শিক্ষাবার্তা ডেস্ক, ঢাকাঃ শিক্ষাব্যবস্থার প্রধান সমস্যা হিসেবে বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়গুলোর সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করেছেন দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। মন্ত্রণালয়গুলোর সমন্বয়হীতা এবং খুব বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষার কারণে পিছিয়ে পড়ছে শিক্ষাব্যবস্থা। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, দেশের অনেক এমপিওভুক্ত ও নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিনা মূল্যের বই না পেয়ে কিনতে হচ্ছে। চরাঞ্চলে শিক্ষক সংকট, কোথাও দক্ষ শিক্ষক নেই।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বিদ্যালয়গুলোতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষক নেই। অনেকেই উপবৃত্তি পায় না। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের বাল্যবিবাহ রোধে সক্রিয় কোনো ব্যবস্থা নেই। পানিতে ডুবে শিশুদের মৃত্যুরোধ, দিবাযত্ন কেন্দ্র চালুর দাবিও জানান তাঁরা।
গতকাল বুধবার আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস-২০২৪ উপলক্ষে গণসাক্ষরতা অভিযানের আয়োজনে ‘টেকসই শান্তির জন্য শিক্ষা’বিষয়ক মতবিনিময়সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
সভাপ্রধানের বক্তব্যে এডুকেশন ওয়াচ চেয়ারপারসন ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘আমরা একটি শিক্ষা কমিশন করার কথা বলেছিলাম। আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া আমরা শিক্ষা আইন নিয়ে কথা বলেছিলাম।
সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি তিন-চার বছর আগে জানিয়েছিলেন এটি নিয়ে কাজ চলছে। এখনো কাজ চলছে কি না আমার জানা নেই।’
শিক্ষায় দুটি মন্ত্রণালয়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই দুই মন্ত্রণালয়কে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গেও সমন্বয় রাখা প্রয়োজন।
খলীকুজ্জমান বলেন, “আমাদের প্রধান সমস্যা হলো আমরা শিক্ষাব্যবস্থাকে নিয়ে খুব বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করি।
এ ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন দক্ষতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন প্রয়োজন, তবে বারবার পরিবর্তনের কারণে নানা জটিলতা দেখা দেয়। আমাদের প্রধান সমস্যা ‘বাস্তবায়ন’। সঠিক পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়ন করতে না পারলে কোনো সুফল পাওয়া যাবে না। অনেকেই বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছাই ওই কাজ করেছি। নিজেদের স্বদিচ্ছা, নীতি-নৈতিকতা না থাকলে সমাজ পরিবর্তন সম্ভব না। আমরা যদি আরো বড় চেয়ার ও পদ-পদবি চাই তবে শিক্ষার মানোন্নয়ন হবে না। নিজের জন্য নয়, দেশের জন্য কাজ করতে হবে। এ জন্য দেশপ্রেম থাকতে হবে। বাংলাদেশে ধনী হওয়ার হার পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি। অথচ আমাদের রাজস্ব বাড়ছে না। এ কারণে শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে সরকার ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
স্বচ্ছ নিয়োগ ও শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রয়োজন
অতিথির বক্তব্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি বলেন, ‘আমি দেখলাম, প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা সুরে সুরে পড়ছে। আগ্রহ নিয়ে পরের লাইন জানতে চাইলে তারা বানান করেও পড়তে পারেনি। পরে জানলাম, তাদের এভাবে মুখস্থ করানো হয়েছে। এসব শিক্ষার্থীর পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর নতুন করে ‘অ-আ’ শেখাতে হয়। দক্ষ শিক্ষক নিশ্চিত করতে না পারলে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা যাবে না। ফলে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। শিক্ষক প্রশিক্ষণ বাড়াতে হবে।’
যেখানে শিক্ষার্থী বেশি, সেখানে পরীক্ষা পদ্ধতি
অতিথির বক্তব্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমে ধারাবাহিক মূল্যায়ন নিয়ে অনেক অভিযোগ আছে। তবে সব বিদ্যালয়ে এমন সমস্যা নেই। যেসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীসংখ্যা বেশি, সেখানে শিক্ষকরা সব শিক্ষার্থীকে মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হন। এমন বিদ্যালয়গুলোতে পরীক্ষা পদ্ধতি রাখা যেতে পারে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য দিবাকেন্দ্র খোলা প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন।
রুলস অব বিজনেস পরিবর্তন করতে হবে
গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, প্রতিবন্ধী শিশুদের পাঠদান সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে। অথচ তাদেরও স্বাভাবিক সব নৈতিক অধিকার আছে। এসব অধিকার রক্ষার জন্য অন্যদের মতো তাদেরও দুই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় দুটির ‘রুলস অব বিসনেস’ পরিবর্তন করতে হবে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৫/০১/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.