সর্বজনীন পেনশন নয় শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো চায় জাবি শিক্ষকরা

জাবিঃ সর্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন বাতিল ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো প্রণয়নের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বিএনপি পন্থি শিক্ষকরা।

মঙ্গলবার (১৪ মে) দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে ‌‘জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম’ ব্যানারে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা সর্বজনীন পেনশন স্কিমকে বৈষম্যমূলক আখ্যা দিয়ে এর প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো প্রণয়নের দাবি জানান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামছুল আলম সেলিম বলেন, ব্যাংকে টাকা নেই, রেমিট্যান্স আসে না, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করার মতো ডলার নেই। এর মাঝেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সার্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় এনে সরকার একটা ইস্যু তুলে ধরেছে যাতে শিক্ষকরা অন্য কোনো আন্দোলনে যেতে না পারে। দেশ এখন আওয়ামী লীগ চালাচ্ছে না। দেশ রিমোট কন্ট্রোলে চলছে। যার কারণে একের পর এক সংকট তৈরি হচ্ছে। তারা আমলা, পুলিশ, সেনাবাহিনী কাউকে এ পেনশন স্কিমের আওতাভুক্ত করেনি।বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আমরা সার্বজনীন পেনশন স্কিম প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে সকল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি।

জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামরুল আহসান বলেন, সার্বজনীন পেনশন স্কিম যখন চালু হয় তখন আইনে বলা হয়, শুধু নিম্ন আয়ের এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজ যারা করেন তারা এর অন্তর্ভুক্ত হবেন। কিন্তু গত ১৩ই মার্চ সোয়া চার লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি ব্যাংক লুট, বৈদেশিক ঋণের টাকা আগামী পাঁচ বছরে কীভাবে পরিশোধ করা যায় তার পরিকল্পনা।

তিনি আরও বলেন, সার্বজনীন পেনশন স্কিমের ফলে মেধাবীরা শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে আগ্রহ হারাবে। যারা এ নীতি প্রণয়ন করেছেন আপনারা কি চান আপনাদের সন্তানরা কম মেধাবীদের কাছে পড়ুক? তাহলে আপনাদের সন্তানদের কাছে আপনারা দায়বদ্ধ থাকবেন। আপনি এখন সচিব আর আপনার হাতে কলম আছে কিন্তু আপনাকে মানুষ বানিয়ে পাঠিয়েছি আমরা। যারা পেনশন স্কিমের নামে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করছেন, আঞ্চলিক মোড়লদের গোলামি করছেন, স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন, পতাকাকে অনিরাপদ করছেন। তাদের বলতে চাই, চলুন আমরা দলমত নির্বিশেষে এ দেশকে বাঁচায়, পতাকাকে বাঁচায়। আর এটাকে বাঁচাতে পারব যদি আমরা শিক্ষার উপর গুরুত্ব দেই।

মানববন্ধনে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক নূরুল ইসলামের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন, গণিত বিভাগের অধ্যাপক মো. নজরুল ইসলাম, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রুনু, ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সোহেল রানা, অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, গত ১৩ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক পেনশন সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি হয়। এতে বলা হয়, ‘সকল স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং উহাদের অধীন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানসমূহের চাকরিতে যে-সব কর্মকর্তা বা কর্মচারী, তাহারা যে নামেই অভিহিত হউন না কেন ১ জুলাই ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ তারিখ ও তৎপরবর্তী সময়ে নতুন যোগদান করিবেন, তাহাদের সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনার আওতাভুক্ত করিল।’

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১৪/০৫/২০২৪


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.