পিরোজপুরঃ পিরোজপুরের নাজিরপুরে বিনা অনুমতিতে মাদরাসার সরকারি বই বিক্রির সময় দপ্তরিকে আটক করেছেন স্থানীয়রা। শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) সকালে মাদরাসা মাঠে স্থানীয় জনতার সামনে জব্দকৃত বইসহ মালামাল পুলিশ হেফজাতে দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার উপজেলার দেউলবাড়ী দোবড়া ইউনিয়নের বিল ডুমুরিয়া নেছারিয়া সিনিয়র (আলিম) বালিকা মাদরাসা থেকে বইগুলো জব্দ করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে , মাদরাসার অধ্যক্ষ মো. একে এম ফজলুল হক বিনা অনুমতিতে বইসহ কিছু মালামাল বিক্রির জন্য চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নুরুল হককে নির্দেশ দেন।
অধ্যক্ষের নির্দেশে দপ্তরি নুরুল হক স্থানীয় এক ভাঙাড়ি ক্রেতা মামুনের কাছে বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) রাত ১০টার দিকে মাদরাসা ১৫০ কেজি বই বিক্রি করে দেন। তার সঙ্গে টিউবওয়েলের মাথা, ব্রিজের এঙ্গেলও বিক্রি করেন।
জানা যায়, ওই পুরাতন বইয়ের সঙ্গে ২৫ সালের নতুন বইও আছে। পুরাতন বইয়ের মধ্যে ২১, ২২, ২৩, ২৪ সালের বইয়ের বান্ডিল এখনো খোলা হয়নি।
স্থানীয়দের অভিযোগ চাহিদার চেয়েও বেশি বই সংগ্রহ থাকলেও ওই অধ্যক্ষ শিক্ষার্থীদের কোনো বই দিতেন না। রাতে বই বিক্রি করতে দেখা নান্না মিয়া বলেন, রাত ১০টার দিকে সুপারের কথা বলে বই বিক্রি করেছেন মাদ্রসার দপ্তরি নুরুল হক।
মাদরাসার দপ্তরি নুরুল হক বলেন, প্রিন্সিপাল হুজুর দরদাম করেছে। আমাকে বলেছে মাইপা দিতে।
দুটি চাবি রুমের একটা শরীফ ও আর একটা অফিস সহকারীর কাছে। শরিফ ভাই আসতে দেরি হওয়ায় আমি মাদরাসার চাবি এনে বই বের করে দিই। বই, খাতা, সাদা কাগজ, লোহা ২৫ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি করি।
মাদরাসার অধ্যক্ষ মো. একে এম ফজলুল হক জানান, বইওগুলো পুরান, কিছু বন্যায় ভিজে গেছে। এর মধ্যে কিছু রয়েছে শিক্ষার্থীদের ফেরত দেওয়া এবং পরীক্ষার খাতাগুলো বিক্রির জন্য বলেছি। এ বছরের অল্প কয়ডা বই পাইছি সেগুলো সব প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে। তারপর কি হইছে আমি বলতে পারি না। পরে থাকা টিওবয়েল বিক্রির জন্য বলেছি। ২৫ সালের অল্প কয়ডা বই পাইছি, এটা বিক্রির ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। ইউএনও স্যার, মাধ্যমিক অফিসারের সঙ্গে কথা বলেছি, স্যার আমি অনুমতি ছাড়া বই বিক্রি করেছি আমাকে ক্ষমা করে দেনে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মাহিদুল ইসলাম বলেন, এ বিষয় সকালে জানতে পেরে মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে ফোন দেই। অধ্যক্ষ বলেন পুরান খাতাপত্র, একটা কলের মাথা, কয়টা পুরান বই। এসময় আমি তাকে বলি আপনি সরকারি কোনো বই বিক্রি করতে পারেন না। আপনার যদি অতিরিক্ত বই থাকে সেটা আপনি উপজেলায় জমা দিবেন। যদি বিক্রি করতে চান তাহলে কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়ে বিক্রি করতে হবে। বিক্রি সকল টাকা সরকারি কোষাগরে জমা দিতে হবে। না দিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বই ক্রেতা মামুন বলেন, প্রিন্সিপাল হুজুর আমাকে ফোন দিছে। বলে আপনি ভাঙারির ব্যবসা করেন, আমি বলছি করি। আমাগো (অধ্যক্ষ) কিছু পুরান বই আছে নিলে চারটা দিকে আসবেন। ১২- ১৪ কেজি মাল হবে। পাচঁটি কল কিনছি ৫০ টাকা কেজি ধরে। মোট দাম হয়েছে ২৫ হাজার ৩০০ টাকা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরুপ রতন সিংহ জানান, অনুমতি ছাড়া পাঠ্যপুস্তকসহ কিছু মালামাল বিক্রির অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি তদন্ত করার জন্য থানা পুলিশকে বলেছি। থানা পুলিশ সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।
নাজিরপুর থানার ওসি মো. মাহমুদ আল ফরিদ ভূঁইয়া বলেন, এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রীয়াধীন।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০১/০২/২০২৫
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.