কুমিল্লাঃ জেলার চৌদ্দগ্রামের খিরনশাল ইসলামিয়া ফাযিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার দপ্তরি আবদুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান প্রধান ও দুই শিক্ষকের স্বাক্ষর জাল করে জনতা ব্যাংক থেকে আট লাখ টাকার ঋণ উত্তোলন করে লাপাত্তা হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত দপ্তরি আবদুর রহমান একই উপজেলার মুন্সীরহাট ইউনিয়নের সিংরাইশ গ্রামের আবদুল কাদেরের ছেলে। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা আত্মসাৎ করারও অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দপ্তরি আব্দুর রহমান ২০১০ সনে এই মাদ্রাসায় যোগদান করেন। যোগদানের পরে তিনি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমানের কাছের লোক হয়ে উঠেন। আব্দুর রহমানকে অধ্যক্ষ মাদ্রাসায় ক্যানটিন বসিয়ে চাকরির পাশাপাশি ব্যবসার সুযোগ করে দেন। আস্থাভাজন হওয়ায় অগ্রিম স্বাক্ষর নিয়ে শিক্ষকদের বেতন উত্তোলন, মাদ্রাসার কম্পিউটার ব্যবহার, বিভিন্ন আলমিরা ব্যবহার করতেন আব্দুর রহমান।
মাদ্রাসার বেশ কয়েক শিক্ষক-শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, অধ্যক্ষের অবর্তমানে আব্দুর রহমানই সর্বেসর্বা। এই সুযোগে তিনি অধ্যক্ষের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে জনতা ব্যাংক, চৌদ্দগ্রাম শাখা থেকে শিক্ষক আবদুল হান্নানের নামে চলতি বছরের ১৩ই ফেব্রুয়ারি ৪ লাখ টাকা এবং কম্পিউটার অপারেটর মাছুমের বিল্লার নামে গত বছরের ২৩ অক্টোবর ৪ লাখ টাকার ঋণ উত্তোলন করেন আব্দুর রহমান।
মাদ্রাসার ইংরেজি শিক্ষক আব্দুল হান্নান জানান, গত ১৫ দিন আগে আমি ব্যাংকে গেলে জানতে পারি আমার নামে ৪ লাখ টাকার একটি ঋণ উত্তোলন করা হয়েছে, অথচ আমি কোনোভাবেই ওই ঋণ করি নাই। দপ্তরি আব্দুর রহমান কীভাবে কাগজপত্র তৈরি করে আমার নামে ঋণ নিয়েছে, তা আমার জানা নেই। ইতোমধ্যেই আমি ব্যক্তিগতভাবে থানায় যোগাযোগ করেছি। বিজ্ঞ আদালতে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
একই অভিযোগ করেন মাদ্রাসার কম্পিউটার অপারেটর মাছুম বিল্লা। তার নামেও ৪ লাখ টাকার ভুয়া ঋণ উত্তোলন করেছে আব্দুর রহমান।
এ বিষয়ে জনতা ব্যাংক চৌদ্দগ্রাম শাখার তৎকালীন শাখা ব্যবস্থাপক (বর্তমান কর্মস্থল- কুমিল্লা কোটবাড়ী গন্ধমতি শাখা ব্যবস্থাপক) মোমিনুল হক জানান, যথাযথ নিয়ম মেনে ঋণগ্রহীতাদের স্বাক্ষর যাচাই করে দুজনের ঋণ অনুমোদন দিয়েছি। এতে কোনো জাল-জালিয়াতি হয়নি।
জনতা ব্যাংক চৌদ্দগ্রাম শাখার ব্যবস্থাপক মো. হুমায়ুন কবির বলেন, গত কিছুদিন আগে খিরনশাল মাদ্রাসার মাছুম নামীয় এক কর্মচারী জানান, তার ঋণের বিষয়ে সে জানে না। একই অভিযোগ করেন মাদ্রাসার আরেক শিক্ষক আব্দুল হান্নান। মূলত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানপ্রধানের প্রত্যয়ন, এমপ্লয়ি সার্টিফিকেট, এমপিও কপি, এমপিও ২ বছর পূর্ণ হওয়াসহ সকল শর্তাবলি মেনে ঋণ প্রদান করা হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, এ দুটি ঋণ উত্তোলনের সময় আব্দুর রহমান ঋণের কাগজপত্রে গ্রাহকদের স্বাক্ষর জাল করেছেন এবং এ বিষয়ে তাকে ব্যাংকের একটি চক্র সহযোগিতা করেছেন।
অভিযুক্ত আব্দুর রহমানের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে একাধিক দিন একাধিকবার কল করে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে তার পিতা আবদুল কাদের এবং ভগ্নিপতি আবদুল বারেক বলেন, গত ২৭ অক্টোবর থেকে আব্দুর রহমানের খোঁজ নেই। এখন পর্যন্ত নিখোঁজের কোনো সাধারণ ডায়েরি করেননি বলেও জানান তার বাবা।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান বলেন, গত ২৬ অক্টোবর আব্দুর রহমান ছুটি নিয়ে এরপর থেকে আর মাদ্রাসায় আসে নাই। আমরা পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেও তার সন্ধ্যান পাই নাই। মাদ্রাসায় কর্মরত ১ জন শিক্ষক এবং ১ জন কর্মচারীর নামে জনতা ব্যাংক থেকে ভুয়া ঋণ নেওয়া হয়েছে।
মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মনির হোসেন জানান, দপ্তরি আব্দুর রহমান একাধিক শিক্ষক কর্মচারীর নামে জালিয়াতি করে ব্যাংক থেকে ঋণের বিষয়ে গত মাসের শেষে কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্তের আলোকে মাদ্রাসা থেকে তাকে শোকজ করা হয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার একেএম মীর হোসেন জানান, স্বাক্ষর জাল করে একাধিক শিক্ষক-কর্মচারীর নামে ঋণ নেওয়ার বিষয়টি আমি অধ্যক্ষের মাধ্যমে জেনেছি। ঋণের কাগজপত্রে অধ্যক্ষের স্বাক্ষর প্রমাণের বিষয়টি ব্যাংক কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। অধ্যক্ষ অভিযুক্ত পিয়ন আব্দুর রহমানকে শোকজ করেছেন বলে জানিয়েছেন।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২০/১১/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.