এইমাত্র পাওয়া

তবু আমি চামচাই হব এটাই আমার এমবিশন

তানিয়া রহমান।। হিন্দি এবং উর্দু শব্দ “চামচ” থেকে বাংলা ভাষায় চামচা শব্দের উৎপত্তি। তবে, “চামচা” শব্দটি নেতিবাচক অর্থে ব্যবহত হয় সর্বদা। কোন ব্যক্তি অন্যের কাছে সুবিধা পাওয়ার জন্য অতিরিক্ত প্রশংসা করে” এই অর্থে চামচা শব্দটি ব্যবহত হয়। বর্তমান পেক্ষাপটে চামচামি এখন আধুনিক শিল্প। যত চামচামি করা যাবে,ততো বেশী সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা যাবে এটা এখন মুল মন্ত্রে পরিনত। চামচা শব্দটি মূলত তার ব্যবহার এবং সামাজিক প্রসঙ্গের উপরও নির্ভর করে, যা পরে লোকসংস্কৃতিতে বিশেষ একটি মানে ধারণ করেছে।

অপমানজনক অর্থে শব্দটি ব্যবহত হলেও অনেকে এটা শিল্প হিসেবে গ্রহন করেছে। চামচা শব্দটি তাচ্ছিল্য বা ব্যঙ্গার্থে ব্যবহৃত হয়। অতিরিক্ত প্রশংসা বা তেল মারা বোঝাতে ব্যবহৃত হয় এই ধরনের আচরণ সাধারণত অন্য ব্যক্তির সুবিধা নেওয়ার জন্য বা নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে হয়।

 এতে একজন ব্যক্তির আত্মসম্মানহীনতা বা স্বাধীনতা হারানোর ইঙ্গিত থাকে। “চামচামি” সাধারণত কোনো ক্ষমতাশালী বা প্রভাবশালী ব্যক্তির প্রতি অতিরিক্ত আনুগত্য বা প্রশংসা করার মাধ্যমে, সেই ব্যক্তির কাছ থেকে কিছু সুবিধা লাভের উদ্দেশ্যে করা হয়।

যেমন, অনেক সময় কর্মক্ষেত্রে, স্কুল বা সমাজে দেখা যায় যে কিছু মানুষ ক্ষমতাধর বা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সামনে অতিরিক্ত প্রশংসা বা বিনয় প্রদর্শন করে, যাতে তারা কিছু পাওয়া যায়—এমনকি যদি সেটা না হয়ে থাকে তবুও তারা এমন আচরণ করে থাকে।

সমাজে সবসময় শিক্ষকদের সম্মানের চোখে দেখা হয়। এই শিক্ষকরা যখন চামচামি করে তখন সমাজ দুষ্ট চক্রে পরিনত হয়। তাহলে শিক্ষকরা কেন চামচামি করেন—এই প্রশ্নটি বেশ কিছু জটিলতা সমাধান লক্ষ করা  যায়। অনেকে মনে করেন, শিক্ষকদের মধ্যে অনেক সময় পদোন্নতি বা স্বীকৃতি পাওয়ার চেষ্টা থাকে। কিছু শিক্ষক বা শিক্ষিকা যদি মনে করেন যে তারা যদি প্রতিষ্ঠান বা কর্তৃপক্ষের কাছে অতিরিক্ত আনুগত্য বা প্রশংসা প্রকাশ করেন, তাহলে তারা পদোন্নতি বা অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা পেতে পারেন। এ কারণে তারা কখনও কখনও “চামচামি” করেন, যা একটি অপ্রতিষ্ঠিত, অতিরিক্ত প্রশংসা বা অন্যের প্রতি আনুগত্যের মনোভাবের প্রকাশ।

শিক্ষকরা যদি কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তির (যেমন, স্কুলের প্রধান শিক্ষক, শিক্ষাবোর্ডের সদস্য বা অন্য কোনো কর্মকর্তা) নিকট থেকে সুযোগ-সুবিধা বা সমর্থন চান, তবে তারা নিজেদের “চামচামি” করে তুলে ধরতে পারেন। যেমন, বিশেষ কোনো সুবিধা, ছুটির অনুমতি, শ্রেণী নির্ধারণ বা সম্মাননা প্রাপ্তি—এই সব ক্ষেত্রে শিক্ষকরা কর্তৃপক্ষের প্রতি অতিরিক্ত আনুগত্য বা প্রশংসা করতে পারেন।

স্কুল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাধারণত কিছু অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি থাকে, যেখানে শিক্ষকরা একে অপরের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে চায়। এই প্রেক্ষাপটে, কেউ কেউ সহকর্মী বা প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সামনে চামচামি করতে পারে, যাতে তাদের নিজেদের অবস্থান আরও উন্নত হয় বা তারা নিজেদের অবস্থান সুরক্ষিত রাখতে পারে।

কিছু শিক্ষক তার নিজের স্বার্থ বা বৈষয়িক সুবিধা অর্জন করার জন্য বা সহজে কাজ পেতে “চামচামি” করেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো শিক্ষকের কারিকুলাম বা শ্রেণীভাগে পরিবর্তন করা হয়, তবে তাকে সে সুযোগ পেতে প্রশংসা বা আনুগত্য প্রদর্শন করতে হতে পারে।

অন্যদিকে, কিছু শিক্ষক যদি মনে করেন যে তাদের কাজের নিরাপত্তা বা মর্যাদা হুমকির মুখে, তখন তারা অতিরিক্ত প্রশংসা বা আনুগত্যের মাধ্যমে নিজেদের জায়গা সুরক্ষিত করার চেষ্টা করতে পারে। এই ধরনের পরিস্থিতি অনেক সময় শ্রেণীকক্ষে বা প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ঘটে থাকে।

কিছু শিক্ষক, বিশেষত যাদের প্রতিষ্ঠানের সাথে দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক থাকে, তারা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের কাছে প্রিয় হতে চান। তাদের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে ভালো প্রতিক্রিয়া বা কৃতজ্ঞতা পাওয়া অনেক সময় চাকরি ও পেশাগত দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। সেক্ষেত্রে, তারা চামচামি করতে পারে।

কিছু ক্ষেত্রে, শিক্ষকরা জানি না বা বুঝতে পারেন না যে অতিরিক্ত প্রশংসা বা আনুগত্য প্রদর্শন চামচামি হিসেবে ধরা হতে পারে। তারা হয়তো শিষ্টাচার বা সামাজিক সৌজন্য হিসেবে এটি করেন, যা পরে নেতিবাচকভাবে নেয়া হয়।

এই সব কারণের মধ্যে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যে চামচামি করে লাভের চেয়ে ক্ষতি অনেক বেশি। দীর্ঘমেয়াদীভাবে এটি বিশ্বাসের অভাব এবং ব্যক্তিগত মর্যাদাহীনতা তৈরি করতে পারে, যা শিক্ষকের মানসিক শান্তি বা পেশাদারিত্বের প্রতি খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সততা, স্বচ্ছতা এবং পেশাদারিত্বের প্রতি মূল্যবোধ থাকা উচিত, এবং শিক্ষকরা যদি সেই পথ অনুসরণ করেন, তবে চামচামি বা অতিরিক্ত আনুগত্যের দরকার হবে না।

বাংলাদেশ পেক্ষাপটে দেখা যায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চামচামমি করে পদ পদবি গ্রহন করার পর ঐ পদকে ধরে রাখার জন্য চামচামির মাত্রা এতটা সীমানা ছড়িয়ে যায় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মানরে দিকে তার আর নজর থাকে না। দিন রাত জল্পনা-কল্পনা করে তার পদকে ধরে রাখতে। এই পদবি রাখার জন্য এমন কোন  কাজ নাই তিনি বরেন না। এমনও বলতে শোনা যায় যে কোন ভাবে আমি পদে থাকতে হবে তার জন্য আমার যা করার তাই করবো । চামচামি করে আমার পোষ্ট ধরে রাখাই আমার এমবিশান।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এ/০৭/১১/২০২৪


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.