নিজস্ব প্রতিবেদক।। আজ ১ ডিসেম্বর বিশ্ব এইডস দিবস। চলতি বছর ‘অধিকার নিশ্চিত হলে, এইচআইভি/এইডস যাবে চলে’ প্রতিপাদ্যে দিবসটি পালন করা হচ্ছে।
এইচআইভি ভাইরাস সংক্রমণের রোগ এইডসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৮৮ সাল থেকে সারা বিশ্বে আজকের দিনে দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশেও দিবসটি পালনে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ।
বাংলাদেশে ১৯৮৯ সালে প্রথম এইচআইভি (এইডসের ভাইরাস) পজিটিভ ব্যক্তি শনাক্ত হয়। এরপর থেকে দেশে এইচআইভি-এইডসে আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। গত পাঁচ বছরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এইচআইভি সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে।
এইডস কি? কিভাবে হয়?
এইচআইভি হলো এক ধরনের ভাইরাস যার ইংরেজি নাম হল হিউম্যান ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস। এ ভাইরাস মানুষের শরীরে ঢুকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়, যেটাকে এইডস বলা হয়।
সাধারণত এইচআইভি কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। হাঁচি, কাশি বা থুতুর মাধমে, একই পাত্রে খাবার বা পানি খেলে আক্রান্ত ঝুঁকি নেই। এমনকি আক্রান্তের স্পর্শেও রোগটি ছড়ায় না।
তবে এইচআইভিতে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত গ্রহণ করলে, আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত সুচ-সিরিঞ্জ ব্যবহার করলে, আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে অনিরাপদ যৌন মিলন করলে এইচআইভি ভাইরাস ছড়ায়। এ ছাড়া মা থেকে গর্ভাবস্থায় প্রসবের সময় অথবা বুকের দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে সন্তান আক্রান্ত হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এইচআইভি সংক্রমণের এখনো কোনো কার্যকর চিকিৎসা আবিস্কার হয়নি। তবে জীবনযাপনে সচেতনতা, রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা সুবিধা বৃদ্ধির কারণে বর্তমানে রোগাক্রান্তদের স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
তবে বাংলাদেশে নির্দিষ্ট কিছু জেলায় হাসপাতাল অথবা এনজিও ক্লিনিকে এইচআইভি পরীক্ষা ও সেবা দেওয়া হয়। কিন্তু দেশের সব জেলায় এখনো এই সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।
এইডসের আক্রান্ত নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষ্মা, কুষ্ঠ ও এইডস নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির (টিবি-এল অ্যান্ড এএসপি) তথ্য অনুযায়ী, দেশে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের অক্টোবর অর্থাৎ গত এক বছরে নতুন করে এইডসে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৪৩৮ জন। এ বছর এইডসে মারা গেছেন ১৯৫ জন। এর মধ্যে এবার এইডসে আক্রান্তের সংখ্যা সর্বোচ্চ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ২৭৬। সে অনুযায়ী, চলতি বছর ১৬২ জন রোগী বেড়েছে।
এছাড়া আক্রান্তদের মধ্যে ৪২ শতাংশ সমকামী, ২৪ শতাংশ সাধারণ মানুষ ও ১০ শতাংশ রোহিঙ্গা। এ ছাড়া প্রবাসী শ্রমিক, যৌনকর্মী, মাদকসেবী ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে নতুন এইচআইভি সংক্রমিত রোগীদের একটি বড় অংশ সমকামী। একসময় অভিবাসী কর্মী ও শিরায় মাদক গ্রহণকারীদের মধ্যে বেশি আক্রান্ত পাওয়া গেলেও এবার নতুন আক্রান্তদের মধ্যে সমকামীর হার বেশি।
চলতি বছর নতুনভাবে আক্রান্তদের মধ্যে ৬৩ ভাগেরই বয়স ২৫ থেকে ৪৯ বছর। আর ২১ ভাগের বয়স ২০ থেকে ২৪ বছর। গত বছর এই তরুণ বা ১৯ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের সংখ্যা ছিল ১৬ ভাগ।
চলতি বছর এইডসে আক্রান্তদের মধ্যে ৫৫ শতাংশই বিবাহিত। আর অবিবাহিত রয়েছেন ৪০ শতাংশ। বিধবা বা তালাকপ্রাপ্ত রয়েছেন ৫ শতাংশ।
গত বছর বিবাহিতদের মধ্যে সংক্রমণের হার ছিল ৬০ শতাংশ। আর অবিবাহিতদের মধ্যে তা ছিল ৩১ শতাংশ। গত বছরের মতো এবারও ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে এইচআইভিতে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত বছর এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ২৬৬। এবার এ সংখ্যা ১৯৫। গতবারের তুলনায় মৃত্যুর সংখ্যা কমে গেলেও তা এখনো আশঙ্কাজনক পর্যায়ে আছে বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
শিক্ষাবার্তা /এ/০১/১২/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.