নিজস্ব প্রতিবেদক।।বিভিন্ন দেশে প্রতিদিন বাড়ছে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেছে, ১৯৯৪-’৯৫ সালে বিশ্বে যতসংখ্যক ডায়াবেটিসরোগী ছিলেন, ত্রিশ বছরের ব্যবধানে বর্তমানে সেই সংখ্যাটি বেড়ে প্রায় দ্বিগুণে পৌঁছেছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিখ্যাত চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেটে প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক গবেষণাপ্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে এসব তথ্য। প্রবন্ধে আরও বলা হয়েছে, ২০২২ সালে বিশ্বজুড়ে যত প্রাপ্তবয়স্ক ডায়াবেটিস রোগী ছিলেন, শতকরা হিসেবে তাদের ১৪ শতাংশের শারীরিক অবস্থা গুরুতর ছিল, অথচ ১৯৯০ সালে ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে গুরুতর অসুস্থদের শতকরা হার ছিল মাত্র ৭ শতাংশ।
বস্তুত, বিশ্বে এর আগে এত অল্পসময়ের মধ্যে ডায়াবেটিসের এমন বিস্তার দেখা যায়নি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডয়াবেটিস রোগীদের সংখ্যা। বর্তমানে পৃথিবীজুড়ে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ৮০ কোটিরও বেশি। ১৯৯০ সালে এই সংখ্যা ছিল ২০ কোটিরও কম।
চিকিৎসাবিজ্ঞানে দুই ধরনের ডায়াবেটিসের উল্লেখ রয়েছে। প্রথমটির নাম টাইপ ১ ডায়াবেটিস। শিশু ও তরুণ বয়সীরা এই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। এটির চিকিৎসা অপেক্ষাকৃত কঠিন, কারণ এই টাইপ ১ ডায়াবেটিসে মূলত তারাই আক্রান্ত হন, যারা দেহের অভ্যন্তরে প্রয়োজনীয় ইনসুলিন উৎপাদনে অক্ষম। এটি একটি জন্মগত ত্রুটি।
ডায়াবেটিসের দ্বিতীয় ধরনটির নাম টাইপ ২। সাধারণত মধ্যবয়সীরা এ ধরনের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। বয়সজনিত কারণে প্রয়োজনীয় ইনসুলিনের নিঃসরণ কমে যাওয়াই টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার প্রধান কারণ।
ল্যানসেটে প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধটির লেখকরা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ডায়াবেটিস রোগের বিস্তার সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ও পরিসংখ্যান যাচাই করেছেন। সেখানে দেখা গেছে যে জাপান, কানাডা, ফ্রান্স, ডেনমার্কসহ বেশিরভাগ উন্নত দেশগুলোতে গত ৩০ বছরে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা হয় স্থিতিশীল রয়েছে, নয়তো হ্রাস পেয়েছে।
অন্যদিকে, একই সময়সীমায় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে রোগটিতে আক্রান্তদের সংখ্যা বেড়েছে ব্যাপক হারে। উদাহারণ হিসেবে বলা যায়, পাকিস্তানের মোট নারীদের এক তৃতীয়াংশই বর্তমানে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ১৯৯০ এবং তার পরবর্তী বছরগুলোতে এই হার ছিল মাত্র ১০ শতাংশ।
গবেষকরা বলেছেন, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের বিস্তারের জন্য প্রধানত দায়ী অস্বাস্থ্যকর খাবারে অভ্যস্ততা এবং শারীরিক পরিশ্রম বা শরীর চর্চার অভাবে সৃষ্ট স্থুলতা। এছাড়া এই ক্যাটাগরিভুক্ত দেশগুলোতে ডায়াবেটিসের চিকিৎসা পরিষেবাও উন্নত নয়।
এবং বর্তমানে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর পরিস্থিতি রীতিমতো উদ্বেগজনক। ২০২২ সালের এক পরিসংখ্যানকে আমলে নিয়ে গবেষকরা বলছেন, বিশ্বে প্রতি ৫ জন ত্রিশোর্ধ্ব টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে তিন জনই চিকিৎসাবঞ্চিত। গবেষকদের মতে, বিশ্বজুড়ে চিকিৎসাবঞ্চিত ডায়াবেটিস রোগীদের সংখ্যা ছিল ৪৪ কোটি ৫০ লাখ।
ভারতের মোট ডায়াবেটিস রোগীদের এক তৃতীয়াংশ চিকিৎসাবঞ্চিত। আফ্রিকার সাব সাহারান অঞ্চলভুক্ত দেশগুলোর ডায়াবেটিস রোগীদের মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশ চিকিৎসা সেবা পান।
লন্ডনের বিখ্যাত ইম্পেরিয়াল কলেজের কয়েকজন বিজ্ঞানী গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন। গবেষকদল ও প্রবন্ধের প্রথম লেখক মাজিদ এজাতি বলেন, “নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বাড়ছে— এটা উদ্বেগজন। তবে আরও বেশি উদ্বেগজনক হলো যথাযথ চিকিৎসা সেবার অভাব।”
“কারণ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা যথাযথ চিকৎসাসেবা না পেলে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত হন এবং একসময় এসব জটিলতা অঙ্গছেদন, হৃদরোগ, কিডনি বিকল এবং অন্ধত্বের মতো গুরুতর শারীরিক বিপর্যয় বয়ে আনে।”
সূত্র : এএফপি
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এ/১৪/১১/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.