বরিশালঃ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী না থাকার পরও তাদের জন্য বরিশালের বাবুগঞ্জে সরকারি অর্থায়নে আধুনিক দুটি আবাসিক হোস্টেল নির্মাণ করা হয়েছে। সমাজসেবা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বানানো ভবন দুটি পাঁচ বছর আগে বানানো হলেও আজও উদ্বোধন করা হয়নি। নিয়োগ দেওয়া হয়নি প্রয়োজনীয় জনবল। ফলে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভবন দুটি এখন প্রায় পরিত্যক্ত।
সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও গণপূর্ত অধিদপ্তর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য ‘হোস্টেল নির্মাণ এবং সম্প্রসারণ’ প্রকল্প গ্রহণ করে। ওই প্রকল্পের অধীনে বাবুগঞ্জে দৃস্টিপ্রতিবন্ধী বালক ও বালিকা নামে হোস্টেল নির্মাণ করা হয়। নির্মাণ শেষে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে স্থানীয় দুই ঠিকাদার ভবন দুটি সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করে।
৩২৭৮ বর্গফুট আয়তনের দ্বিতল ভবনে মোট কক্ষের সংখ্যা আটটি। হোস্টেল দুটির এক একটিতে আসন সংখ্যা ১০টি করে। হোস্টেল পরিচালনার জন্য রিসোর্স শিক্ষক একজন, হাউজ প্যারেন্ট একজন, রাঁধুনি একজন, অফিস সহায়ক একজন এবং নৈশপ্রহরী একজন নিয়োগ দেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু ভবন নির্মাণের পাঁচ বছরেও ওই জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের এক কর্মকতা জানান, তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকারের প্রভাবশালী সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের নির্দেশনায় বাবুগঞ্জে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী না থাকা সত্ত্বেও তার নিজ নামে হোস্টেল ভবন দুটির অনুমোদন করানো হয়। তিনি বলেন, ‘তৎকালীন মন্ত্রী ক্ষমতার শতভাগ প্রভাব খাটিয়ে বিনা প্রয়োজনে ভবন দুটির বরাদ্দ করিয়েছিলেন, যা এখন কোনো কাজেই আসছে না।’
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা সদরের কলেজ মোড়ে বাবুগঞ্জ বালিকা বিদ্যালয়ের বিপরীতে মেয়েদের হোস্টেলটি বলতে গেলে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। দৃষ্টিনন্দন ভবনটির নির্মাণকাজ শেষে এক দিনের জন্য প্রধান ফটক খোলা হয়নি। ফলে তালাবদ্ধ ভবনটির সীমানা প্রচীরের ভেতরে ঝোপ-জঙ্গলের সৃষ্টি হয়েছে। ভবনের মেঝেতে পুরু ধুলাবালির আস্তর জমে আছে। এ ছাড়া প্রধান ফটকেরর সামনেসহ সীমানা প্রাচীরে দেয়াল ঘেঁষে ভবনের বিপরীতে থাকা ফার্নিচার ব্যবসায়ীরা নিয়মিত কাঠ শুকাচ্ছেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী জামাল হাওলাদার বলেন, ‘দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মেয়েদের জন্য হোস্টেলটি নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু পাঁচ বছর অতিবাহিত হলেও একবারের জন্য এই ভবনটির দরজা-জানালা খোলা হয়েছে- এমনটি আমরা দেখিনি। রক্ষাণাবেক্ষণের জন্য কোনো স্টাফ না থাকায় ভবনটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দীর্ঘদিন তালাবদ্ধ থাকায় ভবনের ভেতরে বিভিন্ন বিষধর প্রাণী বাসা বেঁধেছে। পাশাপাশি এই ভবনটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।’
এদিকে বাবুগঞ্জ সদরের রাশেদ খান মেনন হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের পেছনের অংশে নির্মাণ করা হয় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য বালক হোস্টেল। ৫ আগস্টের পরে ওই ভবনের জানালার গ্লাস ভেঙে বেশকিছু মালামাল চুরির ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া পাশাপাশি হোস্টেল ভবনসহ আশপাশের এলাকায় মাদকাসক্তদের আড্ডা বসত। তাদের হাত থেকে রক্ষা পেতে বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল শাখার এক শিক্ষককে তার পরিবার নিয়ে নিচতলায় এবং উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের অফিস সহায়ক আলাউদ্দিন দ্বিতীয় তলায় বসবাস করছেন।
রাশেদ খান মেনন স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্টাফ রাজিয়া খাতুন বলেন, গত বছরের ৫ আগস্টের পরে হোস্টেলের জানালার গ্লাস ভেঙে মালামাল চুরি হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিদিন হোস্টেল ভবনে মাদকসেবীদের আড্ডা হতো। চোরের হাত থেকে রক্ষা পেতে উপজেলা প্রশাসনের অনুরোধেই ভোকেশনাল শাখার শিক্ষক মিজানুর রহমান ও সমাজসেবার আলাউদ্দিন এখানে বসবাস করছেন। ফলে গত দুই মাস ক্যাম্পাসে আর মাদকাসক্তদের আড্ডা হয় না।
সমাজসেবা অধিদপ্তর বরিশালের উপপরিচালক এ কে এম আখতারুজ্জামান মামুন খবরের কাগজকে বলেন, সমাজসেবা ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সরকারের উদ্দেশ্য ছিল এই হোস্টেল থেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা লেখাপড়া করবে। কিন্তু বাবুগঞ্জের ওই দুই বিদ্যালয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী কোনো শিক্ষার্থী নেই। ভবন দুটি দ্রুত চালু করে সরকারের অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যায় কি না সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে লিখিত জানানো হয়েছে। আগামীতে মন্ত্রণালয়ের সভা রয়েছে। ওই সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/২৮/০৩/২০২৫
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.