এইমাত্র পাওয়া
বামে প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর কবির সরকার, মাঝে সবুজ মিয়া ও ডানে নুরুল ইসলাম। ছবিঃ সংগৃহীত

পীরগাছায় সেই প্রধান শিক্ষককে বাঁচাতে পতিত আ’লীগের তদবির

সুভাষ বিশ্বাস নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রংপুর জেলার পীরগাছা নটাবাড়ী দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক মো: জাহাঙ্গীর কবির সরকারের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম এবং দুর্নীতির তদন্ত চলছে। ২৩ বছর কর্মরত নৈশ প্রহরী নুরুল ইসলাম কে মারধর করে বিদ্যালয় থেকে বের করে দিয়ে একই পদে অবৈধভাবে অর্থের বিনিময়ে মোঃ সবুজ মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে নিয়োগ প্রদান ও এমপিওভুক্ত করা হয়। বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগী নুরুল ইসলাম মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে একটি অভিযোগ প্রদান করেন। গত ২১ অক্টোবর ২০২৪ ইং তারিখে মাউশির শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন স্বাক্ষরিত চিঠিতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্বভার প্রদান করেন। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ২১ নভেম্বর ২০২৪ ভুক্তভোগী এবং অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর কবির এর নিকট থেকে সকল কাগজপত্র গ্রহণ করে তদন্তকার্যক্রম সম্পাদন করা হলেও এখনও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়নি।

এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসে খোঁজ নিতে গেলে জানা যায়। তদন্ত প্রতিবেদন জমাদান বিলম্বিত করতে প্রধান শিক্ষক বিভিন্ন প্রভাবশালীর মাধ্যমে তদবির করছে। এছাড়াও শিক্ষাবার্তা’র প্রতিবেদককে প্রভাবিত করতে বিভিন্ন উপায়ে চেষ্টা চালাচ্ছেন। 

এর আগে গত ২৬ অক্টোবর ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে পীরগাছায় প্রধান শিক্ষকের চরম জালিয়াতি: ২৩ বছর ধরে থাকা নৈশ প্রহরী বদলে নতুন নিয়োগ” শিরোনামে এবং গত ২৪ নভেম্বর ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে ‘পীরগাছার সেই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত করলো শিক্ষা অফিস‘ শিরোনামে শিক্ষাবার্তা’য় সংবাদ প্রকাশিত হয়। শিক্ষাবার্তা’য় সংবাদ প্রকাশের পরে নড়েচড়ে বসে শিক্ষা প্রশাসন, গতি বাড়ে তদন্ত কার্যক্রমের। 

জেলা শিক্ষা অফিসের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ওই এলাকার প্রাক্তন এমপি পতিত আওয়ামী সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুন্সি কারাগারে আটক থাকলেও তার দোসর-রা তদন্ত প্রতিবেদন প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর কবিরের পক্ষে নিয়ে তদন্তকার্য প্রভাবিত ও বিলম্বিত করতে শিক্ষা প্রশাসনকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করছে। বিদ্যালয়টি রংপুর ৪ আসনের অন্তর্ভুক্ত। এই আসনের সাংসদ ছিলেন পলাতক স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সি।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর কবির বলেন, তদন্ত চলছে আমার কিছু বলার নেই।

টিপু মুন্সির আশীর্বাদ পুষ্ঠ এই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীসহ, ১২ জন নিয়মিত শিক্ষকের মধ্যে ১০ জন শিক্ষক এবং অভিভাবকদের পৃথক পৃথক অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে একটি তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্ত কমিটি ২৮ শে নভেম্বর ২০২৪ তারিখে অভিযোগকারী এবং অভিযুক্তদের উপস্থিতিতে তদন্ত কার্য সম্পাদন করেন। অদ্যবধি ওই তদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করা হয়নি।

এদিকে, প্রধান শিক্ষক গত ১০ই ডিসেম্বর বহিরাগত লোকজনদের নিয়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে এবং প্রধান শিক্ষকের উপস্থিতিতে তার শ্যালক মোঃ সোহাগ মিয়া এক শিক্ষার্থীকে বেধরক মারধর করলে সকল শিক্ষার্থীরা অভিন্ন প্রশ্নপত্রে অনুষ্ঠিত পরীক্ষা বর্জন করে বিদ্যালয়ে মাঠে অবস্থান নেন। শিক্ষার্থীরা ৯৯৯ ফোন করে পুলিশের সহযোগিতা চায় এবং শিক্ষকদের একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানালে তৎক্ষণাৎ পুলিশ এবং ইউএনও এর নির্দেশে ওই এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিদ্যালয় উপস্থিত হয়। অতঃপর পুলিশ এবং চেয়ারম্যানের মধ্যস্থতায় উক্ত মারধরের ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিয়ে শিক্ষার্থীদের মাত্র ত্রিশ মিনিট পরীক্ষা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হক সুমনের নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান, তদন্ত প্রভাবিত করতে কে না চায় কিন্তু তদন্ত তদন্তের মতোই হবে নিরপেক্ষ।

রংপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এনায়েত হোসেন শিক্ষাবার্তা ডটকমকে বলেন, তদন্ত সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে হবে এতে কোন সন্দেহ নেই । আমরা তদন্ত প্রতিবেদন তৈরির কাজ চলমান রয়েছে দ্রুত জমা দেওয়া হবে।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১২/১২/২০২৪


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.