাহর বিধান মেনে চলা অপরিহার্য মনে করে।

মনে রাখতে হবে, কিয়ামতের দিন অন্যান্য নিয়ামতের মতো সন্তান সম্পর্কেও আমাদের প্রশ্ন করা হবে। তাদের প্রয়োজনীয় ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের সুযোগ করে না দিলে পরকালে আল্লাহর সামনে লজ্জিত হতে হবে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) এক ব্যক্তিকে বলেছিলেন, ‘তোমার সন্তানকে ভালো শিক্ষায় শিক্ষিত করো (বা উত্তম শিষ্টাচার শিক্ষা দাও)। কেননা তোমার সন্তানদের সম্পর্কে তোমাকে জিজ্ঞাসা করা হবে যে তুমি তাদের কেমন প্রশিক্ষণ দিয়েছ এবং তুমি তাদের কী শিখিয়েছ?’ (শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৮৬৬২)।

অতএব, সন্তানদের এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যেন পরকালে আল্লাহর সামনে লজ্জিত হতে না হয়। আল্লাহর শেষ নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো পিতা তার সন্তানকে ভালো আদবের চেয়ে ভালো উপহার দেয়নি। ’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ১৯৫৯)।

মুফতি আহমদুল্লাহ (রহ.) বলেন, ‘ভালো আদব বলতে সন্তানকে ধার্মিক, পরহেজগার বানানো বোঝায়। সন্তানদের জন্য এর চেয়ে ভালো উপহার আর কী হতে পারে, যা দুনিয়া ও দ্বিন উভয় ক্ষেত্রেই কাজে আসে। মাতা-পিতার উচিত শুধু সন্তানদের ধনী বানিয়ে দুনিয়া থেকে না যাওয়া, বরং তাদের ধার্মিক বানিয়ে যাওয়া, যা তাদের নিজেদেরও কবরে কাজে আসবে। কেননা জীবিত সন্তানদের নেক আমলের সওয়াব মৃত ব্যক্তি কবরে পায়। ’ (রচনাবলি : ২/৩৬১)।

আল্লাহ আমাদের সন্তানদের দ্বিনি শিক্ষায় শিক্ষিত করার তাওফিক দিন। আমিন।

শিক্ষাবার্তা /এ/০৫/০৪/২০২৫

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading