মোঃ কাওছার আলী শেখ। ছবিঃ সংগৃহীত

কোটি টাকা দুর্নীতি: চূড়ান্ত বরখাস্ত বিটিএ সেক্রেটারি কাওছার শেখ

আল আমিন হোসেন, মৃধাঃ কোটি টাকার আর্থিক দুর্নীতি, জাল সনদের মাধ্যমে নিজ আত্মীয়কে নিয়োগ প্রদান, এমপিওভুক্তির আশ্বাস দিয়ে অর্থ আদায়, প্রতিষ্ঠানের কাজে সময় না দিয়ে জমি ব্যবসায় নিজেকে ব্যস্ত রাখাসহ একাধিক অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত রাজধানীর উত্তর যাত্রাবাড়ীর সবুজ বিদ্যাপীঠ উচ্চ বিদ্যালয়ের সেই প্রধান শিক্ষক মোঃ কাওছার আলী শেখকে (ইনডেক্স নং ৪৮০৯৪৪) চূড়ান্ত বরখাস্ত করেছে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটি। কোটি টাকার দুর্নীতির দায়ে চড়ান্ত বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষক মোঃ কাওছার আলী শেখ বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ) এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক।

গত ২৯ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি স্বাক্ষরিত পত্রে তাকে চূড়ান্ত বরখাস্ত করা হয়।

বরাখাস্তের চিঠিতে জানানো হয়, “রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর সবুজ বিদ্যাপীঠ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক মোঃ কাওছার আলী শেখ (ইনডেক্স নং ৪৮০৯৪৪) কে ৩১/০৫/২০১২ তারিখে সবুজ বিদ্যাপীঠ উচ্চ বিদ্যালয়”- এর প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করলেও সর্বত্র নিজেকে অধ্যক্ষ হিসেবে পরিচয় প্রদানের মাধ্যমে পেশাগত অসদাচরণ করে আসছেন। এছাড়াও দায়িত্ব পালনকালীন প্রতিষ্ঠানের আয়ের খাতের দুর্নীতির ১,৪২,০৭,৪৮৯/- প্রতিষ্ঠানের ব্যয়ের খাতের দুর্নীতির ১,৪৩,৪৭,২৫০/- এবং ২০২০ সালে শিক্ষকদের প্রভিডেন্ড ফান্ডের ১,৯৮,০০০/- আত্মসাতের বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় ১১/১১/২০২৩ তারিখে যথাযথ প্রক্রিয়ায় সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং আত্মসাৎকৃত অর্থ প্রতিষ্ঠানের ফান্ডে জমা প্রদানের নির্দেশ প্রদান করা হয়।”

“যেহেতু আনীত পেশাগত অসদাচরণ, আর্থিক দুর্নীতি, জাল সনদের মাধ্যমে নিজ আত্মীয়কে নিয়োগ প্রদান, এমপিওভূক্তির আশ্বাস দিয়ে ঘুষ আদায়, নারী শিক্ষকদের নিপীরণসহ প্রতিষ্ঠানের কাজে সময় না দিয়ে জমি ব্যবসায় নিজেকে ব্যস্ত রাখার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগসমূহ প্রমাণিত হয়েছে সে কারণে “স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষকগণের চাকুরির শর্ত বিধিমালা ১৯৭৯” এর ১১ ধারা অনুযায়ী আপনি মোঃ কাওছার আলী শেখ- কে চূড়ান্ত/স্থায়ী বরখাস্ত করা হলো।”

“উল্লেখ থাকে যে, ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের আয়ের খাতের দুর্নীতির ১,৪২,০৭,৪৮৯/-, প্রতিষ্ঠানের ব্যয়ের খাতের দুর্নীতির ১,৪৩,৪৭,২৫০/- এবং ২০২০ সনের শিক্ষকদের প্রভিডেন্ড ফান্ডের আত্মসাৎকৃত ১,৯৮,০০০/- অনতি বিলম্বে প্রতিষ্ঠানের ফান্ডে জমা করার নির্দেশ প্রদান করা হলো। অন্যথায় বিধি মোতাবেক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

এর আগে গত ১৩ নভেম্বর “কোটি টাকা দুর্নীতির দায়ে বরখাস্ত বিটিএ সেক্রেটারি কাওছার” শিরোনামে এবং ১৯ নভেম্বর “বিটিএ সেক্রেটারি কাওছার: বরখাস্ত প্রত্যাহার চায় বিটিএ, বিচার চায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা” শিরোনামে ২১ নভেম্বর “দুর্নীতির দায়ে বরখাস্ত প্রধান শিক্ষক কাওছার, অধ্যক্ষ পদে পুনর্বহাল চায় বিটিএ” শিরোনামে শিক্ষাবার্তা’য় তিনটি সংবাদ প্রকাশিত হলে তা আলোড়ন তৈরি করে।

জানা গেছে, ২০১১ সালে বিদ্যালয়টির তৎকালীন প্রধান শিক্ষক অবসরে গেলে ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব পান বিদ্যালয়টির তৎকালীন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক তাসলিমা বেগম। ভারপ্রাপ্তের দায়িত্বকালীন সময়ে তিনি হজে গেলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পান মোঃ কাওছার শেখ। এরপর হজ থেকে তাসলিমা বেগম ফেরত আসার আগেই তিনি নিজেই প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বাগিয়ে নেন। আর এই প্রধান শিক্ষক পদে বসেই শুরু করেন অনিয়ম দুর্নীতি। জিরো থেকে বনে যান হিরো, গড়েন অঢেল সম্পদ বাড়ী-গাড়ী, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ।

জানা গেছে, বিটিএর নেতৃত্বে সম্প্রতি জাতীয়করণের আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষকদের ব্যাপক সাড়া পড়ে। ধারাবাহিক আন্দোলনে প্রতিটি জেলা থেকে চার পাঁচটা বাসে করে শিক্ষকরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হন। কাওছার আলী শেখের ব্যক্তিগত দুর্নীতিকে জাতীয়করণের আন্দোলন করার ফলে বরখাস্ত করা হয়েছে উল্লেখ করে সাংগঠিক ব্যানারে কিছু শিক্ষককে মাঠে নামান তিনি। নিজে প্রধান শিক্ষক হলেও অধ্যক্ষ দাবি করা কাওছার আলী শেখ কয়েকটি জেলায়  অল্প সংখ্যক শিক্ষককে রাজপথে নামিয়ে বরখাস্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে  ব্যক্তিগত দায়  সংগঠনের ঘারে চাপানোর চেষ্টা করলেও অধিকাংশ শিক্ষক তা করেনি, তারা রাজপথে নামেনি।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের করা তদন্ত কমিটে কোন ধরণের সহযোগিতা করেননি তিনি। নিজে উপস্থিত হননি এমনকি কোন কাগজপত্র দাখিল করেনি। তদন্তে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের নিকট তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক অধ্যাপক মোহাম্মদ আবুল মনছুর ভূঞাঁ শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, গতকাল আপিল কমিটিতে তাকে ডাকা হলেও তিনি উপস্থিত হননি। তদন্ত প্রতিবেদন চেয়ারম্যান মহোদয়ের নিকট জমা দিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। আগামী আপিল কমিটির কাছে তা প্রেরণ করা হবে এবং তাকে পুনরায় ডাকা হবে। এরপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের সুপারিশ করা হবে।

জানা গেছে, সম্প্রতি জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে কাওছার আলী শেখ। সেখানে তিনি নিজেকে নির্দোশ দাবি করেন এবং জাতীয়করণ আন্দোলনে তার নেতৃত্ব এবং কমিটির অনিয়ম ঢাকতে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে উল্লেখ করেন। তবে নিজেকে নির্দোশ দাবি করলেও তিনি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট কোন দলিল তিনি পেশ করেননি। এমনকি উপস্থিত হননি। এছাড়াও গতকাল রবিবার ঢাকা বোর্ডের আপিল কমিটিতে তাকে উপস্থিতি হওয়ার কথা থাকলেও তিনি উপস্থিত হননি।

বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হাজী আবুল কালাম অনু বলেন, সঠিক নিয়মে এবং তার দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ায় চুড়ান্ত বরখাস্ত করা হয়েছে।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৪/১২/২০২৩

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.