এইমাত্র পাওয়া

ছাত্রীকে বিয়ে ছাড়াই শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা সেই শিক্ষককে শোকজ

সালমান ইস্পাহানী সাইমন, নোবিপ্রবি প্রতিবেদক: বিবাহবহির্ভূতভাবে নিজ বিভাগের ছাত্রীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করার দায়ে অভিযুক্ত নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এইচ. এম. মোস্তাফিজুর রহমানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরের সংস্থাপন শাখার এক নোটিশ হতে এই বিষয়ে জানা যায়।

নোটিশে বলা হয়েছে, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এইচ. এম. মোস্তাফিজুর রহমান (সাময়িক বরখাস্তকৃত) এর বিরুদ্ধে একই বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের একজন নারী শিক্ষার্থী কর্তৃক আনীত অভিযোগ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ নীতিমালা,২০০৮ এর বিধি ৩(৩.১) (ঝ) এবং (ঠ) এবং সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি ২(খ) এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন,২০০১ এর ধারা ৪৭(৮) এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আইন অনুযায়ী কেন আপনাকে চাকরিচ্যুত/চাকুরি হতে বরখাস্ত করা হবে না তা আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার  বরাবর প্রেরণ করার নির্দেশ প্রদান করা হলো। একই সাথে আত্মপক্ষ সমর্থনে যদি কোন বক্তব্য থাকে তাও অত্র কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবে লিখিত আকারে উপস্থাপনের বিষয়ে নোটিশে বলা হয়েছে।

নোটিশে অভিযোগের বিষয়ে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত শিক্ষক এইচ. এম. মোস্তাফিজুর রহমান অভিযোগকারী শিক্ষার্থীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে জোরপূর্বক প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে প্রতারণা করে অসদাচরণ করেছেন। অভিযোগকারী শিক্ষার্থীর সাথে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বিবাহবহির্ভূত শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে নৈতিক স্খলন ঘটিয়েছেন।অভিযোগকারী শিক্ষার্থীকে নিয়ে নোবিপ্রবি ক্যাম্পাসে অবস্থিত শিক্ষক এপার্টমেন্ট ‘শঙ্খচিল’ এ অনৈতিক উদ্দেশ্যে অবস্থান করে অসদাচরণ এবং নৈতিক স্খলন ঘটিয়েছেন।অভিযুক্ত শিক্ষক এইচ. এম. মোস্তাফিজুর রহমান নিজে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ২দিন পূর্বে(৯ অক্টোবর, ২০২৪) প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে অভিযোগকারী শিক্ষার্থীর সাথে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে নৈতিক স্খলন ঘটিয়েছেন।

গত বছরের ২৩ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর অভিযোগত্রে ওই ছাত্রী জানান, ২০২২ সালের ২৫ ডিসেম্বর থেকে ১৪ মার্চ ২০২৩ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ তিন মাস তিনি আমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক জড়ানোর জন্য আমাকে মানসিক অত্যাচার করে। পরবর্তীতে আমি তার সাথে যোগাযোগ করতে না চাইলে ও সব জায়গা থেকে তাকে ব্লক দিলে তিনি (শিক্ষক) অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকতেন এবং বিভিন্ন মাধ্যমে কল দিয়ে তিনি বলতেন আমাকে পেলে তিনি সুস্থ হয়ে যাবেন। পরে তিনি আমার মায়ের নম্বর জোগাড় করে ফোন দিয়ে বলেন, ‘পৃথিবীর সব সুখ আমি আপনার মেয়েকে দেব, কোনো স্বামী এই পৃথিবীতে দিতে পারবে কিনা আমি জানি না, তাও আমার মা নিষেধ করে দেন।’

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অভিযোগপত্রে লিখেন, এমন করে করে তিনি আমাকে ফাঁদে ফেলে দিতেন এবং মানসিকভাবে আমি অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং একটা পর্যায়ে ভাবতে থাকি আমার কারণে একটা মানুষ এতো কষ্ট পাচ্ছে। ২০২৩ সালের ১১ মার্চ তিনি তার পিএইচডি ছেড়ে আমার কারণে দেশে চলে আসেন এবং বলেন আমার আশেপাশে থাকলেই তিনি ভালো থাকবেন। আমার একাডেমিক লাইফে ক্ষতির সম্ভাবনা, মোস্তাফিজুর রহমানের প্রতিনিয়ত কান্নাকাটি ও জোরাজোরি এবং নানান বিষয়ে ডিপ্রেশনে থাকার কারণে আমি তার সাথে সম্পর্কে যেতে রাজি হই। আমার সাথে তার সম্পর্ক চলতে থাকে স্বাভাবিক নিয়মে। এর মধ্যে কয়েকদফা তিনি আমাকে একা একা বিয়ে করে ফেলার কথা বলেন কিন্তু আমি বলেছি ফ্যামিলিকে জানাও তারপর বিয়ে করবো। ২০২৪ সালের কুরবানি ঈদের সময় থেকে তিনি পরিবারে জানান এবং তার ভাষ্যমতে তার পরিবার রাজি হয় না। এই মধ্যে আমি আমার পরিবারকে জানাই এবং সকলে সম্মতি প্রকাশ করে আমাদের বিয়ের জন্য। কিন্তু বেশ কিছু দিন যাবত তিনি আমাকে বুঝাতে থাকেন তার পরিবার অন্যত্র তার জন্য পাত্রী দেখছেন, কিন্তু তিনি আমাকেই চান।গত ৮ এবং ৯ অক্টোবর আমার খালামনির সাথে কথা বলে মোস্তাফিজ বলেন, তিনি তার ফ্যামিলি ছেড়ে আমাকে বিয়ে করবেন, আমাকে আগামী ২/৩ বছরেও স্ত্রী বলে পরিচয় দিবেন না কোথাও এবং ছাত্রীকে বিয়ে করার কারণে যদি তার চাকরি যায় আমাকে আয় করে তাকে খাওয়াতে হবে, আমার পরিবারকে তার দায়িত্ব নিতে হবে এবং তিনি এখন একাই বিয়ে করবেন আমাকে কাজী অফিসে যেতে হবে। আমার পরিবারের কেউ যেতে পারবে না। আমার পরিবার আমার দিকে তাকিয়ে তার সব শর্তে রাজি হয়। পরবর্তীতে ১১ অক্টোবর শুক্রবার তিনি আমাকে বিয়ে করবেন বলে ঢাকা যেতে বলেন। আমি তার কথা বিশ্বাস করে ঢাকা যাই। কিন্তু তিনি নানা তাল বাহানা করতে থাকেন। একপর্যায়ে তার বাবা অসুস্থ বলে আমার থেকে তড়িঘড়ি বাড়ি যাবে বলে বিদায় নেয়। আমাকে বিদায় দেওয়ার সময় জড়িয়ে ধরে কপালে চুম্বন করে বলেন, ‘আমি আমার বাবাকে দেখে এসে তোমাকে বিয়ে করবো ময়না, আমার অপেক্ষা করিও, আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো বিয়ে ওইটা ভাঙানোর, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।’ পরবর্তীতে জানতে পারি তার বাবা অসুস্থ হয়নি। বরং ১৩ অক্টোবর রবিবার চট্টগ্রামে তিনি অন্য একজনকে বিয়ে করেন যার সাথে তার ৩ মাস আগে থেকেই সম্পর্ক ছিল।

ভুক্তোভুগী শিক্ষার্থী অভিযোগ পত্রে আরো লিখেন, তার বিয়ের সংবাদ পেয়ে আমি মানসিকভাবে অনেক ভেঙে পড়ি। পরে ১৪ তারিখ আমি চট্টগ্রাম চলে যাই এবং তার স্ত্রীর নম্বর সংগ্রহ করে রাত সাড়ে ৯টা থেকে পৌনে ১২টা নাগাদ তার এবং তার স্ত্রীর সাথে আমার দেখা হয় আগ্রাবাদ জাম্বুরী পার্কের সামনে।শেষ দিকে তার স্ত্রী আমার বান্ধবীর সাথে কথা বলছিলেন এমন সময় মোস্তাফিজ আমাকে বলেন, ‘একটু কাছে আসো, তুমি কি চাও? আমি বললাম আমি তোমাকে চাই’। ওনি বললেন, তুমি আমার বউয়ের কাছে যা যা বলে গেছো এরপর ও আর আমাকে রাখবে না, ও আমাকে ছেড়ে দিলে তুমি আমাকে গ্রহণ করবা তো? আমি বললাম, হ্যাঁ করবো।’সেখান থেকে আসার পর ১৫ অক্টোবর সকাল থেকে আমি মানসিকভাবে খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং তার স্ত্রীকে কল দিয়ে তাকে ছেড়ে দিতে বলি কিন্তু তারা একসাথে বলেন, তারা কেউ কাউকে ছাড়বে না। দুপুর দিকে আমার শারীরিক অবস্থার খুবই অবনতি ঘটে এবং আমাকে চট্টগ্রাম আগ্রাবাদের মা ও শিশু হাসপাতাল ভর্তি করায় আমার বান্ধবীর পরিবার। সেখানে আমার পরিবার আসে এবং আমাকে ১৬ তারিখ ডিসচার্জ করা হয় কিন্তু বাসায় আসার পর অবস্থা আরও অবনতি হয়।

উল্লেখ্য, নারী শিক্ষার্থীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই ঘটনায় গত বছরের ৩০ অক্টোবর অভিযুক্ত শিক্ষক এইচ. এম. মোস্তাফিজুর রহমানকে সকল প্রকার দায়িত্ব থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরবর্তীতে গত ৬ ফেব্রুয়ারি চাকুরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।  

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১২/০২/২০২৫


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.