ঢাকাঃ চলতি বছর এসএসসি ও এইচএসসি সমমানের পরীক্ষায় ফল যাচাইয়ে খাতা পুনর্নিরীক্ষার আবেদন প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। এর পেছনে মূলত তিনটি কারণ দেখছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তা হলো যোগ্য শিক্ষক দিয়ে মূল্যায়নের অভাব, ত্রুটিপূর্ণ নম্বরপত্র ও শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বৃদ্ধি। শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তারা জানান, মূল্যায়ন জটিলতার কারণে প্রতিবছর একাধিক মামলাও মোকাবেলা করতে হচ্ছে।
ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড (মাউশি) সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত এইচএসসি-২০২৩-এর ফল পুনর্নিরীক্ষার আবেদন গ্রহণ করে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। এই বোর্ডের অধীনে প্রায় এক লাখ পরীক্ষার্থী দুই লাখ ৭১ হাজার ৩৩৩টি খাতা পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করে, যেখানে মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা তিন লাখ ১৫ হাজারের বেশি। গত বছর ৩১ হাজার ৫৭৪ জন পরীক্ষার্থী এক লাখ চার হাজার ৬৬৫টি খাতার ফল পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করেছিল। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় খাতা পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন প্রায় ২.৬০ গুণ বেড়েছে।
এসএসসি-২০২৩-এ ৭৩ হাজার ৪৬ জন পরীক্ষার্থী এক লাখ ৯১ হাজার ২০১টি খাতা পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করে। গত বছর ৩৬ হাজারের অধিক পরীক্ষার্থী ৬৮ হাজার খাতা পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করে। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় খাতা পুনর্নিরীক্ষার আবেদন বেড়েছে ২.৮১ গুণ।
এ ব্যাপারে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক আবুল বাশার বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন।
আমরা যখন পরীক্ষা দিয়েছি, তখন ফল পুনর্নিরীক্ষণের আবেদনের বিষয়ে জানা ছিল না। তবে এখন ফেল করার পাশাপাশি জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরাও বিষয়ভিত্তিক ফল পুনর্নিরীক্ষার আবেদন করছে। কোনো বিষয়ে কম নম্বর পেয়েছে, ধারণা হলেই শিক্ষার্থীরা আবেদন করছে। তবে বিগত বছরের তুলনায় অনেক বেশি আবেদন পড়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’
খাতা মূল্যায়নে অদক্ষ শিক্ষক
অনেক ক্ষেত্রে অদক্ষ শিক্ষক দিয়ে খাতা মূল্যায়ন করা হয় বলে জানান অধ্যাপক আবুল বাশার।
গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘বেসরকারি পর্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। কিছু প্রতিষ্ঠানে দক্ষ শিক্ষক নিয়োগে ঘাটতি থাকে। খাতা মূল্যায়নের সময় প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আমরা শিক্ষকদের তালিকা চেয়ে থাকি। সেই তালিকা অনুযায়ী শিক্ষকদের খাতা মূল্যায়নের কাজ দেওয়া হয়। খাতা পুনর্নিরীক্ষণের সময় এ বিষয়গুলো উঠে আসে। তখন প্রধান পরীক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট পরীক্ষককে ডেকে পুনর্মূল্যায়নের কাজ করা হয়।’
গোপনীয় ওএমআর শিটেও সমস্যা
বোর্ড পরীক্ষাগুলোতে উত্তরপত্রের সঙ্গে একটি করে ‘অপটিক্যাল মার্ক রিকগনাইজেশন (ওএমআর) শিট’ থাকে। ওই শিটে পরীক্ষার বিষয় কোড, পরীক্ষক কোড, উত্তরপত্রের ক্রমিক নম্বর, অতিরিক্ত উত্তরপত্রের সংখ্যা, প্রাপ্ত নম্বর ও কালো রঙের লিথু কোড ও কিউআর কোড থাকে। একটি খাতার সঙ্গে অন্য খাতার লিথু কোড মিলবে না। কিউআর কোডের মাধ্যমে আসল খাতা নির্ণয় করা যাবে। উত্তরপত্র নষ্ট বা হারিয়ে গেলে ওএমআর শিটে থাকা কোডগুলো দিয়ে তা শনাক্ত করা যাবে।
অভিযোগ রয়েছে, দেশের বিভিন্ন বোর্ডে অদক্ষ ঠিকাদারদের এসব উত্তরপত্রসহ ওএমআর শিট তৈরির কাজ দেওয়া হয়েছে। ত্রুটিপূর্ণ ওএমআর শিটের কারণে শিক্ষার্থীরা কাঙ্ক্ষিত ফলাফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এতে ফল পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন বাড়ছে।
সম্প্রতি কুমিল্লা বোর্ডের অধীনে কাজ করা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের শর্ত ভেঙে কাজ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে গত ১১ ডিসেম্বর শিক্ষাসচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ঢাকার কাটাবন এলাকার ডলফিন প্রিন্টার্সের স্বত্বাধিকারী মো. আইয়ুব আলী। এ ব্যাপারে জানতে শিক্ষাসচিবের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর দপ্তরের একটি সূত্র অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
অভিযোগে বলা হয়, দরপত্রের শর্তে ছিল তিন বছরের মধ্যে একক কার্যাদেশে চার কোটি টাকার কাজের অভিজ্ঞতার সনদ থাকতে হবে। এই শর্ত পূরণ করা ছাড়াই সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কাজ দেওয়া হয়েছে এশিয়া বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েটসকে। অন্য এক শর্তে খাতা সরবরাহে যে মানদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, তা রক্ষা করা হয়নি।
এশিয়া বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েটসের স্বত্বাধিকারী আব্দুল মান্নান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এ অভিযোগ ভিত্তিহীন। প্রতিপক্ষ ব্যবসায়ীরা হীন উদ্দেশে এসব অভিযোগ করছেন। কাগজের মানে কোনো ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। এ ছাড়া একক কার্যাদেশে সাড়ে সাত কোটি টাকার কাজের অভিজ্ঞতা আমাদের আছে।’
গত ২২ অক্টোবর একই কাজের জন্য ১২ কোটি টাকার কাজের অভিজ্ঞতা চেয়ে দরপত্র প্রকাশ করে যশোর শিক্ষা বোর্ড। দরপত্রে থাকা শর্ত অনুযায়ী কাজের অভিজ্ঞতা পূরণ করতে না পারায় সর্বনিম্ন দরদাতাকেও কাজ দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আহসান হাসিব গণমাধ্যমকে বলেন, প্রথমে দরপত্রে থাকা শর্তগুলো পূরণ করতে হবে। এরপর কাজ পাওয়ার আবেদন। নিম্ন দরদাতা হলেই কাজ পাওয়া যাবে না। শর্ত পূরণ না করলে দ্বিতীয় নিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৬/১২/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.