Breaking News

কবরস্থান পরিষ্কার করেছিল স্কুল ছাত্র দুই বন্ধু, পরদিনই তাদের দাফন

পঞ্চগড়ঃ  ঈদুল ফিতরের আগের দিন তিন বন্ধু মিলে ঝাড়ামোছা করেছিল পারিবারিক কবরস্থানটি। নিজ হাতে তারা দিয়েছিল বাঁশের বেড়া। এর পরদিনই বৃহস্পতিবার রাতে সেখানে দাফন হয়েছে দু’জনের। এদিন দুপুরে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ পৌর এলাকার সোনাহার-দেবীগঞ্জ সড়কের নতুনবন্দর এলাকায় দুর্ঘটনার শিকার হয়। অন্য কিশোর এখনও রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসাধীন।

তিনজনের বাড়িই দণ্ডপাল ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের লোহাগাড়া সুপারিতলা এলাকায়। এদের মধ্যে দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে বাছের আলীর ছেলে কাউসার আলী (১৬) ও ইয়াকুব আলীর ছেলে সাব্বির হোসেনের (১৭)। গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন জসিম উদ্দিনের ছেলে জাকারিয়া।

সাব্বির, কাউছার ও জাকারিয়া একই ইউনিয়নের বিনয়পুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। সাব্বির পড়তো অষ্টম শ্রেণিতে, কাউছার ও জাকারিয়া সপ্তম শ্রেণিতে। জাকারিয়ার সঙ্গে দু’জনের গভীর বন্ধুত্ব ছিল বলে এলাকাবাসী জানায়। সাব্বির ও কাউছার নিজ নিজ বাবার একমাত্র ছেলে।

আজ শুক্রবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, পাশাপাশি কবরে দাফন হয়েছে সাব্বির ও কাউছারের। পুরো কবরস্থানটি ঝকঝকে। নতুন বাঁশের বেড়া দেওয়া। সাব্বিরের কবরের ওপর মাটির টুকরো গুড়ো করে দিচ্ছিলেন দুই ব্যক্তি। তাদের একজন চাচা মো. শাহালম। অন্যজন দাদা সামসুল হক।

ঈদের আগের দিনই সাব্বির, কাউছার ও জাকারিয়া মিলে পারিবারিক কবরস্থান পরিষ্কার পরিছন্ন করে জানিয়ে সামসুল হক বলেন, ওরাই নিজেদের উদ্যোগে বাঁশের বেড়া দেয়। ঠিক পরের দিনই তাদের মৃত্যু হলো। সেই কবরস্থানেই দাফন হলো। বলতে বলতে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি।

স্থানীয় সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানা গেছে, ঈদে ঘুরে বেড়ানোর জন্য ওই কিশোর-তরুণরা মোটরসাইকেলে করে বের হয়। বৃহস্পতিবার দুপুর একটার দিকে একটি মোটরসাইকেলে খাঁপাড়া থেকে দেবীগঞ্জের দিকে আসছিলো তিন তরুণ। অপর একটি মোটরসাইকেলে আরও তিনজন কালীগঞ্জের লোহাগারা থেকে নীলসাগরের দিকে যাচ্ছিল। নতুন বন্দর এলাকায় একটি ভ্যানকে সাইড দিতে গিয়ে মোটরসাইকেল দুটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।

স্থানীয় লোকজন গুরুতর আহত অবস্থায় ৬ তরুণকে উদ্ধার করে দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। প্রাথমিক চিকিৎসা চলার মধ্যেই কাউসার আলী মারা যায়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে অন্যদের রংপুর মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়। পথে দেবীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের খাঁ পাড়া এলাকার মজনু রহমানের ছেলে সাব্বিরের (২২) মৃত্যু হয়। এ ছাড়াও রংপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দণ্ডপালের সাব্বির ও খাঁ পাড়া এলাকার হজরত আলীর ছেলে বরকত (১৭) মারা যায়।

আহত অবস্থায় রংপুর মেডিকেল (রমেক) কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন জাকারিয়া ও সোহেল নামের দুইজন।

এক প্রতিবেশী বলেন, কাউসার জ্ঞাতি সম্পর্কে সাব্বিরের চাচা হয়। দু’জনের সঙ্গেই প্রতিবেশী জাকারিয়ার চলাফেরা ছিল। একসঙ্গেই বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া, ঘোরাফেরা, আড্ডা– সবই চলতো। ঈদের আগের দিন বুধবার তারা নিজ উদ্যোগে সাব্বিরদের পারিবারিক কবরস্থানটি পরিষ্কার করেছিল।

তাদের এমন মৃত্যু পরিবারের পাশাপাশি স্বজন ও গ্রামবাসীকেও কাঁদিয়েছে বলে মন্তব্য করেন দন্ডপাল ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মমতাজ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘সাব্বির ও কাউছার খুব ভালো ছেলে ছিল। তাদের মৃত্যুতে আমাদের পুরো গ্রাম শোকাহত।’

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১৩/০৪/২০২৪


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Check Also

ডিসি নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ: উপদেষ্টা পরিষদের তদন্ত কমিটি গঠন

ঢাকাঃ ডিসি নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি গঠন করা হয়েছে। বুধবার রাতে …