এইমাত্র পাওয়া

হাবীবুল্লাহ বাহারের শিক্ষক খুন, হ-ত্যা-র নেপথ্যে ‘ধ-র্ষ-ণ-কাণ্ড’

ঢাকাঃ রাজধানীর হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজের সাবেক শিক্ষক মোহাম্মাদ সাইফুর রহমান ভূঁইয়াকে হত্যাকারীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে শনাক্ত করে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। খুনিরা স্বামী-স্ত্রী। অভিযুক্ত নারীর বয়স ২২ বছর এবং তার স্বামীর বয়স ২০ বছর। রোববার দিবাগত রাত দুইটা থেকে ভোর চারটার মধ্যে এ হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়। খুনি দম্পতির কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র বলছে, ঘটনার তিন থেকে চারদিন আগে রেলস্টেশন থেকে অসহায় ওই দম্পতিকে এনে নিজের বাসায় আশ্রয় দেন শিক্ষক সাইফুর রহমান। ঘটনাক্রমে ওই দম্পতি সাইফুর রহমানকে হত্যা করে পালিয়ে যান।

জিজ্ঞাসাবাদে খুনিরা দাবি করেছেন, এই হত্যার পেছনে ধর্ষণকাণ্ড রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে যাচাই বাছাই করছে পুলিশ।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরাখান থানার ওসি মো. জিয়াউর রহমান বলেন, খুনিরা শনাক্ত হয়েছে। যেকোনো সময় গ্রেফতার দেখানো হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বাসায় আশ্রয় দেওয়া ওই দম্পতি সাইফুর রহমান ভূঁইয়াকে গুরুতর জখম করে যাওয়ার সময় মোবাইল ফোন ও বাসার সব চাবি সঙ্গে নিয়ে যায়। তারা তিনদিন ধরে ওই বাসায় থাকলেও তাদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক ছিল না ওই শিক্ষকের। রেল স্টেশনে পরিচয় হওয়ার পর তাদের সঙ্গে করে বাসায় এনে আশ্রয় দেন সাইফুর।

উল্লেখ্য, সোমবার সকালে রাজধনীর উত্তরার উত্তরখান থানা এলকার পুরান পাড়ার একটি বাসার চতুর্থ তলার ফ্ল্যাট থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ মোহাম্মাদ সাইফুর রহমান ভূঁইয়াকে। তাকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে বাথরুমে আটকে রেখে সটকে পরে দুর্বৃত্তরা। পরবর্তীতে বাথরুমের দরজা ভেঙে বের করে প্রতিবেশীরা উত্তরার একটি হাসপাতলে নিলে মৃত ঘোষণা করা হয়। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে মরদেহ ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

মোহাম্মাদ সাইফুর রহমান ভূঁইয়া হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজের গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। তিনি কলেজটির ভারপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষও ছিলেন। রাজধানীর শান্তিনগর পিরসাহেবেরে গলিতে একটি বাসায় স্ত্রী সন্তান নিয়ে থাকতেন তিনি। উত্তরার ভাড়ার বাসাটিতেও মাঝে মধ্যে থাকতেন। তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর থানার বাসুদেব গ্রামে। তার বাবার নাম মৃত খলিলুর রহমান ভূঁইয়া।

জানা গেছে, সাইফুর রহমান ভূঁইয়া পরিবার নিয়ে শান্তিনগর এলাকায় থাতেন। তবে কিছুদিন আগে সাইফুর রহমান উত্তরার উত্তরখান থানা এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নেন। সেই বাসায় একাই থাকতেন।

নিহত শিক্ষকের স্ত্রী সাদিয়া রেহমান গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি বেশ কয়েক মাস ধরে আলাদা থাকেন। কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে বাসায় আসতেন। আবার চলে যেতেন। তবে তার সঙ্গে কথা বলতেন না। কোথায় থাকে জানতে চাইলে বলতেন বন্ধুর বাসায় থাকেন। কোন বন্ধু তা বলতেন না। পরে সোমবার বিকালে থানার ওসি কল করে হত্যার বিষয়টি জানান।

এ ঘটনায় সাইফুর রহমানের ভাই মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান ভূঁইয়া বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয়ের আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছে। মামলা নম্বর ১২।

এজাহারে লুৎফুর রহমান উল্লেখ করেন, আমার বড় ভাই সাইফুর রহমানের উত্তরার ভাড়ার বাসার পাশে তার স্ত্রীর পৈত্রিক সম্পত্তি রয়েছে। সেখানে বাড়িঘর নির্মাণ করার জন্য গত ৩ থেকে ৪ মাস ধরে ভাড়াটিয়া হিসাবে বসবাস করে আসছিলেন। সোমবার বিকাল ৫টার দিকে আমার ভাই এর সহকর্মী কবির স্যার মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আমাকে বলেন, আমার বড় ভাইকে অজ্ঞাতানামা ব্যক্তিরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে শয়ন কক্ষের ভেতর ফেলে রাখে এবং স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে উত্তরা পশ্চিম থানাধীন ১১ নম্বর সেক্টরে লেক ভিউ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেছে। আমি সংবাদ পেয়ে দ্রুত লেক ভিউ হাসপাতালে গিয়ে আমার ভাই মোহাম্মদ সাইফুর রহমানকে মৃত অবস্থায় পাই। পরে আমি আমার ভাইয়ের ভাড়ার বাসায় গিয়ে আশেপাশের লোকজন ও ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে জানতে পাই গত ২/৩ দিন পূর্বে আমার বড় ভাই সাইফুর রহমান এর ফ্লাটে অজ্ঞাতনামা একজন নারী এবং একজন ছেলে অবস্থান করছিল। ঘটনার পর থেকে ওই ব্যক্তিরা আর ফ্লাটে ছিল না।

এজাহারে আরও বলা হয়, সকাল অনুমান ৫টা ১০ মিনিটের দিকে আমার ভাইয়ের ফ্লাটের বিপরীত পাশের ভাড়াটিয়া ফয়সাল কবির বাড়ির কেয়ারটেকার কোহিনুর বেগমকে এ ঘটনা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অবগত করে। কোহিনুর বেগম প্রতিবেশী নেহাল, আবু জাফর, জনি (৩০) ও মো. কাউছারদের (৩৫) মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ঘটনার বিষয়ে জানালে তারা ঘটনাস্থলে এসে আমার ভাইকে জখমরত অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং চিকিৎসারত অবস্থায় আমার ভাইকে কর্তব্যরত চিকিৎসক সকাল ৭টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন।

এজাহারে আরও বলা হয়েছে, বোববার দিবাগত রাত অনুমান ২টা থেকে ভোর অনুমান ৪টার মধ্যে যেকোনো সময় অজ্ঞাতনামা বিবাদীরা আমার ভাইয়ের রুমের ভেতর প্রবেশ করে একা থাকা অবস্থায় পেয়ে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে উপর্যুপরি গুরুতর জখম করে ফ্লাটের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে পালিয়ে যায়।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১২/০৩/২০২৫


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.