ঢাকাঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তিতে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনি কোটা, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সন্তানদের জন্য পোষ্য কোটা ও খোলায়াড় কোটা বাতিলে আইনি নোটিশ দেয়া হয়েছে।
ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার ছাড়া নোটিশদাতারা হলেন ব্যারিস্টার মাহদী জামান বনি, অ্যাডভোকেট বায়েজীদ হোসাইন, অ্যাডভোকেট শাহেদ সিদ্দিকী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি (প্রশাসন), প্রো-ভিসি (শিক্ষা) ও রেজিস্ট্রারকে ই-মেইলে আজ এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
নোটিশ পাওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে (ক) মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ (খ) ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ১ শতাংশ এবং (গ) শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ বহাল রেখে বাকি, সব কোটা বাতিল করতে বলা হয়েছে। নোটিশ গ্রহীতারা ব্যবস্থা না নিলে সুপ্রিম কোর্টে রিটসহ বিষয়টি নিয়ে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানানে হয়েছে।
নোটিশে আরও বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাঙালি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মকর্তারা সব গণতান্ত্রিক ও অধিকার রক্ষার আন্দোলনে অবদান রেখেছেন। সর্বশেষ ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের কোটা সংস্কার আন্দোলন ও স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতন আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়।
নোটিশে বলা হয়েছে, একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া অবশ্যই মেধার ভিত্তিতে হতে হবে এবং অন্য কোনো মানদণ্ডে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া সাধারণত বৈষম্যমূলক, স্বেচ্ছাচারী এবং অযৌক্তিক, কোনো বৈধ রাষ্ট্রীয় উদ্দেশ্যের সঙ্গে কোনো যৌক্তিক সম্পর্ক নেই। দেশের সর্বোচ্চ আদালত মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের সন্তানদের জন্য সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে মাত্র ৫ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিপ্রক্রিয়ার ক্ষেত্রেও এ রায় দিতে হবে। মুক্তিযোদ্ধার নাতি, নাতনি কোটায় ভর্তির সুযোগ সৃষ্টি করা সংবিধান ও সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরিপন্থি।
নোটিশে বলা হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ২৮ (০৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নারী বা শিশুদের অনুকূলে বা নাগরিকদের যেকোনো অনগ্রসর অংশের উন্নতির জন্য বিশেষ বিধান করা যেতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীদের ছেলে-মেয়েরা সেই মানদণ্ড পূরণ না করা। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে-মেয়ে, শিক্ষক ও কর্মচারীদের ভর্তি প্রক্রিয়ায় ওয়ার্ড/পোষ্য কোটায় ১ শতাংশ সংরক্ষণ করা বৈষম্যমূলক, স্বেচ্ছাচারী ও অযৌক্তিক, যার সঙ্গে কোনো যৌক্তিক সম্পর্ক নেই। খেলোয়াড়দের কোটায় ভর্তিতে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে জানিয়ে নোটিশে বলা হয়, এ ছাড়া খেলোয়াড়দের কোটা সংবিধানে সংজ্ঞায়িত পশ্চাৎপদ বিভাগের অধীনে পড়ে না। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিপ্রক্রিয়ায় ক্রীড়াবিদদের জন্য বিশেষ কোটাও সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরিপন্থি। এ ছাড়া খেলোয়াড় কোটায় স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির সুযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সোলায়ম তুষার বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনি কোটায় ঢাকা বিশ্ববদ্যালয়ের ভর্তিতে সুযোগ রাখাটা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের পরিপন্থি। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য পোষ্য কোটা সংরক্ষণ রাখাটা সরাসরি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আর খোলোয়াড় কোটায় স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির সুযোগ রয়েছে। এ জন্য এসব কোটা বাতিলের জন্য নোটিশ দেয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা না নিলে হাইকোর্টে রিট করাসহ অন্যান্য আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরুটা ছিল কোটা সংস্কার ঘিরে। শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান-নাতি-নাতনিদের জন্য বরাদ্দ করা ৩০ শতাংশ কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন। জুলাইতে শুরু হওয়া সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আগস্টের ৫ তারিখে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অথচ অভ্যুত্থানের তিন মাস না পেরোতেই মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনি কোটা বহাল রেখে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এই ভর্তি প্রক্রিয়া জুলাই বিপ্লবের চেতনাবিরোধী বলে মনে করছেন অনেকে। গতকাল ৪ নভেম্বর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তিতে আবেদন শুরু হয়েছে।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০৫/১১/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.