পাবনাঃ সংসার, সন্তান সামলানোর পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন অনার্সে পড়ুয়া তানিয়া খাতুন। স্বামীর স্বল্প আয়ে কোনো মতে চলছিল সংসার। স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা শেষ করে প্রতিষ্ঠিত হয়ে সংসারে সচ্ছলতা ফেরাবেন। সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রমের পরেও রাতের বেলায় বই নিয়ে পড়ে থাকতেন তানিয়া।
কিন্তু মাসদুয়েক আগে হঠাৎ করেই দুই পায়ের গোড়ালি ফোলা এবং উচ্চ রক্তচাপের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় তাকে। সেই পর্যন্ত সব ঠিকঠাক ছিল; কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তানিয়সহ পরিবারে নেমে আসে ঝড়!
চিকিৎসক জানান, দুটো কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে তানিয়ার। কিডনি প্রতিস্থাপন ছাড়া কোনো মতেই অনার্স শেষ বর্ষের এই ছাত্রীকে বাঁচানো সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন প্রায় ১৫ লাখ টাকা; কিন্তু দরিদ্রতার কারণে কোনো মতেই এতো টাকা জোগাড় করা সম্ভব নয় তার পরিবারের পক্ষে।
পাবনার চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা ইউনিয়নের লাঙলমোড়া গ্রামে বাবা তোফাজ্জল হোসেনের বাড়িতে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দিন পার করছেন তানিয়া। তানিয়া চাটমোহর সরকারি কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্রী।
সরেজমিন জানা গেছে, তানিয়ার স্বামী খাইরুল ইসলাম একটি এনজিওতে মাঠকর্মী হিসেবে চাকরি করেন। স্ত্রী তানিয়া এবং তাদের তিন বছর বয়সি আবদুল্লাহ আল তাওসিফকে সঙ্গে নিয়ে গাজীপুর এলাকায় বাসা ভাড়া করে থাকতেন। স্বল্প বেতনে কোনো মতে অভাব অনটনের মধ্যে দিয়ে চলতো তাদের সংসার; কিন্তু আত্মপ্রত্যয়ী তানিয়া বিয়ের পরেও সংসার, সন্তান সামলানোর পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন, শুধুমাত্র নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য।
সংসারে অভাব থাকলেও হাসি-খুশি ছিল পরিবারটি; কিন্তু মাসদুয়েক আগে হঠাৎ করেই তানিয়ার পায়েল গোড়ালি ফুলে যায় এবং উচ্চ রক্তচাপে ভুগতে থাকেন। পরবর্তীতে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষা নিরীক্ষায় ধরা পড়ে তানিয়ার দুটো কিডনিই নষ্ট। মাথায় বাজ পড়ে স্বামী খাইরুল ইসলামের!
পরবর্তীতে ঢাকায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি রোগ ও ইউরোলজি হাসপাতালে দেখান স্বজনরা। সেখানেও একই কথা বলা হয়। তবে কিডনি প্রতিস্থাপন করলে তানিয়ার বাঁচার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য প্রয়োজন হবে প্রায় ১৫ লাখ টাকার মতো; কিন্তু দরিদ্র পরিবারের পক্ষে কোনো মতেই সম্ভব নয় তানিয়ার চিকিৎসা করানোর।
বর্তমানে এনজিও থেকে ঋণ এবং সুদের কারবারিদের কাছ থেকে টাকা ধার করে একদিন পরপর তানিয়ার কিডনি ডায়ালিসিস করতে হচ্ছে। এখন টাকা ফুরিয়ে যাওয়ায় সেটাও বন্ধের পথে। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বিছানায় শুয়ে নীরবে কেঁদে চলেছেন তানিয়া।
তবে একমাত্র ছেলের জন্য বাঁচতে চান তানিয়া। চালিয়ে যেতে চান পড়াশোনা। প্রতিষ্ঠিত হয়ে অভাব দূর করতে চান অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্রী তানিয়া। এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী ও সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তানিয়া এই প্রতিবেদককে বলেন, আমার সন্তানের জন্য বাঁচতে চাই। আমি মারা গেলে আমার সন্তানের কী হবে? প্রধানমন্ত্রীও তো একজন মা। তিনি মায়ের যন্ত্রণা বুঝবেন। প্রধানমন্ত্রীসহ সবার প্রতি অনুরোধ আমার পাশে দাঁড়ান। আমাকে বাঁচান। আমি বাঁচতে চাই।
ছাইকোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান নুরু বলেন, তানিয়া মেধাবী ও পরিশ্রমী। ওর বাবা একজন দিনমজুর। আর স্বামী স্বল্প বেতনের চাকরি করেন। ওদের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব না তানিয়ার চিকিৎসা করানোর। আশা করি মেধাবী তানিয়াকে বাঁচাতে সামর্থ্যবানরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৪/০৪/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.