এইমাত্র পাওয়া

ভাগ্য বদলাতে ঢাকায় গিয়ে লাশ সাকিব

খুলনাঃ মাঝপথে লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে ঢাকায় গিয়ে চাকরি শুরু করেন শেখ মো. সাকিব রায়হান। মা-বাবা বারবার খুলনায় ফিরে আসতে বললেও রাজি হননি। বলতেন, খুলনায় কিছু করার সুযোগ কম। ঢাকায় চাকরি অথবা ব্যবসা করে তোমাদের মুখে হাসি ফোটাব। এর পর ফিরব। কিন্তু সেই সুযোগ তিনি পাননি।

গত ১৯ জুলাই পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের মাঝে পড়ে প্রাণ হারান ২২ বছর বয়সী সাকিব। তাঁর বুকের ডান পাশ দিয়ে গুলি ঢুকে পিঠ দিয়ে বের হয়ে গিয়েছিল। বিকেল ৪টার দিকে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে সাকিবের মৃত্যুর সংবাদ জানিয়ে ফোন করা হয় তাঁর বাবাকে। পরে ঢাকায় থাকা অন্য স্বজনরা লাশ নিয়ে রাতেই খুলনায় ফেরেন। ২০ জুলাই ফজরের পর জানাজা শেষে তাঁর লাশ খুলনার বসুপাড়া কবরস্থানে দাফন করা হয়।

সাকিবের বাড়ি খুলনা নগরীর ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের নবপল্লী এলাকায়। সেখানকার বায়তুল আকাবা জামে মসজিদের সামনের একটি বাড়িতে থাকেন তাঁর মা-বাবা। বাবা শেখ মো. আজিজুর রহমানের কাপড়ের ব্যবসা ছিল। করোনার সময় ব্যবসা বন্ধ হওয়ার পর একটি মুদি দোকান দিয়েছেন। মা নুরুন্নাহার বেগম গৃহিণী। তাদের দুই ছেলে এবং এক মেয়ের মধ্যে সবার ছোট সাকিব।

প্রতিবেশীরা জানান, বড় মেয়ে বিয়ের পর ঢাকাতেই থাকেন। মেজ ছেলে সাব্বির রায়হান ঢাকায় ছোটখাটো ব্যবসা করেন। সাকিবও ঢাকায় গিয়ে কিছুদিন একটি মোবাইল অপারেটর প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধি (এসআর) পদে চাকরি করেছেন। এর পর চাকরি ছেড়ে কিছুদিন খুলনায় ছিলেন। রোজার ঈদের পর আবার ঢাকায় যান। আরেকটি মোবাইল অপারেটর প্রতিষ্ঠানের এসআর হিসেবে চাকরি করেন। সেই চাকরি ছেড়ে কাজ করছিলেন অর্থনৈতিক শুমারির মাঠকর্মী হিসেবে। থাকতেন মিরপুর এলাকায়।

ওই দিন সাকিব কোথায় ছিলেন, কী ঘটেছিল– বলতে পারছেন না স্বজন। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গিয়ে তারা শুধু লাশটিই পেয়েছেন। সেটিও ছাড়িয়ে আনতে হয়রানির শিকার হতে হয় তাদের।

গতকাল রবিবার দুপুরে সাকিবদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় করুণ দৃশ্য। টিনের চাল ও বেড়ায় জীর্ণশীর্ণ এক কক্ষের একটি বাড়িতে থাকেন সাকিবের বাবা-মা। সন্তানের শোক নির্বাক হয়ে গেছেন দু’জন। এ নিয়ে কথা বলতে চাননি কেউই।

মা নুরুন্নাহার বেগম বলেন, ‘গত বুধবারও ফোন করেছিল। কত কথা বলল। এখন আমার সাকিব চলে গেছে, এখন এসব বলে কী হবে?’

সাকিবের বাবা আজিজুর রহমান বলেন, ‘গত শুক্রবার আমরা দু’জন ঢাকায় ছেলেদের কাছে গিয়েছিলাম। আসার সময় কতো করে সাকিবকে বললাম, আমাদের সঙ্গে খুলনায় চলো। ও বলেছিল, ১ আগস্ট থেকে নতুন চাকরিতে যোগ দেবে। চাকরি করে আমাদের মুখে হাসি ফোটাবে। কিন্তু আমাদের সব হাসি যে কেড়ে নিল-এটা কাকে বলবো।’

তিনি বলেন, ‘কিছু বললেই সাকিব হেসে দিতো। ওর হাসিতে আমার কলিজা ঠান্ডা হয়ে যেত। এলাকার মানুষদের কাছে খোঁজ নেন- কেউ ওকে নিয়ে খারাপ বলবে না।’

আজিজুর রহমানের কথার সত্যতা পাওয়া গেল বায়তুল আকাবা মসজিদের সামনে গিয়ে। জোহরের নামাজ শেষে কথা হচ্ছিলো কয়েকজন মুসল্লিদের সঙ্গে। সবাই একবাক্যেই বললেন, এমন ভদ্র ছেলে এলাকায় কমই ছিল। এলাকার প্রিয়মুখটির লাশ হয়ে ফিরে আসা দেখে ক্ষোভ ও হতাশা ঝরছিল সবার মুখে।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/২৯/০৭/২০২৪


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading