এইমাত্র পাওয়া

টিসিবির লাইনে মধ্যবিত্তরা

নিজস্ব প্রতিবেদক।। মঙ্গলবার দুপুর দেড়টা। রামপুরা বৌবাজার এলাকায় যাচ্ছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্যবাহী গাড়ি। পথ বাকি আধা কিলোমিটার। তখনও পেছনে ছুটছেন ১০ থেকে ১২ জন। যখন গাড়িটি নির্ধারিত জায়গায় থামলো, তখন ক্রেতা জড়ো হলো জনা পঞ্চাশেক।

এরপর লাগলো হুড়াহুড়ি। নিজের লাইন বুঝে পেয়েই বেশিরভাগ ক্রেতার কানে ফোন। তারা পরিচিত অন্যদের ফোন দিচ্ছেন। প্রায় সবার মুখে একই কথা ‘বৌবাজার টিসিবি এসেছে, তাড়াতাড়ি আসো।’

সরেজমিনে দেখা গেলো, লাইনে বেশ কয়েকজনের পোশাক-আশাক বেশ ভালো। মনে হয়নি গরিব মানুষ। এরপর কথা হয় সিরাজুল ইসলাম নামে একজনের সঙ্গে। তিনি পাশের এলাকায় কুঞ্জবনে থাকেন। জানালেন, রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে গাড়ি দেখে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানির কর্মকর্তা। আগে কখনো এভাবে পণ্য কেনেননি।

যেখানে টিসিবির গাড়ি দাঁড়িয়েছে, সেখানেই নবীনগর ফার্নিচার নামে একটি দোকান। ওই দোকানের মালিকও দাঁড়িয়েছেন ওই লাইনে। সঙ্গে কয়েকজন কর্মচারীও এসেছেন পণ্য নিতে।

তখন লাইনে একজন বলেই ফেললো, হাজি সাহেবের তো বাড়িও আছে। তারপরেও টিসিবির পণ্য খেতে হবে! তবে ওই দোকানি তখন কোনো উত্তর দেননি।

এটি টিসিবির বিশেষ সেল। ফ্যামিলি কার্ড ছাড়া এখানে ট্রাকসেলে পণ্য বিক্রি হয়। যে কারণে পণ্যের তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা বেশি। ফলে সবাইকে পণ্য দেওয়া যায় না।- ডিলার হাবিবুর রহমান

শুরুতে যখন টিসিবির গাড়ি এসেছিল, তখন সেখানে প্রত্যেক ক্রেতাকে সিরিয়ালের টোকেন দিয়েছিলেন ওই এলাকার মুদি দোকানি শফিকুল ইসলাম। তিনি প্রায় অধিকাংশ মানুষকে চেনেন। জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, পণ্যের দামের চোটে এখন লাজলজ্জা ফেলে সবাই টিসিবির পণ্য নেয়। এমনকি বড়লোকও খোঁজ পেলে ড্রাইভার-কাজের লোক দিয়ে পণ্য নিয়ে যায়। এ লাইনেও এমন অনেকে আছে।

শফিকুল তখন ১১২ জন পুরুষ ও ১৬৫ জন নারীকে টোকেন দিয়েছেন। এরপর টিসিবির ডিলার চৌধুরী এন্টারপ্রাইজের হাবিবুর রহমান তাদের মধ্যে পণ্য বিক্রি শুরু করেছেন। এরপরও আর কারও পণ্য কেনার সুযোগ ছিল না। টিসিবির ট্রাকের পেছনে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও পণ্য না পেয়ে খালি হাতে ফিরে গেছেন অনেকে।

ডিলার হাবিবুর রহমান বলেন, এটি টিসিবির বিশেষ সেল। ফ্যামিলি কার্ড ছাড়া এখানে ট্রাকসেলে পণ্য বিক্রি হয়। যে কারণে পণ্যের তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা বেশি। ফলে সবাইকে পণ্য দেওয়া যায় না।

টিসিবির সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর ৫০টি স্থানে এভাবে ফ্যামিলি কার্ড ছাড়া বিশেষ ট্রাকসেলে পণ্য বিক্রি করে টিসিবি। প্রতিটি ট্রাকে ৩৫০ জনের জন্য পণ্য থাকে। তবে অধিকাংশ জায়গায়ই এর চেয়ে ১০০ থেকে ১৫০ জন বেশি মানুষ উপস্থিত থাকে। যাদের পণ্য দেওয়া যায় না।

আরেক বিক্রেতা এনামুল বলেন, মারামারিও হয় লাইনের মধ্যে। যে কারণে টোকেন দিয়ে সিরিয়াল দেওয়া হয়। তারপরেও প্রচুর চাপ সামলাতে হয়।

এদিকে এত ভিড়ে সিরিয়ালের শেষের মানুষদের পণ্য পেতে অপেক্ষা করছিলেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। তবে এসব মানুষের অভিযোগ শোনার যেমন কেউ ছিল না, তেমনি কোথায় অভিযোগ করবেন, সেটাও তাদের জানা নেই। আবার অভিযোগ করেও লাভ নেই, কারণ ডিলার ও তাদের প্রতিনিধিরা এ পুরো সময় পণ্য বিক্রিতে হিমশিম খাচ্ছিল। অনেকেই সহযোগিতা করেছে তাদের। আবার এর মধ্যে ওই এলাকার রাস্তায় বড় লাইনের কারণে যানজটও হয়েছে, হর্নের শব্দে মাঝে মধ্যেই কান ঝালাপালা হয়েছে তাদের।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এ/২৮/১১/২০২৪


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.