ঢাকাঃ নানা ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন দারিদ্র্যের হার নিয়ন্ত্রণ ও এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে ভূমিকা রাখছে। এতে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সুবিধাভোগী হবে তুলনামূলক পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি খাতে সরকারের বরাদ্দ প্রায় ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ১৬.৫৮ শতাংশ এবং জিডিপির প্রায় ২.৫২ ভাগ।
এতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা পাবে দেশের প্রায় ১২ কোটি মানুষ। এর মধ্যে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তার নানা কর্মসূচির ভাতা পাবেন ২ কোটি মানুষ। প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমকে নতুনভাবে সাজিয়েছেন সরকার। বরাদ্দ রাখা হয়েছে আরও বেশি, বাড়ানো হয়েছে উপকারভোগীর সংখ্যাও।
গত অর্থবছরে বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা ছিল ৫৭ লাখ ১ হাজার। চলতি অর্থবছরে ১ লাখ বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ৫৮ লাখ ১ হাজার। বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত নারী ভাতাভোগীর সংখ্যা ২৪ লাখ ৭৫ হাজার থাকলেও এ বছর তা বাড়িয়ে টার্গেট করা হয়েছে ২৫ লাখ ৭৫ হাজার জন। মাসিক ভাতার হারও ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ৫৫০ টাকা।
এ বছর প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা বাড়িয়ে করা হয়েছে ২৯ লাখ, যা পূর্বে ছিল ২৩ লাখ ৬৫ হাজার। প্রতিবন্ধী ডাটাবেজে যারা রয়েছে, সবাই এ কর্মসূচির আওতায় থাকবেন বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীদের মাসিক শিক্ষা উপবৃত্তির হার বাড়িয়ে প্রাথমিক স্তরে ৭৫০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা করা হয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ৯০০ থেকে বাড়িয়ে ৯৫০ টাকা করা হয়েছে।
এ ছাড়া প্রতিবন্ধীদের জন্য বিনামূল্যে সহায়ক উপকরণ বিতরণ, অবৈতনিক স্পেশাল স্কুল ফর চিলড্রেন উইথ অটিজম পরিচালনা, অটিজম রিসার্চ সেন্টার পরিচালনা, কর্মজীবী প্রতিবন্ধী পুরুষ ও নারী হোস্টেল পরিচালনা, পিতৃ-মাতৃহীন প্রতিবন্ধী শিশুনিবাস পরিচালনাসহ নানা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
যেভাবে আজীবন পেনশন পাবেন
এ সুবিধার আওতায় থাকবে প্রায় ২ লাখ শিক্ষার্থী। এ ছাড়া উপবৃত্তির আওতায় রয়েছে প্রায় ১৮ লাখ শিক্ষার্থী। এতদিন স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা এই সুবিধার আওতায় না থাকলেও চলতি অর্থবছরে তাদেরও এই কর্মসূচির আওতায় আনা হবে।
তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর ভাতাভোগীর সংখ্যা ৪ হাজার ৮১৫ জন থেকে ৬ হাজার ৮৮০ জনে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিশেষ ভাতাভোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৬০০ থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৫ হাজার ৬২০ জনে। অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভাতাভোগীর সংখ্যা ৭০ হাজার থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৮২ হাজার। বিশেষ ভাতাভোগীর সংখ্যা ৪৫ হাজার থেকে ৫৫ হাজার করা হয়েছে।
এ ছাড়া অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর মধ্যে উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়িয়ে ২৭ হাজার করা হয়েছে। মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির উপকারভোগীর সংখ্যা ১২ লাখ থেকে বাড়িয়ে ১৩ লাখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কার্যক্রমে উপকারভোগীর ভাতার হার দৈনিক ২০০ টাকার পরিবর্তে ৪০০ টাকায় বৃদ্ধি করা হয়। এ ছাড়া অন্তঃসত্বা মা ও শিশুদের সুরক্ষায় ভাতা দেওয়া হবে প্রায় ১৩ লাখের বেশি জনকে।
সামাজিক কার্যক্রমের আওতায় অটিজম ও নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য ও জীবন ঝুঁকি হ্রাসকল্পে নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্টের আওতায় বঙ্গবন্ধু প্রতিবন্ধী সুরক্ষা বীমা চালু করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে থেরাপিউটিক সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে দেশের ৬৪টি জেলা ও ৩৯টি উপজেলায় মোট ১৩০টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র পরিচালনা করা হচ্ছে। নতুন করে ২১১টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র চালুর অপেক্ষায়।
নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য ১৫ টাকা কেজি দরে, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও জেলা শহরে ৩০ টাকা কেজি দরে ওএমএসের চাল বিক্রয় করা হয়।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এককালীন মাসিক ভাতার পাশাপাশি তাদের জন্য নানা কর্মসূচি পালন করছে সরকার। এ ছাড়া তাদের জন্য ৩০ হাজার বীরনিবাস নির্মাণও শেষ পর্যায়ে। ইতোমধ্যে ৫ হাজার নিবাস হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর পর কবর/সমাধি একই ডিজাইনে নির্মাণের কাজও চলমান রয়েছে। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্থানগুলো সংরক্ষণ ও স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ৬৪ জেলার ২৯৩টি, উপজেলার ৩৬০টি স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ/জাদুঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ২৭১টির নির্মাণকাজও শেষ হয়েছে। এ ছাড়া মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী ভারতীয় মিত্রবাহিনীর ১ হাজার ৬৬১ জন সদস্যর স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্পের কাজও শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৩/০৬/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.