গাইবান্ধাঃ একটু ভেবে দেখুন তো? শেষ কবে মা কিংবা বাবাকে আলিঙ্গন করেছেন বা বলেছেন তোমায় বড্ড ভালোবাসি বাবা, তোমায় অনেক ভালোবাসি মা। দিন যত যায় আমাদের অনেকের পরিবারের সাথে দূরত্ব বাড়ে। অনেক সময় মনের অনেক অব্যক্ত কথা ব্যক্ত করতে পারি না আমাদের পরিবারের কাছে। আমরা যে কতটা তাদের ভালোবাসা তা হয়তো বলে ওঠা হয় না নানা কারণে।
ই-মেইলে কিংবা ম্যাসেন্জারের বার্তা আদান-প্রদানের এ যুগে এসে হাতে লেখা চিঠির প্রচলন একেবারে নেই বললেই চলে। অনেকে যেমন না লিখতে লিখতে ভুলে গেছেন চিঠি লেখার কথা আবার নতুন প্রজন্ম তো এর অনুভূতি বুঝবে না।
চিঠিই ছিল, একসময় যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। যা একসময় মানুষের মনের ভাব অনুভূতি আদানপ্রদানে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। মানুষ দিনের পর দিন অপেক্ষা করতো কখন আসবে প্রিয়জনের হাতে লেখা চিঠি। তবে আস্তে আস্তে দিন বদলাতে থাকল, চিঠির জায়গা নিয়ে নিলো ক্ষুদে-বার্তা, পিয়ন এর কাজ নিয়ে নিল ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ। হারিয়ে গেছে পিয়নের প্রতীক্ষায় বসে থাকার দিনগুলো। এখন চিঠি লেখা শুধু পরীক্ষার খাতাতেই সীমাবদ্ধ। হারিয়ে যাওয়া চিঠির ঐতিহ্য, অনুভূতি, চিঠির ও যে একটা গন্ধ আছে, আছে তৃপ্তি নতুন প্রজন্ম বোঝানোয় প্রয়াসে গোবিন্দগঞ্জের একদল স্বপ্নবাজ তরুণ-তরুণী নিয়ে গড়ে ওঠা গোবিন্দগঞ্জ ইনফরমেশন সেন্টার উদ্যোগ নেয় হয় চিঠি উৎসব ২০২৪।
প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন মো. রাসেল মিয়া, উপজেলা নির্বাহী আফিসার। বিশেষ অতিথি ছিলেন মো. গোলাম মোস্তফা, কমিশনার, গাইবান্ধা জেলা রোভার চিঠি উৎসব উপলক্ষে গোবিন্দগঞ্জের ২২ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডাকবাক্স বসানো হয়। কুরিয়ার ও চিঠির ডাকবাক্স সর্বমোট ২৭৮ টি চিঠি আসে। বিচারকদের বিচার বিশ্লেষণ শেষে সেরা ১২জন চিঠি লেখক/লেখিকা নির্বাচিত করা হয়। চিঠি উৎসবে বিচারক হিসেবে ছিলেন মো. শিহাব উদ্দিন (সিনিয়র রিপোর্টার, দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস), আবির আহমেদ (রিপোর্টার, এনটিভি), আফরিদা ইফরাত (সাব-এডিটর, দৈনিক ইত্তেফাক) এবং তাহসিন আহমেদ (ডিজিটাল কনটেন্ট সহকারী, প্রথম আলো)। ১৫ই সেপ্টেম্বর চিঠি উৎসব ফলাফলও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
মো রাসেল মিয়া শিক্ষার্থীদের বলেন, তোমরা যে চিঠি লিখে মনের ভাব প্রকাশ করছো তার সুযোগ এখন আমার নেই। চিঠি পড়ার/লেখার যে আনন্দ তা ভাষার প্রকাশ করার মতো না। অন্য রকম ভালে লাগা থাকে। ডিজিটাল বার্তায় দ্রুততা থাকলেও চিঠির মধ্যে যে আন্তরিকতা ও নিবিড়তা থাকে, তা এক অন্যরকম সম্পর্কের সৃষ্টি করে।
মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, জিআইসি করোনাকালীন সময় থেকে গোবিন্দগঞ্জে যাত্রা শুরু করে। দিন দিন তাদের কাজের যেমন সৃজনশীলতা তাতে আমি বিশ্বাস করি জিআইসি সামাজিক সংগঠনের একটি উজ্জ্বল রোল মডেল হবে। উৎসব আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, কাগজের ওপর লেখা শব্দগুলোর মধ্যে এখনো একটি অনন্য ক্ষমতা রয়েছে, যা যুগের পর যুগ ধরে আবেগকে ধারণ করতে পারে।
ছোটন নামে শিক্ষার্থী জানান, আমি আসলে কথা বলতে পারছি না। শুধু বলতে চাই এমন অনুষ্ঠান যেন আগামীতে ও আয়োজন করা হয়। বড্ড ভালোবাসি মা। বড্ড ভালোবাসি বাবা।
অনুষ্ঠান নিয়ে অভিভাবকদের মত প্রকাশ, শিক্ষক/শিক্ষিকাদের অনুভূতি প্রকাশ, মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে চিঠি উৎসব ২০২৪ শেষ হয়।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১৭/০৯/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.