নিজস্ব প্রতিবেদক।।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগামী ৯ এপ্রিল (২৯ রমজান) সরকারি ছুটি থাকছে না। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ওইদিন ছুটির সুপারিশ করলেও তা নাকচ করে দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সুপারিশ নাকচ হওয়ায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ১০ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি পাচ্ছেন।
মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সুপারিশে অনুমোদন দেয়নি মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিসভা বলেছে, এমনিতেই এবার অনেক দিন ছুটি পাওয়া যাচ্ছে। ৯ এপ্রিল ছুটি দেওয়া হলে ছুটি দীর্ঘ হয়ে যাবে। এতে কাজে স্থবিরতা নামতে পারে। তবে যারা দূরে ঈদ করতে যাবেন, তারা তো চাইলে ছুটি নিতে পারেন। তাদের সেই অধিকার আছে।’
এদিকে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘আমাদের ঐচ্ছিক ছুটির একটা ব্যবস্থা আছে। যারা ঐচ্ছিক ছুটি নিতে নির্ধারিত পদ্ধতিতে আবেদন করবেন, তারা তো নিতেই পারবেন। এর জন্য আলাদা নির্দেশ দেওয়ার দরকার নেই।’
রমজান ৩০ দিন ও ঈদুল ফিতর ১১ এপ্রিল হচ্ছে ধরে আগামী ১০, ১১ ও ১২ এপ্রিল ঈদের ছুটি নির্ধারণ করে রেখেছে সরকার। এর পর ১৩ এপ্রিল (শনিবার) সাপ্তাহিক ছুটি এবং ১৪ এপ্রিল নববর্ষের ছুটি। ঈদের আগে ৭ এপ্রিল শবেকদরের ছুটি।
৮ ও ৯ এপ্রিল অফিস খোলা। ১১ এপ্রিল ঈদ হলে বাড়ি যেতে মাত্র একদিন সময় পাওয়া যাবে; তাই ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ৯ এপ্রিলও ছুটি দেওয়ার সুপারিশ করেছিল আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
এর আগে প্রতিবারই রমজান ২৯ দিন ধরে ঈদের ছুটি নির্ধারণ করেছে সরকার। এবারই এর ব্যতিক্রম হলো। এ প্রসঙ্গে মাহবুব হোসেন বলেন, ‘এবার দেখা যাচ্ছে যে, রমজান মাসের আগে দুটি মাসে ২৯ দিন ছিল।
সাধারণত পরপর তিনটি মাস ২৯ দিন হয় না। এটা হলো সাধারণ বিষয়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের যে রিপোর্ট, সেটি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এ বছরের রমজান আমাদের ৩০ দিনে হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।’ তিনি আরও বলেন, ‘ক্যালেন্ডারে আমাদের যেভাবে ছুটি দেওয়া আছে, ওইভাবেই ছুটিটা থাকবে। ৮ এবং ৯ এপ্রিল অফিস খোলা থাকবে।’
আমদানি-রপ্তানিতে সেবা কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করে নতুন আইন হচ্ছে ‘আমদানি ও রপ্তানি আইন, ২০২৪’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
নতুন আইন হলে সেবা আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে। সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ও নিষিদ্ধকরণের ১৯৫০ সালের আইন আছে। পুরোনো আইনগুলো পর্যায়ক্রমে যুগোপযোগী করার নির্দেশনা আছে। এ জন্য নতুন আইনের খসড়া করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আগের আইনে নতুন করে কিছু বিষয় সংযুক্ত করা হয়েছে। আগে শুধু পণ্যের কথা বলা ছিল। এখন বাণিজ্যিকভাবে সেবা কার্যক্রমকেও আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেবা আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে। সরকার কোনো পণ্য বা সেবা নিয়ন্ত্রণ বা নিষিদ্ধ করতে পারবে।
এ সম্পর্কিত আদেশ ও বিধিবিধান প্রণয়ন করতে পারবে। আমদানি ও রপ্তানি নীতি প্রণয়নের দায়িত্ব বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দেওয়া হয়েছে।’
এ ছাড়া ‘পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা আইন, ২০২৪’, ‘বিদেশি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা (স্থাবর সম্পত্তি অর্জন নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০২৪’ এবং ‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (সংশোধন) আইন, ২০২৪’-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
এই খসড়াগুলো গত সরকারের মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হলেও তা সংসদে বিল আকারে পাস হয়নি। তাই সরকার পরিবর্তনের কারণে নতুন করে এগুলো মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের জন্য এসেছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে শিথিল হলো আয়ের সীমা। বছরে ১২ হাজার নয়, ১৫ হাজার টাকার কম আয় করা বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারীরা এখন থেকে ভাতার আওতায় আসবেন।
আয়ের সীমা শিথিল করে ‘বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা কর্মসূচি বাস্তবায়ন নীতিমালা, ২০২৪’-এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
সরকারি কর্মকর্তাদের বদলির পরও কোনো স্থানে থাকতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বদলি ঠেকানো গর্হিত কাজ বলে মন্তব্য করেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। বদলির আদেশ হলে সেটি যাতে বাস্তবায়ন হয়, সে বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে বলে জানান তিনি।
গতকাল প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বদলি আমাদের প্রশাসনের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বদলি করলে বদলি হওয়া স্থানে তাকে যেতে হবে, এটাই হলো নিয়ম।
এটা সর্বাত্মকভাবে অনুসরণ করব, এটি আমরা সব সময় এস্টাবলিস্ট করে থাকি। কখনও কখনও ব্যতিক্রমী কিছু ঘটনা ঘটে। যখন সিনিয়র অফিসার কিছুদিন চায়, তখন আমরা কিছুদিন রেখে দিই; কিন্তু এটা এই নয় যে, তাকে বদলি করা যাবে না, বদলি অবশ্যই তাকে করতে হবে। সে তো স্থায়ী থাকতে পারে না।’
মাহবুব হোসেন বলেন, ‘জনপ্রশাসনের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে, বদলির আদেশ হলে সেটি যেন বাস্তবায়ন হয়। যদি কোনো বিশেষ যুক্তি থাকে, কোনো পরিস্থিতি থাকে, সেটি বিবেচনা পরবর্তী সময়ে করা হবে, তবে ঢালাওভাবে এরকম না।
বাস্তবতা যদি থাকে, প্রয়োজন যদি থাকে, সেটি বিবেচনা করতেই হবে। এটা নিয়ে তো বিতর্ক করার কিছু নেই।’
শিক্ষাবার্তা ডট কম/জামান/০৩/০৪/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.