এইমাত্র পাওয়া

এক-তৃতীয়াংশ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার যাচ্ছেন না টেক্সটাইল সেক্টরে

গোলাম কিবরিয়া সিয়াম, বুটেক্স প্রতিবেদকঃ ‘টেক্সটাইলে চাকরি করলে কি আর জীবন থাকে! দিনে ১২ ঘন্টা সময় ফ্যাক্টরিতে কাটিয়ে বাড়তি কিছু করার সুযোগ থাকে না। ঘুম-ফ্যাক্টরি, ফ্যাক্টরি-ঘুম এভাবে জীবন চলে যাচ্ছে, মাঝেমধ্যে ঠিকঠাক ঘুমানোর সুযোগ হয় না।’ এমনটা জানালেন একটি টেক্সটাইল প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত বস্ত্র প্রকৌশলী সাকিব। টেক্সটাইল প্রকৌশলে পড়াশোনার পর পরিবারের স্বচ্ছলতার জন্য দেরি না করে যোগদান করেন চাকরিতে।

অফিসে কাজের চাপ এবং কর্মজীবন কেমন উপভোগ করছেন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাজের চাপ অনেক বেশি। সপ্তাহে ছুটি পাই একদিন। মাঝেমধ্যে সে একদিনেও কাজ করতে হয়। সবসময় এক মানসিক চাপ থাকে।

চাকরিজীবী সাকিবের মতো অনেক টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারের সামগ্রিক চিত্র এক। কর্মজীবনে কাজের চাপের জন্য হিমশিম খাচ্ছেন। পাশ করার পর শিক্ষার্থীরা চাকরি হিসেবে টেক্সটাইল সেক্টরে কেমন যাচ্ছেন, টেক্সটাইল সেক্টরে কিছুদিন চাকরি করে আবার অন্যত্র চলে যাওয়া, আবার যারা টেক্সটাইল সেক্টরে চাকরি করছেন তাদের কাজের চাপ কেমন, কর্মজীবন নিয়ে তারা সন্তুষ্ট কিনা, পরিবারকে সময় দিতে পারছেন কিনা, কর্মজীবনের জন্য তারা সন্তুষ্ট কিনা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে গবেষণা করেছেন একদল শিক্ষার্থী।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) ৪৫তম ব্যাচের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী মাহাবুর রহমান, আহসানুজ্জামান রনি, মাহবুব আলম রিয়াজ, অর্জন রায়ের ‘The Impact of Work-Life Balance on Job Satisfaction: A Study of Management-Level Textile Engineers in Bangladesh’s Textile Sector’ শীর্ষক গবেষণায় ফুটে উঠেছে আমাদের দেশে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়াররা কর্মক্ষেত্রে তাদের কাজ ও ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য রাখতে পারছে কিনা এবং কীভাবে তা তাদের চাকরির সন্তুষ্টিকে প্রভাবিত করে।

কর্মক্ষেত্রে একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার তাদের চাকরি নিয়ে সন্তুষ্ট কিনা তা বিভিন্ন ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করে বলে জানা যায় তাদের গবেষণা থেকে। চাকরির সন্তুষ্টিকে যেসব ফ্যাক্টর প্রভাবিত করে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হলো কর্মক্ষেত্রে ফ্লেক্সিবিলিটি। তাছাড়া পরিবার একজন চাকরিজীবীকে কেমন সাপোর্ট দিচ্ছেন, কর্মস্থলের পরিবেশ কেমন, কাজের চাপ কেমন, ক্যারিয়ার অগ্রগতির সুযোগ কেমন এসব বিষয় নির্ভর করছে। যেসব ফ্যাক্টরের প্রভাব রয়েছে এবং এর হার যথাক্রমে: ফ্ল্যাক্সিবিলিটি ২৫.৭৭ ভাগ, পরিবার ও চাকরিরত প্রতিষ্ঠানের সাপোর্ট ২১.৬৫ ভাগ, কাজের পরিবেশ ২০.১০ ভাগ, কাজের চাপ কমানো ১৬.৪৯ ভাগ এবং ক্যারিয়ারে অগ্রগতির সুযোগ ১৫.৯৮ ভাগ।

এ গবেষণা থেকে শিক্ষার্থীরা পান, যে প্রতিষ্ঠানগুলো ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালান্সের প্রতি গুরুত্ব দেয়, সেখানে কর্মীরা কাজে মোটিভেশান পায় এবং চাকরির প্রতি সন্তুষ্টি কাজ করে। এতে প্রতিটি কর্মী কর্মক্ষেত্রে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন এবং ভালোভাবে কাজ চালিয়ে যাবার জন্য উদ্দীপিত হন।

তাছাড়া গবেষকদল তাদের অধ্যয়নরত বিশ্ববিদ্যালয় বুটেক্সের চিত্র ফুটে তোলেন। গ্র‍্যাজুয়েটদের কেমন টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশ করছেন, প্রাইভেট সেক্টর ছেড়ে কেমন শিক্ষার্থী সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করছেন ইত্যাদি তথ্য বের করেন। তারা ২৪৪৭ জন গ্র্যাজুয়েটদের ওপর জরিপ চালান। জরিপে দেখা যায় বুটেক্স থেকে বের হওয়া শিক্ষার্থীদের ৭১% প্রাইভেট সেক্টরে, ১৭% সরকারি চাকরিতে এবং ১.৮৩% গ্র্যাজুয়েট চাকরিতে প্রবেশ করেন নি।

আবার, ৭১ শতাংশ গ্র্যাজুয়েট যে প্রাইভেট সেক্টরে চাকরি করছেন তাদের মধ্যে একাডেমিক পড়াশোনা সম্পর্কিত তথা টেক্সটাইল সম্পর্কিত চাকরিতে আছেন ৭৫ ভাগ এবং টেক্সটাইল খাত নয় এমন প্রাইভেট চাকরিতে আছেন ২৫ ভাগ গ্র‍্যাজুয়েট।

জরিপে দেখা যায়, টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে চাকরি করার প্রবণতা শিক্ষার্থীদের মধ্যে কমছে। তারা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ও সরকারি চাকরির দিকে বেশি ঝুঁকছেন। তাছাড়া অনেকে উদ্দ্যোক্তা হয়েছেন আবার অনেকে দেশের বাইরে পাড়ি জমান। বিদেশে যারা আছেন তাদের কেউ টেক্সটাইল খাতে আবার কেউ টেক্সটাইল বাদে অন্যান্য খাতে গবেষণায় যুক্ত আছেন।

পুরো গবেষণা নিয়ে গবেষকদলের মাহাবুর রহমান বলেন, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের যারা প্রোডাকশন বা মারচেন্ডাইজিংয়ে চাকরি করেন তারা প্রচুর কাজের চাপে থাকেন। জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। অনেকেই তাদের কর্মজীবন নিয়ে হতাশ এবং এই সেক্টরে আসতে অনুজদের নিরুৎসাহিত করছেন। আমাদের গবেষণায় পেয়েছি কীভাবে সামগ্রিকভাবে একজন পেশাজীবীর জীবন এবং কর্মক্ষেত্রের সন্তুষ্টি পারস্পরিক যোগসূত্র রয়েছে এবং প্রভাবিত করছে।

আহসানুজ্জামান রনি বলেন, টেক্সটাইল কারখানার কর্মীদের ভালো থাকা অনেকটা নির্ভর করে ক্রেতারা কী ধরনের নীতি আরোপ করলো। কর্মীর ভালোর জন্য ক্রেতারা বেতন, কর্মঘন্টা, ছুটি সংক্রান্ত বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলার জন্য কারখানাগুলোকে নির্দেশ করেন। যদি তা মেনে না চলেন তাহলে সে কারখানা থেকে পণ্য কেনেন না। ক্রেতার দেওয়া নির্দেশনা মানা-না মানা নির্ভর করে কারখানার মালিক ও উর্ব্ধতন কর্মকর্তাদের উপর। তাঁদের উচিৎ নিজেদের কর্মীদের ভালো রাখার পদক্ষেপ নেওয়া।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১২/১১/২০২৪


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.