ঢাকাঃ গত ৩ সেপ্টেম্বর সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) দেওয়া অ্যাডহক চিকিৎসকদের প্রমার্জনার সুপারিশ বাতিলের দাবি জানিয়েছে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটি বলেছে, পিএসসির অ্যাডহকদের অবৈধ প্রমার্জনা প্রদান করার পক্ষে সকল প্রকার সুপারিশকৃত প্রজ্ঞাপন বাতিল করতে হবে। এসব অনিয়মের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্তসাপেক্ষে বিধি মোতাবেক কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
এই দাবিতে মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে বিকেল পর্যন্ত পিএসসি ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেন বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের চিকিৎসকরা। এ সময় তারা অ্যাডহক চিকিৎসকদের নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়নের নানা অসঙ্গতি ও অনিয়ম তুলে ধরেন। চিকিৎসকরা জানান, একই দাবিতে বুধবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন তারা।
কর্মসূচির মুখপাত্র ও সংগঠনের শেরে বাংলা নগর ইউনিটের সদস্য সচিব ডা. নিহার রঞ্জন দাস বলেন, গত ৩ সেপ্টেম্বর পিএসসি যে খসড়া প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, তাতে দেখা গেছে বিসিএস রিক্রুটমেন্ট রুল ১৯৮১ এর রুল-৮ এর সাব রুল-১ এ তারা ক্লজ ‘কে’ ও ক্লজ ‘আই’ সংযোজন করার সিদ্ধান্ত দিয়েছে। কি কারণে তারা এত নতুন করে ক্লজ সংযুক্ত করে সরকারি চাকরির বিধি নতুন করে তৈরি করে অ্যাডহকদের আরও অবৈধ সুবিধা দিতে চাচ্ছে তা আমাদের বোধগম্য নয়। এসব কারণে আমরা ৩৫ হাজার চিকিৎসা ক্যাডার কর্মকর্তা ক্ষুব্ধ।
এই মুখপাত্র আরও বলেন, বার বার সতর্ক করার পরও যদি এই সরকারের সময়ে বিগত সরকারের অসমাপ্ত অবৈধ কাজগুলোকে বৈধতা দেওয়া হয় তাহলে ৩৫ হাজার ক্যাডার চিকিৎসক কোনোভাবেই তা মানবে না এবং ফলাফল সম্পর্কে কোনো দায়দায়িত্ব ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন নিবে না।
কর্মসূচি চলাকালে গণমাধ্যমকে সংগঠনের সদস্য সচিব ডা. উম্মে তানিয়া নাসরিন স্বাক্ষরিত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, বিগত কিছু বছর যাবত সরকারি চাকরিবিধির গুরুতর লঙ্ঘন ঘটিয়ে ক্যাডার পদসমূহে ভিন্ন নিয়োগবিধির আওতায় নিয়োগপ্রাপ্ত অ্যাডহক ও প্রকল্প কর্মকর্তাদের পদায়ন ও পদোন্নতি শুরু করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কিছু দুষ্কৃতিকারী কর্মকর্তা। চাকরিবিধির গুরুতর লঙ্ঘন হওয়ায় আমরা লিখিতভাবে আমাদের আপত্তি জানিয়ে প্রক্রিয়াগতভাবে এগোতে থাকি। কিন্তু উক্ত শাখাসমূহের কর্মকর্তাদের অনিয়ম করা হতে থামানো যায়নি, উল্টো এই অন্যায়ের মাত্রা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। অদ্যবধি প্রায় সহস্রাধিক অবৈধ পদোন্নতি, জনপ্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করে প্রায় ৫ শতাধিক অবৈধ পদায়ন, ক্যাডার কর্মকর্তাকে অ্যাডহকদের অধীনস্থ করা ইত্যাদি চরম আকার ধারণ করে।
এসব অনিয়ম বন্ধে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের চিকিৎসকরা সুপ্রিম কোর্টে ২০২২ সালে মামলা দাখিল করেন বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, মামলায় রুল জারি করা থাকলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের উক্ত চিহ্নিত অনিয়মকারী শাখার কর্মকর্তাগণ অ্যাডহক ও প্রকল্প কর্মকর্তাদের পক্ষে অবৈধ ও বিধিবহির্ভূত পদোন্নতি আদেশ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পদায়ন শাখায় পুনরায় অবৈধ পদায়ন আদেশ জারি করে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এসব অনিয়মের মাঝেই ২০২৩ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পরপর পাঠানো মোট ৩টি পত্রে হতবাক হন চিকিৎসকরা। অসংখ্য মিথ্যা তথ্য, তথ্য গোপন ও ছল চাতুরীর আশ্রয় নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পার-২ শাখার তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অ্যাডহক ও প্রকল্প তথা ২০২২ সালে এনক্যাডার হওয়া কর্মকর্তাদের পক্ষে চাকরিতে পদোন্নতির জন্য সকল ধরনের পরীক্ষা ও প্রশিক্ষণ মওকুফ করে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে পত্র পাঠায় এবং এসব পত্রে তাদের ইতোপূর্বে দেয়া বিতর্কিত পদোন্নতিসমূহকে অবৈধ বলে স্বীকার করে নেয়। মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব পত্রে তাদেরই করা অনিয়মসমূহ স্বীকার করে নেয়া নজীরবিহীন।
সেখানে বলা হয়, যদি অ্যাডহক এনক্যাডার কর্মকর্তাদের চাকরিতে স্থায়ীকরণের জন্য ক্যাডারের শিক্ষানবিশকাল, বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ, বিভাগীয় পরীক্ষা এবং পদোন্নতির জন্য সিনিয়র স্কেল পরীক্ষা হতে প্রমার্জনা না দেওয়া হয় তাহলে ইতোপূর্বে প্রদেয় সকল পদোন্নতি প্রশ্নের সম্মুখীন হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২০২৩ সালে প্রথম দুইবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় অসম্মতি জানিয়ে প্রতিউত্তর দিলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তৃতীয়বারের অনুরোধে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিসিএস নিয়োগবিধি সংশোধনের প্রস্তাবটি সচিব কমিটিতে পাঠায়। সেখানে এনক্যাডার হওয়া কর্মকর্তাদের বাধ্যতামূলক বিভাগীয় পরীক্ষা, বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ, ক্যাডারে বাধ্যতামূলক ২ বছর শিক্ষানবীশকাল ও ক্যাডারের ২ বছরের সন্তোষজনক চাকরিকাল প্রমার্জনার পরে পুনরায় তাদের পদোন্নতিতে সিনিয়র স্কেল পরীক্ষা থেকেও প্রমার্জনার অনুরোধ জানানো হয়।
এ ঘটনায় বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের চিকিৎসকরা বাকরুদ্ধ জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চাকরিতে অনিয়মকারীকে শাস্তি দেয়া হয়। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এসব কর্মকর্তা নিজেই দোষ স্বীকার করে উল্টো অতীতের অনিয়মের জন্য প্রমার্জনা চাইছেন। এটা কেমন আবদার? যে কোনো ধরনের সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য এভাবে এতোগুলো প্রমার্জনার ফাইল সৃষ্টি হওয়া নজীরবিহীন এবং এ ধরনের ন্যাক্কারজনক অনিয়মের ঘটনা বাংলাদেশের প্রশাসন জগতের ইতিহাসে এই প্রথম।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘একদল চাকরিজীবী যারা তাদেরই নিয়োগবিধির শর্ত পরীক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ না করেই স্থায়ী হয়েছিল, যারা তাদের সমগ্র চাকরিজীবনে কখনো কোনো পরীক্ষা বা প্রশিক্ষণ নেয়নি, যারা বিসিএসে অকৃতকার্য হয়েও এনক্যাডার হয়েছে, এনক্যাডারের পরে পুনরায় বিসিএস ক্যাডারের ৫টি শর্ত হতে কেন মওকুফ পাবে এবং বিসিএস পাশকৃতদের চেয়ে উপরে স্থান পাবে তা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংগঠনের পক্ষ থেকে বিগত সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রী ও স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী, মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ ও সরকারি কর্মকমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সকল অনিয়ম লিপিবদ্ধ করে জমা দেওয়া হয়েছে। এসব প্রমাণ থাকার পরও প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটি অ্যাডহক চিকিৎসকদের প্রমার্জনার ফাইলে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। ফাইলটি পিএসসির অনুমোদনের পর বর্তমানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গেজেটের অপেক্ষারত, যা সরকারি চাকরি বিধি লংঘনের আরও একটি ইতিহাস সৃষ্টির পথে। এগুলো স্বাস্থ্য ক্যাডারের সাথে চরমতম অন্যায়।
বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের চিকিৎসকরা সকল ক্যাডারকে তাদের সাথে হওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। তারা বলেন, ক্যাডারকে অ্যাডহক ( ননক্যাডার) কর্মকর্তাদের অধীনস্থ করার রেওয়াজ কোনো আইন বিধিতেই সমর্থন করে না এবং তা শতভাগ অবৈধ।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১৭/০৯/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.