এইমাত্র পাওয়া

শিক্ষার্থী সংকট তবুও নতুন ভবন

নিজস্ব প্রতিবেদক।।১৯৯৬ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের পড়াশোনার জন্য প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ইবি ল্যাবরেটরি স্কুল। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এর পেছনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রতি বছর মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করতে প্রতি বছর প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে। ব্যয়ের পরিমাণ বছরপ্রতি ৫% করে বৃদ্ধি পায়। এর মধ্যে ইউজিসি থেকে মাত্র ২০ লাখ টাকা দেওয়া হয়। বাকি ১ কোটি ১০ লাখ টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন খাত থেকে অনুদান দেওয়া হচ্ছে। মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করলেও দিনশেষে প্রত্যাশিত ফলাফল দিতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি।

প্রতিষ্ঠানটির মান, শিক্ষকদের দক্ষতা ও একাডেমিক শিডিউল নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। এ কারণে এতে ভর্তি হচ্ছে না মেধাবী শিক্ষার্থীরা। এমনকি কমছে প্রয়োজনের তুলনায় শিক্ষার্থীর সংখ্যাও।

এদিকে এমন দুর্দশার মধ্যে ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠানটিতে কলেজ পর্যায়ের কোনো শিক্ষক ছাড়াই কলেজ শাখা চালু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুনুর রশীদ। যা প্রতিষ্ঠানটির সংকটকে আরও দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। স্কুল পর্যায়ের শিক্ষকরাই পরিচালনা করছেন কলেজের শ্রেণি কার্যক্রম।

ফলে বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফলে নেমে এসেছে ধস। এ বছরের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ১৪ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে মাত্র ৩ জন। এর আগের বছর ১১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ৬ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। অপরদিকে মাধ্যমিকেও বিগত চার বছরে শতভাগ পাস করার রেকর্ড নেই। এর পেছনে মোটা অঙ্কের টাকা খরচকে ভস্মে ঘি ঢালার সঙ্গে তুলনা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের (আইআইইআর) দ্বারা পরিচালিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটির দৈন্যদশা শুরু হয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী খুঁজে পাচ্ছে না প্রতিষ্ঠানটি।

৫৫০ জন শিক্ষার্থী থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে এতে ৩৫০ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে। এদের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে মাত্র ৫০ জন এবং একাদশ শ্রেণিতে ১৫০ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত থাকার কথা থাকলেও রয়েছে মাত্র ২০ জন। শিক্ষার্থী সংকট ও ফলাফল ধসের কারণে আগামীতে কলেজ শাখায় নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি নেবে না কর্তৃপক্ষ।

ফলে সম্প্রতি ৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা বাজেটে নির্মিত নতুন ভবনের অনেক রুম খালি পড়ে থাকবে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হলেও প্রতিষ্ঠানটিতে পড়ছে বহিরাগত শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২০০ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী সন্তানদের মাত্র ৭-১০% এতে পড়ছে। বাকিরা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকা ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থী। শিক্ষক-কর্মকর্তারা তাদের সন্তানদের না পড়ানো ও প্রয়োজনের তুলনায় কম শিক্ষার্থী ভর্তির পেছনে প্রতিষ্ঠানের নিম্নমান ও শিক্ষকদের দক্ষতার অভাবকে দায়ী করছেন অনেকেই। শিক্ষার্থী সংকটে জর্জরিত হওয়ার পাশাপাশি এতে রয়েছে শিক্ষক সংকটও।

এই ৩৫০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক রয়েছে মাত্র ১২ জন। এর মধ্যে ২ জন ছুটিতে রয়েছেন। এই স্বল্প সংখ্যক শিক্ষক দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না বলে বরাবরই অভিযোগ করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতি ও ‘ধার দেওয়া’ বন্ধের কারণে মাঝেমধ্যে বেতন নিয়ে বিপত্তিতে পড়তে হয় প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকদের। এ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটিন শিক্ষকরা বেশ কয়েকবার মানববন্ধনও করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক বলেন, স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সহায়ক হিসেবে। যেখানে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সন্তানরা পড়বে। এখন উল্টো প্রতিষ্ঠানটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। না পারা যাচ্ছে ছেড়ে দিতে, না পারা যাচ্ছে চালাতে। এর পেছনে যে টাকা ব্যয় হয় আর যা ফল হয় এতে পানিতে টাকা ফেলা বললেও ভুল হবে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. জালাল উদ্দিন বলেন, দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে যেভাবে জিপিএ ৫-এর ছড়াছড়ি সেখানে এই প্রতিষ্ঠানকে পাস নিয়ে টানাটানি করতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সেখানে শিক্ষকরা তাদের সন্তানদের পড়াতে আগ্রহী হবে না এটা স্বাভাবিক বিষয়। এ ছাড়া এখানের শিক্ষকদের দক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষtক মোজাম্মেল হক বলেন, উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষক ও অন্যান্য সুবিধা ছাড়াই তৎকালীন প্রশাসন কলেজ শাখা চালু করেছে। তখন থেকেই আমরা মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকদের দিয়ে কলেজ শাখা পরিচালনা করছি। যেটি একটি অসম্ভব কাজ।

শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে ২০১০ সালে পরে কোনো শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তাদের অভিযোগ ভিত্তিহীন। যারা অভিযোগ করছেন তারা পারলে প্রমাণ দিক।

শিক্ষাবার্তা /এ/০৭/১২/২০২৪


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.