Breaking News

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ

ঢাকাঃ পুলিশের নিপীড়নের মধ্যেই গাজায় ইসরায়েলের বর্বর হামলার প্রতিবাদে এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উত্তাল রয়েছে। সপ্তাহজুড়েই শিক্ষার্থীদের দমন করার জন্য বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুলিশের আশ্রয় নিয়েছে; গ্রেপ্তার হয়েছেন শত শত শিক্ষার্থী। বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ক্যাম্পাসের অর্থায়ন বিচ্ছিন্ন করার দাবি জানিয়েছে।

এর মধ্যে জর্জিয়ার আটালান্টায় অবস্থিত এমোরি ইউনিভার্সিটিতে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হয়েছে। এমনকি নারী এক অধ্যাপককে গায়ের জোরে মাটিতে ঠেসে ধরে হাতকড়া পরায়। সিএনএনের এক ভিডিওতে দেখা গেছে, এমোরি ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির অধ্যাপক ক্যারোলাইন ফোলিন পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষার্থীদের বিষয়ে কথা বলতে গেলে এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা তাঁর ওপর চড়াও হন এবং চোখের পলকেই তাঁকে মাটিতে শুইয়ে ফেলেন।

ইউনিভার্সিটির আটালান্টা ক্যাম্পাসে গত বৃহস্পতিবার তাঁবু গেঁড়ে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীসহ অন্যরা। এ সময় পুলিশ সেখানে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়। বিক্ষোভকারীদের কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের পর সবাই মিলে চিৎকার দিয়ে ওঠেন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুসারে, উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় ৩৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষের মৃত্যু হয়।

বিক্ষোভের লাগাম টেনে ধরতে কলেজ প্রশাসকদের ওপর চাপ বাড়িয়ে চলছেন আইনপ্রণেতারা। বিক্ষোভের কেন্দ্রস্থল কলম্বিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে তদন্তের বিষয়ে গতকাল শুক্রবার রাতে সিনেটে প্রস্তাব পাস হয়েছে। বিক্ষোভের উত্তেজনা এরই মধ্যে ইয়েল, এমআইটি ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়েছে।

অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটি: গতকাল শুক্রবার অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ‘অননুমোদিত শিবির স্থাপনে’ জড়িত থাকার সন্দেহে পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মুখপাত্র।

বার্নার্ড কলেজ: স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছে, কলম্বিয়ার ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নেওয়ায় ‘প্রায় সব শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তীকালীন বরখাস্ত করার’ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়: বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্ণবাদী বিভাজন জোটের এক ছাত্র মুখপাত্রকে নিষিদ্ধ করেছে। শিক্ষার্থীটি গত জানুয়ারিতে বলেছিল, ‘জায়নিস্টরা বেঁচে থাকার যোগ্য নয়।’ পরে অবশ্য ক্ষমা চেয়েছেন তিনি।

ডেনভার ক্যাম্পাস: ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডো ডেনভার, কমিউনিটি কলেজ অব ডেনভার এবং মেট্রোপলিটন স্টেট ইউনিভার্সিটি অব ডেনভারের যৌথ ক্যাম্পাস থেকে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজনকারী প্রায় ১০০ জনের মধ্যে প্রায় ৪০ জনকেই গতকাল শুক্রবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ইমোরি ইউনিভার্সিটি: গত বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাসে সংঘটিত সহিংস গ্রেপ্তারের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টিরা ক্যাম্পাসে জড়ো হয়েছেন। অধ্যাপকেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট গ্রেগরি ফেনভেসকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়ার জন্য রাজ্য ও স্থানীয় পুলিশকে ডেকে আনার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।

জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি: গত শক্রবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বর্তমান শিক্ষার্থী যদি ক্যাম্পাসে অবস্থান করেন, তবে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হবে এবং প্রশাসনিকভাবে ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করা হবে।

ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটি: ছত্রভঙ্গ করার আদেশ প্রত্যাখ্যান করায় গত বৃহস্পতিবার রাতে মোট ৩৬ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

চ্যাপেল হিলের ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলাইনা: ইসরায়েল ও এর সামরিক অভিযানে বিনিয়োগ করা করপোরেশনগুলো থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে বিচ্ছিন্ন করার দাবিতে গতকাল শুক্রবার ৭৫ জনেরও বেশি শিক্ষার্থী স্কুলে জড়ো হয়।

ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া: স্কুলের প্রেসিডেন্ট ক্যারল এল ফোল্ট এক বিবৃতিতে বলেন, ক্যাম্পাসটি অনিরাপদ হয়ে উঠেছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় একটি তদন্ত শুরু করবে এবং সমস্ত ইউএসসি শিক্ষার্থী, ফ্যাকাল্টি ও কর্মীদের নিরাপত্তার জন্য পদক্ষেপ নেবে।

অস্টিনের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস: স্কুলটি প্যালেস্টাইন সলিডারিটি কমিটির ওপর ‘অন্তর্বর্তীকালীন বরখাস্তের’ আদেশ দিয়েছে। এই দলই গত বুধবার বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে, যেখানে ৫০ জনেরও অধিক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ভার্জিনিয়া টেক: গতকাল শুক্রবার স্কুল কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে একটি বিক্ষোভ সমাবেশ সম্পর্কে এক বিবৃতি জারি করে বলে, তারা বিক্ষোভকারীদের বলেছে, এই আয়োজন বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি মেনে চলে না।

ইয়েল ইউনিভার্সিটি: ফ্যাকাল্টি ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইন সংগঠন থেকে দেওয়া এক চিঠিতে চলতি সপ্তাহে শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তারের সমালোচনা করা হয়। তারা আরও বলে, তারা ইয়েলের সমাবর্তন অনুষ্ঠান বয়কট করতে প্রস্তুত। আরও একটি চিঠিতে ইয়েলের প্রশাসনকে ইয়েলের ইহুদি শিক্ষার্থী, কর্মী ও ফ্যাকাল্টিকে রক্ষা করার দায়িত্ব পালনে তাদের ব্যর্থতার জন্য নিন্দা করা হয়েছে।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/২৭/০৪/২০২৪

Check Also

তিন বছরে উচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন করা প্রায় ১৯ লাখ শিক্ষার্থীর অধিকাংশই বেকার

ঢাকাঃ দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে গত তিন বছরে (২০২১-২৩) উচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন করেছেন …