হবিগঞ্জঃ হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার গনেশপুরে আলহাজ্ব মোজাফফর উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ৩০ লাখেরও বেশি টাকা আত্মসাৎ করাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শফিকুল ইসলাম ২০১৫ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে বিদ্যালয়ে যোগ দিয়েই ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পাইকপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান এবং আওয়ামী লীগ নেতা ওয়াহেদ আলীর মদদে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হন। সকল শিক্ষকের স্বাক্ষর জাল করে তারা ২০২২ সালের ৩ অক্টোবর তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি গঠন করেন।
শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা তা জেনে ক্ষুব্ধ। কিন্তু এত অভিযোগের পরও ওই শিক্ষককে অপসারণ না করায় ফুঁসে উঠেছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
১১ আগস্ট বিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এতে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দেরীতে কর্মস্থলে আসা, নিয়োগ বাণিজ্য, অবৈধ কমিটি গঠন, উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের থেকে চাঁদা আদায়, ফরম পূরণ ও রেজিস্ট্রেশনের সময় অতিরিক্ত টাকা আদায়, ছাত্রীদের উত্যক্ত করা এবং ১০ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে বিয়ে করার অভিযোগ আনা হয়। তৎকালীন ইউএনও আয়েশা আক্তার অভিযোগগুলো তদন্তের জন্য উপজেলা সহকারি কমিশনারকে (ভূমি) আহবায়ক করে ৫ সদস্যের কমিটি করে দেন।
তদন্ত কমিটি ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অবৈধ ম্যানেজিং কমিটি গঠন, নিয়মের বাইরে গিয়ে খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ ও কর্মস্থলে দেরীতে আসার প্রমাণ পেয়েছে জানিয়ে ১১ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন দাখিল করে।
এছাড়া উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা কান্তি ভূষণ গুপ্তের নেতৃত্বে একটি অডিট কমিটি ১০ নভেম্বর দেওয়া প্রতিবেদনে জানায়, প্রধান শিক্ষক মোঃ শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ৩০ লাখ ১৩ হাজার ১৩ টাকা আত্মসাৎসহ নানা অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ নভেম্বর শিক্ষকরা তার অপসারণ চেয়ে ইউএনও ও সভাপতি বরাবর আরেক দফা আবেদন করেন।
কিন্তু তৎকালীন ইউএনও আয়েশা আক্তার তাকে অপসারণ না করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ৩০ নভেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর পত্র প্রেরণ করেন। ফলে শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
আব্দুর রউফ নামে এক অভিভাবক বলেন, দুর্নীতিগ্রস্ত প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়ায় আমাকে সাইবার মামলার আসামী করা হয়েছে। তিনি দুর্নীতি পরায়ণ হওয়ায় অভিভাবকরা এ বিদ্যালয়ে তাদের ছেলেমেয়েদের ভর্তি করতেও আগ্রহ হারিয়েছেন। এতে শিক্ষার্থী কমেছে, বিদ্যালয়ের ফলাফলও খারাপ হচ্ছে।
যোগাযোগ করা হলে বর্তমান ইউএনও মোঃ রবিন মিয়া জানান, তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের আদেশের অপেক্ষায় রয়েছেন। আর মহাপরিচালক প্রফেসর এবিএম রেজাউল করীম জানিয়েছেন, তিনি এ ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দ্রুত নির্দেশনা দিবেন। অভিযোগ প্রসঙ্গে বক্তব্য নিতে যোগাযোগ করলে প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম মন্তব্য করতে অপারগতা জানান।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০৫/০১/২০২৫
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.