আ, তা, মু, নিজাম উদ্দীন।।
পবিত্র রমজান মাস চলছে, আর কয়েকদিন পরেই মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। তবে এখন থেকেই চারিদিকে উৎসব উৎসব ভাব। সিয়াম সাধনা ও ইবাদত-বন্দেগীর পাশাপাশি ঈদ উৎসব পালনে ঘরে ঘরে চলছে কেনাকাটার আমেজ। ঘরের ছোটবড় সকলের জন্য চলছে কেনাকাটা।
প্রত্যেকে নিজেদের সাধ্য অনুযায়ী প্রিয়জনদের মুখে হাসি ফোটাতে চেষ্টার কমতি করছেন না। তবে সেই আমেজ অনেকটাই ম্লান বেসরকারি শিক্ষকদের ঘরে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই যুগে বেতন দিয়ে যেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন, সেখানে ‘সিকি বোনাস’ (বেসিকের ২৫%) দিয়ে ঈদের কেনাকাটার চিন্তা করাটা যেন আকাশ কুসুম কল্পনা। তারউপর মূল বেতন (এমপিও) ঈদের ছুটির আগে তুলতে পারবেন কিনা সেটা নিয়েও রয়েছে শঙ্কা। তাই অনেকে আক্ষেপ করে বলছেন, বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য ঈদ আসে না!
অথচ গত দুই যুগ ধরে শিক্ষকরা শতভাগ বোনাসের দাবি জানিয়ে আসলেও সেটাতে কর্ণপাত করছেন না কেউ। সর্বশেষ গত ১১ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে টানা ২১ দিন অবস্থান কর্মসূচি পালনের পর সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া মেনে নেয়ার ইঙ্গিত দেয়া হয়।
ওইসময় এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ) এর আহ্বানে মাধ্যমিকের শিক্ষকরা টানা ২১ দিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। আন্দোলন চলাকালে তারা তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনির সাথেও বৈঠক করেন। তবে সেখানে তাদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে কোনো সুরহা না হওয়ায় আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন। এক পর্যায়ে তারা কাফনের কাপড় গায়ে জড়িয়ে আমরণ অনশন শুরু করেন।
তবে পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা কবির বিন আনোয়ারের আমন্ত্রণে আওয়ামী লীগের ধানমন্ডির কার্যালয়ে যান শিক্ষক নেতারা। সেখানে তৎকালীন শিক্ষা উপমন্ত্রী (বর্তমানে শিক্ষামন্ত্রী) মহিবুল হাসান চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক উপকমিটির নেতাদের সাথে বৈঠকের পর শিক্ষক নেতারা আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিয়ে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন।
ওই সময় তাদেরকে আশ্বাস দেয়া হয়, এই মুহূর্তে জাতীয়করণের বিষয়টি তাৎক্ষণিক বাস্তবায়ন সম্ভব না হলেও সরকারি শিক্ষকদের সাথে তাদের বেতন-ভাতার বৈষম্য দূরীকরণে সরকারের সদিচ্ছা রয়েছে। তবে আন্দোলনের পর ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও শিক্ষকদের কোনো দাবিই সরকার বাস্তবায়ন করেনি। এতে শিক্ষকদের মাঝে ক্ষোভ ও আক্ষেপ বাড়ছে।
দেশের ৩% শিক্ষা কার্যক্রম সরকারি শিক্ষক দ্বারা চললেও ৯৭% চলে বেসরকারি শিক্ষক দ্বারা। অথচ ৩% সরকারিরা সব সুযোগ সুবিধা, বেতন-বোনাস পেলেও একই সিলেবাস ও কারিকুলাম বাস্তবায়ন করা বেসরকারিরা অনেকটাই অবহেলিত। তাই শিক্ষকদের দাবি দাওয়া অগ্রাহ্য করে তাদের আর্থিক সংকটে রেখে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন কতটা ফলপ্রসূ হবে সেটা বিবেচনায় আনতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
উল্লেখ্য, বর্তমানে দুটি শিক্ষাধারা বেসরকারি শিক্ষা হিসেবে চালু আছে। একদিকে সাধারণ শিক্ষা তথা স্কুল-কলেজ ও অপরদিকে আলিয়া মাদরাসা শিক্ষা। উভয় শিক্ষা আজও অবহেলিত, বঞ্চিত এবং উপেক্ষিত। চলমান মুদ্রাস্ফীতিতে সরকারের এমপিও দিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে চলতে হিমশিম খাচ্ছেন বেসরকারি শিক্ষকরা। সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা পাঠ্যক্রম সমান হলেও শিক্ষকদের বেতন ভাতা ও সুযোগ সুবিধায় রয়েছে পাহাড়সম বৈষম্য।
এসব বৈষম্য নিরসনে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসলেও তা আমলে নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। তবে শেষ পর্যন্ত দাবি আদায়ে আন্দোলনে নামেন শিক্ষকরা। মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ আন্দোলনের আগে তাদের দাবি-দাওয়ার মধ্যে ছিল- সরকারি-বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে আর্থিক বৈষম্য দূর করা, শতভাগ বোনাস, সম্মানজনক বাড়িভাড়া এবং চিকিৎসা ভাতা নিশ্চিত করা। তবে এসব দাবি মেনে না নেয়ায় ক্রমান্বয়ে জাতীয়করণ আন্দোলনে গড়ায়।
এদিকে জাতীয়করণের বিষয়ে শিক্ষাবিদরা বলছেন, শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা ও সামাজিক মর্যাদা এবং সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্যই শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ জরুরি। তাদের অভিযোগ, আর্থিক সংকট এ ক্ষেত্রে বড় সমস্যা নয়; সমস্যা সদিচ্ছার। তারা বলছেন, সমস্যা সর্বত্র। যেখানে সংকট আছে সেখানে সমাধানও আছে। তবে সমাধানের জন্য সংকটের মূল কারণ বের করা এবং ওই কারণ দূর করার উপরই সমাধান নির্ভর করে।
লেখক- প্রভাষক, সাবেক ব্যাংকার ও গণমাধ্যমকর্মী
শিক্ষাবার্তা ডটকম/জামান/০৪/০৪/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.