ব্রাহ্মণবাড়িয়াঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্কুলে না এসেও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর ও বেতন ভাতাদি ওঠানোর অভিযোগ উঠেছে বাঞ্ছারামপুর সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মীর রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
তিনি বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার কারণে স্কুলের শ্রেণিসহ অন্যান্য কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। কিন্তু তিনি বিদ্যালয়ে না গিয়েও কিভাবে নিয়মিত স্বাক্ষর করেন এবং বেতন বিল উত্তোলন করছেন- এ নিয়ে অভিভাবকসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ- উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে তিনি এসব সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বাঞ্ছারামপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০০৯ সালের ২৩ জুলাই প্রধান শিক্ষকের পদে যোগদান করেন মীর রফিকুল ইসলাম। যোগদানের পর থেকেই সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘন করে তার ইচ্ছা মতো বিদ্যালয় পরিচালনা করছেন। নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত না থেকে ব্যক্তিগত ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠদান করান না। বিদ্যালয়ের নামে আসা বরাদ্দ তিনি তার ইচ্ছা মতো খরচ করেন। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট বিগত সরকারের পতনের পর থেকে আত্মগোপনে চলে যান মীর রফিকুল ইসলাম। এর পর থেকে বিদ্যালয়ে না গিয়েও সংশ্লিষ্টদের যোগসাজসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করছেন। এ ছাড়াও বেতন-ভাতাসহ সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ওয়াসিফা আক্তার জানায়, আমরা রফিক স্যারকে অনেকদিন ধরে বিদ্যালয় দেখিনা, বিশেষ করে ৫ আগস্টের পর থেকে উনি স্কুলেই আসেন না।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. কামরুল হাসান বলেন, ‘তিনি (প্রধান শিক্ষক) রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ৫ আগস্টের পরে রফিক স্যার কয়েকটি মামলায় আসামি হয়েছেন। এ জন্য তিনি স্কুলে আসতে পারছেন না।’
মৌখিকভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার সাহা বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকেই তিনি বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত। হাজিরা খাতায় কখন স্বাক্ষর করেন- এটা আমি জানি না। উনি না থাকায় আমিসহ সহকর্মীদের নিয়মিত কার্যক্রম বিঘ্ন ঘটছে।’
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক একেএম মূসা বলেন, ‘রফিক সাহেবের বিভিন্ন অনিয়মের কথা আমি শুনেছি। আমি মাঝে মধ্যে স্কুলে আসি। কিন্তু প্রধান শিক্ষককে পাই না। তার বিভিন্ন অনিয়ম ও অনুপস্থিতির বিষয়ে জেলা প্রাথমিক ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের সাথে কথা বলেছি। উভয়ই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন।’
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মীর রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ কর সম্ভব হয়নি।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল আজিজ বলেন, ‘৫ আগস্টের পরে তিনি একবার মেডিকেল ছুটি কাটিয়েছেন এবং মাঝখানে ওমরা হজেও গিয়েছিলেন- এটা আমি জানি। বিদ্যালয়ে না এসেও নিয়মিত স্বাক্ষর করছেন- বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। যদি এমনটি হয়ে থাকে তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. শামসুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমি জানি না। বিদ্যালয়ে না এসেও যদি কেউ হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে তাহলে এটি অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ। যদি এমনটা হয়ে থাকে তাহলে উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে বলব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।’
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/২৩/০২/২০২৫
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.