এইমাত্র পাওয়া

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরেছেন বিদেশী শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক।।বাংলাদেশে অধ্যয়নরত বিদেশী শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সময় নিজ নিজ দেশে ফিরে গিয়েছিলেন। আন্দোলনের কারণে ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং নিরাপত্তাহীনতার কারণেই মূলত

বাংলাদেশে অধ্যয়নরত বিদেশী শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সময় নিজ নিজ দেশে ফিরে গিয়েছিলেন। আন্দোলনের কারণে ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং নিরাপত্তাহীনতার কারণেই মূলত বাংলাদেশ ছাড়েন তারা। কিন্তু দেশের পরিস্থিতি ক্রমে স্বাভাবিক হয়ে আসায় এসব বিদেশী শিক্ষার্থী আবার বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ১ হাজার ৯৫৭ বিদেশী শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। এছাড়া দেশের সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোয় অধ্যয়ন করছেন প্রায় ১০ হাজার বিদেশী শিক্ষার্থী।

বিদেশী শিক্ষার্থীরা বলছেন, বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যয় তুলনামূলক কম। এছাড়া ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে যাতায়াত ব্যবস্থাও ভালো। মূলত এসব কারণে তারা উচ্চ শিক্ষার জন্য বাংলাদেশে আসেন। কিন্তু জুলাইয়ে আন্দোলন শুরুর পর তাদের এবং তাদের পরিবারের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়তে থাকে।

মোহাম্মদ আসিফ (ছদ্মনাম) নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা আন্দোলনের আগে বা পরে কোনো ধরনের সমস্যার মুখে পড়িনি। তবে আন্দোলন চলাকালে কলেজ বন্ধ ঘোষণা করায় এবং ঢাকার পরিস্থিতির কারণে দেশে চলে গিয়েছিলাম। পরে ক্লাস শুরু হলে আবার ফিরে আসি। আমাদের সবকিছু আগের মতো স্বাভাবিকভাবেই চলছে।’

বর্তমানে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোয় ২ হাজার ৭৯০টি আসন এবং সরকারি ৩৭টি মেডিকেল কলেজ ও নয়টি ডেন্টাল কলেজে ২২১টি আসন বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত। সে হিসাবে প্রতি বছর প্রায় তিন হাজার বিদেশী শিক্ষার্থী বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজগুলোয় ভর্তির সুযোগ পান।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী বেসরকারিতে এমবিবিএস কোর্সে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ১ হাজার ৪২৭ জন, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ১ হাজার ৭৩৭, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ১ হাজার ৯৭০ এবং ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রায় দুই হাজারের অধিক এবং ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রায় ১ হাজার ৮০০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হন।

বারডেম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. নাজমা হক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘মেডিকেল কলেজগুলোয় ২০ আগস্ট থেকে ক্লাস শুরু হয়েছে। আমাদের বিদেশী শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করেই আমরা কিছুটা দেরিতে ক্লাস শুরু করেছিলাম। ক্লাস শুরুর পর প্রথম দিন থেকেই আমাদের সব বিদেশী শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিল। তাদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো জটিলতা নেই এবং আমাদের বিদেশী শিক্ষার্থীদের মধ্যেও নিরাপত্তা নিয়ে কোনো উৎকণ্ঠা দেখিনি।’

বাংলাদেশ বেসরকারি মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মতিউর রহমান বলেন, ‘আমাদের সব কলেজের বিদেশী শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন। নিরাপত্তা নিয়ে তারা সন্তুষ্ট।’

ইউজিসির তথ্যানুযায়ী বর্তমানে দেশের ৫৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২৬টিতে ৬৭০ বিদেশী শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। এছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অধ্যয়নরত ১ হাজার ২৮৭ বিদেশী শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল, ভুটান, চীন, নাইজেরিয়া, ফিলিস্তিন, সোমালিয়াসহ ৩৭টি দেশের শিক্ষার্থীরা রয়েছেন। তবে বড় অংশই ভারত ও নেপালের।

ইউজিসির তথ্য অনুযায়ী, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিদেশী শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে মোট ১৯১ জন বিদেশী শিক্ষার্থী রয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়টির ফার্মেসি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের নেপালি শিক্ষার্থী শুবনারায়ণ ইয়াদাভ বণিক বার্তাকে কলেন, ‘আন্দোলনের সময় যদিও অনেক নিরাপত্তার বিষয় ছিল, কিন্তু আমরা কোনো সমস্যার মুখে পড়িনি। হল প্রশাসনের কঠোর অবস্থানে আমরা নিরাপদে ছিলাম। আমিসহ আমাদের অনেক সহপাঠী ক্যাম্পাসের হলেই ছিলাম। শুধু ইন্টারনেট বন্ধ থাকাকালীন কিছুটা সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে পরিবারের সদস্যরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘আন্দোলন পূর্ববর্তী সময় থেকে বর্তমান বাংলাদেশ ভালো হয়েছে; কিন্তু আশানুরূপ হয়নি। তবে বর্তমান বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আশাবাদী হওয়া যায়।’

বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক ড. মো. শরাফত আলী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমরা বিদেশী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে আগে থেকেই সচেতন। বিদেশী শিক্ষার্থীদের ভর্তির পর পরই বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোয় আসন নিশ্চিত করা হয়েছিল। আন্দোলনের সময়ও আমরা তাদের বিষয়ে আন্তরিক ছিলাম। হল বন্ধ ঘোষণা করা হলেও তাদের হল ত্যাগ করতে হয়নি। তাদের জন্য হলে থাকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আন্দোলন-পরবর্তী নিরাপত্তাজনিত কোনো সমস্যা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবশে নিয়ে তারা সন্তুষ্ট।’

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এ/১৬/১১/২০২৪


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.